মেহেদী হাসান আকন্দ: তিন বছর আগেই সরকারের অনুমোদন পেলেও এতদিন থমকে ছিল সিরাজগঞ্জের শহীদ মনসুর আলী স্টেশন থেকে বগুড়া পর্যন্ত বহুল প্রত্যাশিত রেলপথ নির্মাণের কাজ। অবশেষে আজ সোমবার পরামর্শক নিয়োগে ৭২ কোটি টাকার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাস্বামী ও বালাদেশ রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী নুরুল ইষলাম সুজন, সচিব সেলিম রেজাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।
উত্তরবঙ্গের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশিত ৮৬ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ এই রেলপথ নির্মাণ হলে ঢাকা থেকে বগুড়ার দূরত্ব কমে আসবে কমপক্ষে ১১২ কিলোমিটার। রংপুর বিভাগের জেলাগুলোরও রেলপথে দূরত্ব কমবে রাজধানীর সঙ্গে।
পরামর্শক নিয়োগ করতে না পারায় এতদিন প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা, চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ন এবং দরপত্রের দলিলাদি তৈরির কাজই শুরু করা যায়নি। এবার ভারতীয় প্রতিষ্ঠান রাইটস ইন্ডিয়া লিমিটেড এবং আরভি ইন্ডিয়া যৌথভাবে পরামর্শকের কাজ করবে বলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
চুক্তি অনুযায়ী, আগামী ছয় মাসে প্রকল্পের বিস্তারিত সমীক্ষা করবে ভারতীয় এই দুই প্রতিষ্ঠান। পরের সাত মাসে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন করবে। এরপর শুরু হবে দরপত্র আহ্বান প্রক্রিয়া। প্রকল্প সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন, দেড় থেকে দুই বছর লাগে এসব প্রক্রিয়া শেষে কাজ শুরু করতে। এক্ষেত্রে ২০২৩ সালের শেষ দিকে গিয়ে প্রকল্পটির অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হতে পারে। যদিও বর্তমান অনুমোদন অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১ জুলাইয়ে শুরু হয়ে ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু বাস্তব অবস্থা, কাজই শুরু হচ্ছে ২০২৩ সালে।
রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, সিরাজগঞ্জ-বগুড়া রেলপথ নিয়ে আর অনিশ্চয়তা নেই। পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজনীয় কাজ শেষ করার পর ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হবে।
পাঁচ হাজার ৫৮০ কোটি টাকায় সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়া পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে ঢাকা থেকে রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে ট্রেন যায় পাবনার ঈশ্বরদী ঘুরে বগুড়ার সান্তাহার হয়ে। এ কারণে শত কিলোমিটার বাড়তি পথ পাড়ি দিতে হয় উত্তরের যাত্রীদের। রেলের হিসাব অনুযায়ী, ঢাকা-বগুড়ার বর্তমান দূরত্ব ৩২৪ কিলোমিটার। নতুন রেলপথ নির্মাণ হলে এ দূরত্ব কমে হবে ২১২ কিলোমিটার। ১১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমায় আশা করা হচ্ছে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় সাশ্রয় হবে।
ঢাকা থেকে সরাসরি বগুড়ার রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ বহুদিনের। ২০০৫ সালে এই রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে তখন প্রাক সমীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু অর্থায়ন জোগাড় না হওয়ায় প্রকল্পটি এগোয়নি। এক যুগ পর ২০১৭ সালে ভারতের তৃতীয় লাইন অব ক্রেডিটের (এলওসি) ঋণে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এ প্রকল্পে তিন হাজার ১৪৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে ভারত। বাকি দুই হাজার ৪৩৩ কোটি টাকা জোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার।
প্রকল্পটির অধীনে সিরাজগঞ্জ থেকে বগুড়ার রেললাইল পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার মূল রেলপথ নির্মাণ করা হবে। কাহালু থেকে রাণীরহাট পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথসহ মোট ৮৪ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেললাইন তৈরি করা হবে। এছাড়া আড়াই কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হবে বগুড়া শহর থেকে মূল রেললাইল পর্যন্ত। এতে মোট ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে।