বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ৫০ থানা এলাকায় বসবে ১৬ হাজারের বেশি সিসি ক্যামেরা সার্বক্ষণিক ভিডিও মনিটরিং হবে । অপরাধ করে পুলিশের হাত থেকে বাঁচা যাবে না । প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৩ হাজার কোটি টাকা । গোটা রাজধানী সার্বক্ষণিক নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আনার জন্য এবার বসানো হবে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা)। সিসি ক্যামেরার আওতায় সার্বক্ষণিক ভিডিও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের বাসভবন এলাকা। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে যাবে আসামির ছবিসহ ভিডিও। অপরাধ দমন ছাড়াও ক্যামেরা নজরদারিতে বদলে যাবে বিদ্যমান এ্যানালগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও।
প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এই প্রকল্পের নাম ‘ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের উন্নয়ন’ বা ‘ডেভেলপমেন্ট অব ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম অব ঢাকা প্রকল্প’। প্রকল্পের আওতায় রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় বসানো হবে ১৬ শতাধিক সিসি ক্যামেরা। এর মধ্যে ১৫ হাজার সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ করবে পুলিশ। গোটা রাজধানী সিসি ক্যামেরার আওতায় এসে গেলে অপরাধ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা খুবই সহজ ও কার্যকর হবে। এমনকি গভীর রাতে নির্জনস্থানে অপরাধ সংঘটিত হলেও সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে অপরাধের রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধীকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সহজ হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, উন্নত দেশের আদলে আধুনিক উন্নত প্রযুক্তিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে গোটা রাজধানী ঢাকা। ঢাকার ৫০ থানা এলাকা জুড়ে বসানো হচ্ছে উন্নত প্রযুক্তির অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ সম্পন্ন হলে নজরদারির আওতায় চলে আসবে রাজধানী ঢাকা। এতে অপরাধ সংঘটিত করে দ্রæত পালিয়ে গিয়ে পুলিশের হাত থেকে বেঁচে যাওয়ার দিন শেষ হয়ে যাবে। সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়ে যাবে আসামির ছবিসহ ভিডিও। অপরাধ দমন ছাড়াও ক্যামেরা নজরদারিতে বদলে যাবে বিদ্যমান এ্যানালগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাও। এছাড়া সার্বক্ষণিক ভিডিও মনিটরিংয়ের আওতায় থাকবে সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানের বাসভবন এলাকা।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ঢাকা শহরের অলিগলিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এই প্রকল্পের নাম ‘ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের উন্নয়ন’ বা ‘ডেভেলপমেন্ট অব ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম অব ঢাকা প্রকল্প’। প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা জরিপসহ আনুষঙ্গিক বেশকিছু কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সিসি ক্যামেরার প্রকল্পের শুরুতে প্রস্তাবিত ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে কয়েক দফা কাটছাঁট করে বর্তমানে সংশোধিত ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এখনও প্রকল্পের কাজ আটকে আছে অর্থ বরাদ্দের জটিলতায়। মন্ত্রণালয় থেকে ক্রেডিট সাপ্লাই পদ্ধতিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরামর্শ দেয়া হলেও তাতে রাজি নয় পুলিশ সদর দফতর। প্রকল্পটি খুব শীঘ্রই একনেকে যাবে। একনেকে পাস হলে পরিচালক নিয়োগসহ আনুষঙ্গিক কাজ শেষে ক্যামেরা স্থাপনের কাজটিও শুরু হবে। প্রকল্পের আওতায় গোটা রাজধানীকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনতে ঢাকা শহরে ১৬ হাজারেরও বেশি ক্যামেরা বসানো হবে। এর মধ্যে ১৫ হাজার ক্যামেরা শুধু অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত কাজে ব্যবহার করবে পুলিশ। বাকি এক হাজারের মতো ক্যামেরা ব্যবহৃত হবে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার কাজে। উন্নত প্রযুক্তির ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় এ্যালার্ম সিস্টেম, ফেস ডিটেকশন (চেহারা চিহ্নিতকরণ), গাড়ির নম্বর প্লেট চিহ্নিতকরণ প্রযুক্তি বা এএনপিআরসহ অন্তত ১১ ধরনের সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে।
প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সিসি ক্যামেরা প্রকল্পের একটি বিশেষ দিক হচ্ছে ডিজিটাল টহল নিশ্চিত করা। এমনকি গভীর রাতেও নির্জন রাস্তা থাকবে পুলিশের নজরদারিতে। ক্যামেরায় চেহারা শনাক্তের প্রযুক্তি থাকায় অপরাধ সংঘটিত করে অপরাধীরা পার পেয়ে যেতে পারবে না। অপরাধী এবং পলাতক আসামিদের খুব সহজেই গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে পুলিশ। এমনকি চুরি এবং ছিনতাইয়ের মতো অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না। এছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় শব্দ চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থা। রাজধানীর কোথাও কোন শব্দ হলে তাৎক্ষণিকভাবে কন্ট্রোলরুমে শব্দের বিস্তারিত তথ্যের সিগন্যাল চলে যাবে। ফলে পুলিশের ভাষায় ‘শূটিং ইনসিডেন্ট’ বা গোলাগুলির ঘটনা ঘটলে দ্রুততম সময়ে তথ্য পাবে পুলিশ। এমনকি কতদূরে গুলি হয়েছে এবং কী ধরনের অস্ত্রের গুলি, তাও চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। ক্যামেরায় থাকবে স্বয়ংক্রিয় এ্যালার্ম সিস্টেম। সন্দেহভাজন ব্যক্তি বা বস্তু ক্যামেরায় ধরা পড়ামাত্র সঙ্কেত বেজে উঠবে। আর সঙ্গে সঙ্গেই কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বরত অপেক্ষমাণ পুলিশ দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে যাবে।
পুলিশ সদর দফতরের ক্যামেরা প্রকল্পের সার্বিক বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে সারাদেশের নাগরিকদের জন্য ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে সমস্যা সমাধান ও উপকারে আসছে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস বা ট্রিপল নাইন (৯৯৯)। বিপদগ্রস্ত মানুষজনের উদ্ধারে এই ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস বা ট্রিপল নাইন (৯৯৯)’র কথা আগে কোনদিন কল্পনাও করা যেত না। এটা নাগরিকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় ও নাগরিকবান্ধব হয়ে উঠেছে। সিসি ক্যামেরা প্রকল্পেও ট্রিপল নাইন যুক্ত হবে। আর সিসি ক্যামেরা প্রকল্প ট্রিপল নাইনের সঙ্গে যুক্ত হলে সেবার মান আরও বাড়বে। কোন স্থানে আক্রান্ত বা বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি কোনমতে ফোন তুলে একটি চিৎকার বা ‘হেল্প’ শব্দ উচ্চারণ করতে পারলেই যথেষ্ট। সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যাবে পুলিশ। বর্তমানে ট্রিপল নাইনে ফোন করে অভিযোগকারীকে তার নাম-ঠিকানাসহ অবস্থানের বিস্তারিত বর্ণনা দিতে হয়। সিসি ক্যামেরা প্রকল্প বাস্তবায়নের পর অভিযোগকারীর নাম, ঠিকানা, অবস্থানের বিস্তারিত বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন হবে না। এটা কাজ করবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করার জন্য বিশেষ কৌশলের ব্যবস্থা থাকবে, যাতে নিজস্ব ভৌগোলিক লোকেশন ব্যবস্থা বা পিজিআইএস ব্যবহার করবে পুলিশ।
ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ঢাকায় সিসি ক্যামেরা বসানো হলে সিসি ক্যামেরা মনিটরিংয়ের মাধ্যমে বেশকিছু পুলিশিং সুবিধা মিলবে। যেমন : রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্পর্শকাতর স্থান, সুউচ্চ ভবন, মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল, ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে থাকবে সার্বক্ষণিক নজরদারিতে। এছাড়া ইংরেজী নববর্ষ, পহেলা বৈশাখ, পূজা ও শিয়া সম্প্রদায়ের তাজিয়া মিছিলে উচ্চমাত্রায় নিñিদ্র নিরাপত্তা দিতে পারবে পুলিশ। কোন অঘটন ঘটলে অপরাধী শনাক্ত করা আরও সহজ হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনগুলোর জঙ্গী তৎপরতাও সিসি ক্যামেরার আওতায় চলে আসবে। ফলে বড় ধরনের নাশকতা ও জঙ্গী হামলার বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। রাজধানী ‘ঢাকার ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেমের উন্নয়ন’ বা ‘ডেভেলপমেন্ট অব ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম অব ঢাকা প্রকল্প’-একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প, এটাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বাস্তবায়ন করতে হবে।
পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সিসি ক্যামেরা প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত রাজধানী ঢাকা চলছে এখন এ্যানালগ পদ্ধতিতে। পুলিশ এ্যানালগ পদ্ধতিতে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছে। এমনিতেই সিগন্যাল বাতিগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে না। যানবাহন হাত দিয়ে থামানো, চালানোর সিগন্যাল দিচ্ছে পুলিশ। ট্রাফিক সার্জেন্টদের মাধ্যমে মামলা করা হলেও আইন লঙ্ঘনের প্রবণতা কমছে না। এছাড়া প্রভাবশালীদের তদ্বিরের কারণে অনেক সময় ট্রাফিক সার্জেন্টদের আইন প্রয়োগ থেকে পিছু হটতে হয়। এছাড়া এক শ্রেণীর পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ একেবারে কম নয়। সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক ব্যবস্থায় এসব প্রতিবন্ধকতা থাকবে না, সমস্যার নিরসন হবে। কারণ সবকিছুই একটি কেন্দ্রীয় সফটওয়্যারের মাধ্যমে চলবে। সিসি ক্যামেরায় আইন লঙ্ঘন ধরা পড়লে মামলা হবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে। মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্টদের কাছে মামলা সংক্রান্ত বার্তাও চলে যাবে। কারণ প্রকল্পের সঙ্গে বিআরটিএ, মোবাইল ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্র এবং প্রাইভেটকার কলিং সিস্টেমসহ বেশ কয়েকটি তথ্যভাÐার সংযুক্ত থাকবে। সুতরাং আইন লঙ্ঘন করে ফাঁকি দেয়ার দিন শেষ হয়ে যাবে, শাস্তি পাওয়াটা নিশ্চিত হবে, ট্রাফিক সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রাজধানী ঢাকা এখন মেগাসিটি। দুই কোটি জন অধ্যুষিত রাজধানী ঢাকার ৫০ থানা এলাকায় ২৬,৬৬১ জন পুলিশ কর্মরত থেকে জরগণের জানমালের নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছে। ঢাকায় বসবাসরতদের জানমালের নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশকে। রাজধানীতে বিদেশীসহ দেশী ভিআইপিগণের চলাফেরা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্পর্শকাতর স্থানে পাহারা, ট্রাফিক ব্যবস্থাসহ সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের জনবল যথেষ্ট নয়। শহরের অলিগলিতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণের প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভবপর হলে কার্যত : রাজধানী ঢাকা প্রায় অপরাধ শূন্য হয়ে পড়বে। এতে জনগণ সরাসরি উপকৃত হবেন।