বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এলডিসি উত্তরণ হওয়ার পর জিএসপি স্কিমের আওতায় ১২ বছর পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পণ্য রপ্তানি করার সুযোগ চাওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে এই উত্তরণ প্রক্রিয়া টেকসই করার জন্য ২০২৬ সালের পরবর্তী তিন বছর পর্যন্ত এলডিসি সুবিধা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যুক্তরাজ্য জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়ায় বাংলাদেশের জন্য এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা আরও সহজ হবে। কেটে যাচ্ছে বাধাসমূহ। নতুন জিএসপি স্কিমের ওপর বাংলাদেশের পজিশন পেপার আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে যুক্তরাজ্যে পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সব ধরনের চ্যালেঞ্জ এবং বাধাসমূহ দূর করে এলডিসি থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় যেতে চায় বাংলাদেশ। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে এলডিসি উত্তরণে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির অধীনে আবার আরও কয়েকটি উপকমিটি রয়েছে। আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এলডিসি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এছাড়া বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের নেতৃত্বে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কম্ক্তু বাজার সুবিধা নিশ্চিত করতে কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত এলডিসি ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে অস্ত্র বাদে অন্য সকল পণ্য রপ্তানিতে যুক্তরাজ্যের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। তবে ব্রেক্সিট পরবর্তী নিজস্ব জিএসপি স্কিম প্রণয়ণের কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। ইতোমধ্যে নতুন জিএসপি স্কিমের ওপর প্রশ্নমালা পাঠিয়ে আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের কাছে পজিশন পেপার চেয়েছে যুক্তরাজ্য। মঙ্গলবার এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে স্টেকহোল্ডার সভা করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে এলডিসি উত্তরণের পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ন্যায় যুক্তরাজ্যেও ১২ বছর পর্যন্ত জিএসপি সুবিধা চাওয়া হবে। এছাড়া যুক্তরাজ্য সরকার এ ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব জানিয়েছে বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্র। বিশেষ করে বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশকে এই সুবিধা দেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডবিøউটিও সেলের মহাপরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশ নির্ধারিত সময় অর্থাৎ আগামী ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে অবস্থানপত্র পাঠাবে। ইতোমধ্যে তাদের প্রশ্নমালার আলোকে অবস্থানপত্র তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এলডিসি উত্তরণের পর ১২ বছর পর্যন্ত পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হবে। আশা করা হচ্ছে যুক্তরাজ্য ১২ বছর পর্যন্ত শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা নিশ্চিত করবে।
জানা গেছে, ব্রেক্সিট পরবর্তী নিজস্ব জিএসপি স্কিম প্রণয়ণের কাজ শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। তবে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার লঙ্ঘন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা ও অর্থপাচার বিষয়ে আন্তর্জাতিক কনভেনশন প্রতিপালনের ব্যর্থতা এবং জাতিসংঘের সিঙ্গেল কনভেনশন অন নারকোটিক ড্রাগস- এর লঙ্ঘন ও অবৈধ পণ্য বাণিজ্য প্রতিরোধে ব্যর্থতাসহ বিভিন্ন কারণে এই সুবিধা বাতিল বা স্থগিত করার বিধান রাখতে যাচ্ছে দেশটি। এসব শর্ত সঠিকভাবে মেনে চলা স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য কঠিন বলে মনে করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাই শর্তগুলো শিথিল করতে দেশটিকে অনুরোধ জানানো হবে।
উল্লেখ্য, শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০১৩ সালের জুন থেকে বাংলাদেশের জিএসপি সুবিধা স্থগিত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। জিএসপি সুবিধা অব্যাহত রাখতে শ্রমিক অধিকারের পাশাপাশি মানবাধিকার সুরক্ষাসহ ৯ দফা এ্যাকশন প্ল্যান দিয়ে তা বাস্তবায়নের রোডম্যাপ চেয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম রফতানি বাজার। গত অর্থবছর দেশটিতে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৭০ কোটি ডলার, যা দেশের মোট রফতানির ৯.৬৮ শতাংশ। এর মধ্যে ওভেন পোশাক রফতানিতে আয় হয়েছে ১৩৩ কোটি ডলার, নিটওয়্যার ২১১ কোটি ডলার ও হোম টেক্সটাইল রফতানিতে আয় হয়েছে ৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এছাড়া ওই সময়ে মাত্র ৩৭৭ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে।
জানা গেছে, প্রোডাক্ট গ্র্যাজুয়েশন বিষয়ে ইউকে জিএসপি স্কিমের পাবলিক ডকুমেন্টে বলা হয়েছে, টেক্সটাইল ও এ্যাপারেলসহ পোশাক পণ্যে গ্র্যাজুয়েশন বিধিমালা তখনই আরোপিত হবে যখন আমদানি অনুপাত ৪৭.২ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে। অন্যান্য পণ্যের ক্ষেত্রে এই সীমা ৫৭ শতাংশ। অন্যদিকে, জীবন্ত গাছের চারা, ঔষধি পণ্য, সবজি পণ্য এবং প্রাণীজ ও উদ্ভিজ্জজাত তেল, চর্বি, মোম এবং খনিজ পণ্যে আমদানির অনুপাত ১৭.৫ শতাংশ ছাড়ালে গ্র্যাজুয়েশন সীমা আরোপিত হবে। প্রতি তিন বছর অন্তর গ্র্যাজুয়েশন করা পণ্য তালিকা পর্যালোচনা করবে ব্রিটিশ সরকার। তবে বর্ধিত ফ্রেমওয়ার্কের আওতায় জিএসপি সুবিধা পেতে হলে ২৭টি আন্তর্জাতিক কনভেনশন মেনে চলতে হবে।
এ প্রসঙ্গে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্রেক্সিট পরবর্তী যুক্তরাজ্য দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তিকে প্রাধান্য দেবে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করবে। তাতে ইউনিলেটারাল স্কিমের গুরুত্ব কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, বিদ্যমান জিএসপি সুবিধা যাতে বাতিল না হয় সেদিকে বাংলাদেশকে গুরুত্ব দিতে হবে।