বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনাকালে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী পূর্বনির্ধারিত সাতটি লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। দেশের অন্যান্য আর্থিক অনেক প্রতিষ্ঠান ওই সময়ে বন্ধ থাকলেও সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিতই ২৪ ঘণ্টা চালু ছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ অর্থবছরে (২০২০-২০২১) সাতটি পূর্বনির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ অর্জন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলো- সংরক্ষণ ড্রেজিং, কার্গো হ্যান্ডলিং, কনটেইনার হ্যান্ডলিং, ৩০ হাজার বর্গমিটার নতুন কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ, সার্ভিস জেটি নির্মাণ, পতেঙ্গা কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ ও মাতারবাড়ী বন্দর উন্নয়ন প্রকল্প।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক আমাদের সময়কে বলেন, সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে বন্দরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি অনুযায়ী সব সূচকের শতভাগ কাজ হয়েছে। কারণ করোনাকালেও বন্দরের কার্যক্রম এক মিনিটের জন্য বন্ধ ছিল না। স্বাভাবিকভাবে চালু ছিল কনটেইনার হ্যান্ডেলিং। এ ছাড়া করোনার মধ্যে ইয়ার্ড সম্প্রসারণ হওয়ায় অনেক কনটেইনার আমরা রাখতে পেরেছি। ফলে কনটেইনার জট হয়নি। তিনি বলেন, করোনায় আমাদের কর্মীদের জন্য আমরা বন্দর হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু করেছি। ফলে কর্মীরা আশ্বস্ত ছিল করোনা আক্রান্ত হলেও তারা চিকিৎসা পাবে। করোনায় আমাদের অনেক কর্মীকে আমরা হারিয়েছি। এরপরও আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সচল ছিল। করোনা অতিমারীর কারণে বিশ^ব্যাপী বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে গত বছরের এপ্রিল থেকে। গত বছরের মার্চে শুরু হওয়া প্রথম ধাপের লকডাউনের কারণে চট্টগ্রাম
বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ নিম্নমুখী হয়। জুন-জুলাই থেকে শিল্প-কারখানা আবার পুরোদমে চালু হলে বাড়তে থাকে আমদানি-রপ্তানি। দেশের সরবরাহ ব্যবস্থা চালু রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে (২০২০-২০২১) চট্টগ্রাম বন্দর কনটেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের তিনটি সূচকেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে।
এই সময়ে ২৮ লাখ টুয়েনটি ইক্যুইভেলেন্ট ইউনিটস (টিইইউএস) কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের বিপরীতে হ্যান্ডলিং করেছে ৩০ লাখ ৯৭ হাজার টিইইউএস কনটেইনার। অন্যদিকে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের ৯ কোটি টন লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে হ্যান্ডলিং করেছে ১১ কোটি ৩৭ লাখ টন কার্গো। জাহাজ হ্যান্ডলিং লক্ষ্যমাত্রা বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তিতে না থাকলেও এক্ষেত্রে গত অর্থবছরের পরিসংখ্যানকে টপকে ৪ হাজার ৬২টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করেছে চট্টগ্রাম বন্দর। গত অর্থবছরে এ সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৭৬৪টি। ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে মাতারবাড়ী সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। গত অর্থবছরের ১০ জুনের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও একই অর্থবছরের ২৩ সেপ্টেম্বর পরামর্শক নিয়োগের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অর্থাৎ নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস আগেই চুক্তি স্বাক্ষর সম্পাদন করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পতেঙ্গায় নির্মাণ করা হচ্ছে কনটেইনার টার্মিনাল। বন্দরের নিজস্ব তহবিলের প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনটি কনটেইনার ও একটি তেল খালাসের জেটি তৈরি হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়। করোনা অতিমারীর কারণে নির্মাণ কাজে ব্যাঘাত ঘটলেও ওই সময়ে প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর আগের দুই অর্থবছরে ১৫ ও ২৮ শতাংশসহ সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে প্রকল্পের মোট ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
এদিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিজস্ব জাহাজগুলো বার্থিংয়ের জন্য বন্দরের ১নং জেটির উজানে ২২০ মিটার দীর্ঘ সার্ভিস জেটির নির্মাণকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করেছে কর্তৃপক্ষ। গত অর্থবছরে এই প্রকল্পের অবশিষ্ট ৩৭ শতাংশ কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল। নির্ধারিত কাজের পুরোটাই বাস্তবায়ন হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে বন্দরের নিজস্ব নৌযান যেমন- টাগবোট, স্পিড বোট, বার্জ, ড্রেজার, পাইলট বোট ও অ্যাম্বুলেন্স বোট বার্থিংয়ের জন্য কোনো নির্ধারিত জেটি ছিল না।
বর্তমানে ২২০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ মিটার প্রস্থের জেটি, ১৯ মিটার দৈর্ঘ্যরে কানেক্টিং ব্রিজ, তিন তলা অফিস ভবন, ১ হাজার বর্গমিটার শেড, ২ হাজার ঘনমিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ভূগর্ভস্থ পানির ট্যাংকসহ প্রয়োজনীয় সুবিধাদি নিশ্চিত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্ণফুলী নদীর পাড়ে গড়ে ওঠায় জেটিতে জাহাজ আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে কর্ণফুলী চ্যানেল ও বহির্নোঙরের ২০ কিলোমিটার এলাকা ড্রেজিংয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। অর্থবছর শেষে ২২ কিলোমিটার ড্রেজিং করা হয়েছে।
ক্রমবর্ধমান হারে আমদানি-রপ্তানি বৃদ্ধির সঙ্গে পণ্য ও কনটেইনার সংরক্ষণে চট্টগ্রাম বন্দরকে সম্প্রসারণ করতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। চাহিদার সঙ্গে তাল রেখে ইয়ার্ড সম্প্রসারণ করছে বন্দর। সদ্যবিদায়ী অর্থবছরে ৩০ হাজার বর্গমিটার নতুন ইয়ার্ড সম্প্রসারণ করা হয়েছে।