বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ওপরে সড়কপথ, নিচে রেলপথ। এভাবেই গড়ে উঠেছে পদ্মা সেতু। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর জুনে এই সেতু উদ্বোধনের দিনই সড়কপথে যান আর রেলপথে ট্রেন চলতে শুরু করবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, জুনের মধ্যেই সেতুতে রেললাইন সংযোগের কাজ শেষ করা যাবে। তবে জুনে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করা নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তাও। কারণ, পদ্মা সেতুতে বর্তমানে রেললাইন স্থাপনের কাজ করতে পারছে না মন্ত্রণালয়। আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শুরু করতে না পারলে পিছিয়ে যাবে রেল চলাচলের তারিখও। গতকাল পদ্মা সেতু প্রকল্প ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশের কাজ ৬৯ শতাংশ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকা-মাওয়া অংশে ৪০ দশমিক ৫০ শতাংশ ও ভাঙ্গা থেকে যশোর সেকশনে রেল সংযোগের কাজ ৩২ শতাংশ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্পের মোট অগ্রগতি ৪৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন গতকাল সেতু প্রকল্পটি দেখার সময় উপস্থিত ছিলেন রেল সচিব সেলিম রেজা, রেলওয়ে মহাপরিচালক ধীরেন্দ্রনাথ মজুমদার, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন প্রমুখ।
রেলমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে একসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও ট্রেন চলাচল শুরু করার চেষ্টা চলছে। কিন্তু আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সেতু কর্তৃপক্ষ রেল মন্ত্রণালয়কে কাজের জন্য সুযোগ না দিলে এ কাজ যথাসময়ে অর্থাৎ আগামী জুনের মধ্যে শেষ হবে না। এতে করে জুনে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মন্ত্রী বলেন, আমরা সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করার চেষ্টা করছি। যদি কোনো কারণে আগামী জুন মাসে পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু করা সম্ভব না হয়, তাহলে আগামী বছরের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা রেলপথ চালু করার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, সড়ক বিভাগের কাজে প্রাধান্য থাকায় পদ্মা সেতুতে ইউটিলিটি সার্ভিস তথা বিদ্যুৎ, গ্যাস লাইন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ করার পরই রেললাইনের নির্মাণের কাজ শুরু করতে হবে। সড়ক বিভাগের এনওসি পাওয়ার পরই রেললাইন নির্মাণের কাজ শুরু করা যাবে।
জানা গেছে, পদ্মা সেতুর রেললাইন বসাতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে। সেতু কর্তৃপক্ষ এখন সেখানে গ্যাস পাইপ লাইনের কাজ করছে। এসব কাজ শেষ করে আগামী বছরের মার্চ মাসে সেতুতে রেললাইন বসানোর জন্য রেল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে। সূত্র জানায়, কম সময়ে ইউটিলিটি সার্ভিসের কাজ শেষ করতে বর্তমানে সড়ক বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা চলছে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের। তথ্যমতে, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় রয়েছে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। তবে সরকারের লক্ষ্য ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা। ২০১৮ সালের ২৭ এপ্রিল ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরের পর একই বছরের ৩ জুলাই নির্মাণকাজ শুরু হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ২০১৬ সালের ২৭ এপ্রিল প্রকল্পটি অগ্রাধিকার প্রকল্পে তালিকাভুক্ত হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে ঢাকা হতে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণের মাধ্যমে যোগাযোগের উন্নয়ন হবে। ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পের গ্রাউন্ডব্রেকিং করেন।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। গতকাল পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তে রেল ভায়াডাক্টের রেললাইনে গ্যাং কারে উঠে রেলপথ স্থাপন কাজের অগ্রগতি পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রীসহ অন্যরা। মন্ত্রী দুপুরে জাজিরা পয়েন্টে এসে ব্যালাস্টলেস রেললাইন স্থাপনের কাজ উদ্বোধন করেন। পরে মন্ত্রী রেলসংযোগ প্রকল্পের ভাঙ্গা রেলওয়ে জংশন পরিদর্শন করেন। তিনি নির্মাণকাজের সন্তোষ প্রকাশ করে দ্রুত প্রকল্প কাজ শেষ করার তাগিদ দেন। গতকাল মাওয়া-জাজিরা পয়েন্ট সরেজমিনে দেখা গেছে, দুই পাশে রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। মাওয়া প্রান্তে সংযোগ রেললাইনের কাজ শেষের দিকে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই এর নির্মাণকাজ শেষ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। আর জাজিরা প্রান্তে শুরু হয়েছে রেললাইন স্থাপনের কাজ। চলছে মাওয়া-জাজিরা-শিবচর স্টেশন নির্মাণ কাজও। ১৪টি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হবে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত এই রেল প্রকল্পে। প্রকল্প সূত্র জানায়, পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্পে মেইন লাইন রয়েছে ১৬৯ কিলোমিটার, লুপ ও সাইডিং ৪৩ দশমিক ২২ কিলোমিটার, ডাবল লাইন তিন কিলোমিটারসহ ২১৫ দশমিক ২২ কিলোমিটার রেলওয়ে ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে ২৩ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট, ১ দশমিক ৯৮ কিলোমিটার র্যাম্পস, ৬৬টি মেজর ব্রিজ, ২৪৪টি মাইনর ব্রিজ, একটি হাইওয়ে ওভারপাস ও ২৯টি লেভেল ক্রসিং নির্মাণ করা হবে।