বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : শুধু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি নয়, এবার বাস্তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে সৌদি আরব। মধ্যপ্রাচ্যের সম্পদশালী এই দেশটি বাংলাদেশে বিদ্যুৎ, পরিবহন, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বেশকয়েকটি খাতে বিনিয়োগ করবে। মুসলিম জাহানের কেন্দ্রবিন্দু খ্যাত সউদী আরবের বিনিয়োগ বাংলাদেশে বেড়ে গেলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ অন্যান্য সম্পদশালী দেশগুলোর বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ আগের চেয়ে বেড়ে যাবে। বাংলাদেশে নানা খাতে সৌদি বিনিয়োগের আলোচনা দীর্ঘদিন থেকে শোনা গেলেও তেল সমৃদ্ধ ওই দেশটির বাংলাদেশে বিনিয়োগের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন সালমান এফ রহমান। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক এই উপদেষ্টা দেশের মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে যোগ্য লোকদের বসানো হলে সফলতা ধরা দেবেই।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ইসসা ইউসেফ ইসসা আল দুহাআলান বলেছেন, সউদী আরব আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করে, বাংলাদেশ বন্ধুপ্রতীম দেশ। সেজন্য সউদী আরব বাংলাদেশের বিভিন্ন সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীলখাতে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন ঘটাতে আগ্রহী।
জানতে চাইলে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সাধারণ সম্পাদক এস এম রাশিদুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সউদী আরবের বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে। অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান দেশটিতে সফরের মাধ্যমে এর সফল পরিসমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। সালমান রহমানকে সউদী বিনিয়োগ আনার ক্রেডিট দিতেই হবে। সৌদি বিনিয়োগ শুরু হলে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলো বাংলাদেশে উৎসাহী হবে।
বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম দেশ সৌদি আরব। দুই দেশের বন্ধুত্বও দীর্ঘ দিনের। এর ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সময়ে মিলেছে বড় বড় বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি। সম্প্রতি বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশন (বিজেএমসি)’র বন্ধ মিলগুলো চালু করে পাটপণ্য উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে সউদী আরব। এর আগে পুঁজিবাজার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, টেলিকমিউনিকেশন, তথ্যপ্রযুক্তি, বিমান মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ কেন্দ্র, সিমেন্ট শিল্প, পেট্রোকেমিক্যাল, ওষুধ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাত, হালকা প্রকৌশল শিল্প, পানি ও সমুদ্র সম্পদসহ অন্যান্য ভৌত অবকাঠামোগত প্রকল্প; এছাড়া সেবামূলক খাত যেমন: ব্যাংক, অর্থনীতি ও লজিস্টিকস এবং মানবসম্পদ খাতেও বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এমনকি ২০১৯ সালের মার্চে সৌদি আরবের বাণিজ্য ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতের অবকাঠামো নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানিসহ বড় প্রকল্পে ৩৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করে। সৌদি সরকারের মন্ত্রিসভা ওই সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে শুল্ক চুক্তির খসড়াও অনুমোদন দেয়। এখানেই শেষ নয়; মহেশখালী অথবা পায়রায় ৩ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। সৌদি আরবের প্রতিষ্ঠান : অ্যাকোয়া পাওয়ার এ জন্য আড়াইশ’ কোটি ডলার বিনিয়োগ করারও ঘোষণা দেয়। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতি এখনো বাস্তবে রুপ পায়নি। আর তাই সম্প্রতি দেশে পূর্বের এসব বিনিয়োগ প্রতিশ্রুতি এবং নতুন করে আরও সউদী বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরির উদ্দেশ্যে আরব রাষ্ট্রটি সফর করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ ১৮ সদস্যের প্রতিদিধি দল।
দুই দেশের দীর্ঘদিনর বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করতে এবং বিনিয়োগে আকৃষ্ট করাই ছিল এই সফরের মূল লক্ষ্য। আর এই সফরের মাধ্যমে সৌদি আরবের প্রতিশ্রুতি বাস্তবের দিকে আগাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশে ফিরে এরই মধ্যে সালমান এফ রহমান সউদী আরব সফরকে সফল দাবি করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি বাংলাদেশে বিনিয়োগে খুবই আগ্রহী, বিশেষ করে সউদী বাণিজ্যমন্ত্রী ও বিনিয়োগমন্ত্রী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান বলে উল্লেখ করেছেন। সালমান এফ রহমান বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা জিটুজি (সরকার থেকে সরকার) এবং পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) চুক্তি সই করতে সউদী সরকার সম্মতি দিয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে গত শনিবার সালমান রহমান বলেন, ভার্চুয়ালি এটা সই করার প্রস্তাব দিয়েছি। আশা করি, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই চুক্তিটা আমাদের সই হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সৌদি সরকার এর মধ্যেই বাংলাদেশে বিপুল অর্থ বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে। সালমান এফ রহমানের এই সফরের মাধ্যমে এবার এর বাস্তবায়ন হবে। তাদের মতে, সৌদি বিনিয়োগ বাড়লে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোও বাংলাদেশে নতুন নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হবে।
জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনসাল জেনারেল অফিসের লেবার কাউন্সেলর মো. আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ২০ লাখেরও বেশি বাংলাদেশি কর্র্মী কঠোর পরিশ্রম করে সউদীর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশটিতে এখনও প্রচুর বাংলাদেশি কর্মীর চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, সউদীর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় অন্যান্য দেশ থেকে কর্মী না নিলেও বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত কর্মী নিয়োগ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের ক্ষেত্র তৈরি প্রসঙ্গে এই লেবার কাউন্সিলর বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। সউদী শিল্পপতি ও বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের হাত বাড়ালে উভয় দেশই উপকৃত হবে। জেদ্দা থেকে ফরেন ইনভেস্টর জামাল আহমদ বলেন, বিলম্বে হলেও বাংলাদেশে সউদী বিনিয়োগের উদ্যোগ নেয়ায় এবং তা বাস্তবায়ন সম্ভব হলে উভয় দেশের জাতীয় অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হবে। বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান হবে। তিনি বলেন, সউদী বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে সম্পৃক্তকরণে ঘন ঘন সফরের উদ্যোগ নিতে হবে।
আরব দেশটি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সউদী-বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি ও বাংলাদেশে বিনিয়োগের অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত সউদী আরবে সরকারি সফরের মাধ্যমে সউদী বাংলাদেশ সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। বাংলাদেশ সউদী বিনিয়োগকারীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল সহযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সৌদি সরকারের একটি প্রতিনিধিদল শিগগিরই বাংলাদেশ সফরে আসবে জানিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, তারা একটা দল নিয়ে খুব শিগগিরই আসবেন। আমাদের যে একটা জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটি আছে, সেটার একটা মিটিং হবে। সেই মিটিংয়েও আমরা আশাবাদী। এমনকি সৌদি বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, উনি অথবা বিনিয়োগমন্ত্রী ওনারা নিজে আসবেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের অবস্থানকালেই আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দেয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা।
সালমান এফ রহমান বলেন, সৌদি বাদশাহ সালমানের নেতৃত্বে যে মন্ত্রিপরিষদটা হয়েছিল গত মঙ্গলবার, সেখানে ওনারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমাদের সঙ্গে জিটুজি, পিপিপি অ্যাগ্রিমেন্ট যেটা করার কথা ছিল তারা সেটা সই করবে। খুব তাড়াতাড়ি চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে সালমান রহমান বলেন, ভার্চুয়ালি এটা সই করার প্রস্তাব দিয়েছি। আমি আশা করি, আগামী ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে এই চুক্তিটা আমাদের সই হয়ে যাবে।
সৌদি আরব সফরের সার্বিক মূল্যায়ন নিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ডেফিনিটলি সফল হয়েছে। আমরা অনেক খুশি। আরেকটা বিষয় আমাদের ডেলিগেশনকে ওনারা যেভাবে রিসিভ করেছেন, যে সম্মানটা আমাদের দিয়েছেন। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, সেটাকে তারা খুবই অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে। তারা আসলেই এখন মনে করে, বাংলাদেশের সঙ্গে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। এ বছরের ২৮ ও ২৯ নভেম্বর ঢাকায় একটি বিনিয়োগ সম্মেলন করা হবে বলেও জানান সালমান রহমান। তিনি বলেন, সেখানেও আমরা ওনাদের দাওয়াত দিয়েছি। তারা আমাদের কনফার্ম করেছেন, তারা সেই বিনিয়োগ কনফারেন্সে যোগদান করবেন।
বাংলাদেশের ১৩৮ পণ্যের সউদী আরবে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছেন বলেও জানান সালমান এফ রহমান। তিনি বলেন, একটা লিস্ট দিয়ে আমরা বলেছিলাম এতগুলো আইটেমে ডিউটি ফ্রি অ্যাকসেস দেয়ার জন্য। তারা বলেছে, সেটা বাইলেটারেলি না করে তাদের একটা জিসিসি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট আছে। জিসিসির মাধ্যমে আমাদের সঙ্গে একটা এফটিএ অথবা পিটিএ করার জন্য। তারা কাজ করতে চায়।
কোন কোন খাতে সৌদি আরব সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে, এ বিষয়ে বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, আমরা দুটো প্রজেক্টের বিষয়ে কথা বলেছি, যেটাতে আমরা রিকোয়েস্ট করেছিলাম, যেটাতে তারা বলেছেন- তারা ইন্টারেস্টেড। তবে ফিজিবিলিটি স্টাডিসহ আরও অনেক কাজ করা বাকি আছে। একটা হলো ঢাকা থেকে পায়রা রেল। সেটাতে তারা ইন্টারেস্টেড আছে। ‘প্রকল্পটি পিপিপি পদ্ধতিতে করতে চায় বাংলাদেশ, বিষয়টি তারা ভেবে দেখবেন বলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছে সউদী সরকার।’ কক্সবাজারের উন্নয়নে সউদী আরবের বিনিয়োগ আশা করে বাংলাদেশ।
সালমান এফ রহমান বলেন, আরেকটা আমরা বলেছি কক্সবাজারে উন্নয়ন। আমরা কক্সবাজারের ট্যুরিজম, পুরো কক্সবাজারের ডেভেলপমেন্টর জন্য। সেটাতেও তারা খুব ইন্টারেস্টেড। আমরা ফিজিবিলিটি স্টাডি করলে, তাদের সঙ্গে শেয়ার করলে তখন এটা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, চট্টগ্রামে নির্মাণাধীন বে টার্মিনাল ও পতেঙ্গা টার্মিনালে বিনিয়োগে আগ্রহী সৌদি সরকার। তারা প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা বলেছি আমাদের জিটুজি অ্যাগ্রিমেন্ট না হওয়া পর্যন্ত তাদের ওই প্রস্তাবগুলো পরীক্ষা করতে পারি না। চুক্তি হয়ে গেলে আমরা বিষয়টা দেখব।
একটি বিশেষ অর্থনৈতিক জোনে বিনিয়োগ করতে সউদী আরবকে প্রস্তাব দেয়ার বিষয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, আমরা প্রস্তাব দিয়েছি, একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন তাদের দিতে চাই। এই প্রস্তাবেও তারা খুবই পজিটিভ রেসপন্স করেছে। প্রথম মিটিংয়েই আমি এই প্রস্তাবটা দিয়েছিলাম ওনাদের বাণিজ্যমন্ত্রীকে। এটা তাদের কাছে খুবই ইন্টারেস্টিং প্রস্তাব। তারা বলেছে, এটা নিয়ে তারা স্টাডি করে আমাদের জানাবে। দেশটির একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইকোনমিক জোনে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে বলেও জানান সালমান। তিনি বলেন, বাওয়ানি নামে একটা কোম্পানি বেজাকে (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ) একটা প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে ইকোনমিক জোনের জন্য। ইকোনমিক জোন এক্সক্লুসিভলি ফর সৌদি অ্যারাবিয়া। এই প্রস্তাব নিয়ে ওরা কাজ করছে।
সৌদি আরব সফর করা প্রতিনিধি দলের সদস্য বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, সফল একটি সফর ছিল। সউদী আরবের সঙ্গে বিনিয়োগ নিয়ে কথা হয়েছে। দেশটি বড় অঙ্কের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। বিশেষ আগ্রহ বিদ্যুৎ, ফুড প্রসেসিং, ট্রান্সপোর্ট ও অবকাঠামো খাতে। সৌদি বিনিয়োগের অঙ্ক কত হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, এটা এখনই বলা সম্ভব নয়; দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে হবে। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য দেশটির ব্যাপক আগ্রহ আছে। আমরাও সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সকল সহযোগিতা নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই বড় অঙ্কের বিনিয়োগের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। চুক্তির বিষয়ে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, গত মঙ্গলবার সৌদি মন্ত্রিপরিষদের সঙ্গে বৈঠকে জিটুজি ও পিপিপি চুক্তির বিষয়ে আলাপ হয়েছে। ভার্চুয়ালি ও সরাসরি দেশে এসে সই করার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। ভার্চুয়ালি রাজি হলে তারা দ্রুতই (৭-১০ দিন) এতে সই করবে। আর দেশে এসে চুক্তি করতে সম্মত হলে কিছুটা সময় লাগতে পারে।
বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের উদ্যোগে কয়েক বছর ধরেই এদেশে সউদী আরবের বিনিয়োগ আনার চেষ্টা চলছে। সউদী বাদশাহ এবং প্রিন্স দুজনই বাংলাদেশের ব্যাপারে আগ্রহী। সৌদি আরবের মন্ত্রী পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরও করে গেছেন। ওই সময় বাংলাদেশের চলমান ও প্রস্তাবিত কয়েকটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সউদী আরবের কাছে ৩৫ বিলিয়ন ডলার এবং পুঁজিবাজার উন্নয়নে জরুরি ভিত্তিতে দেশটির কাছে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ চাওয়া হয়েছিল। ওই প্রস্তাবসহ বাংলাদেশের সকল প্রস্তাবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছে সউদী আরব।
এদিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের সৌদি আরব সফরের সময় সউদী বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আরো বেশি সউদী বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের একটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের বিষয়ে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেন।
তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, গত এক দশকে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, প্রাণবন্ত তরুণদের বিশাল কর্মীগোষ্ঠী, কৌশলগত অবস্থান, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, ক্রমবর্ধমান অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের জন্য আদর্শ স্থান।
সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের সউদী আরব সফরের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন রিয়াদে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ। গোলাম মসিহ ইনকিলাবকে বলেন, শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে রাজকীয় সৌদি সরকার ও দেশটির বিনিয়োগকারীদের কাছে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন। এতে বড় বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিনিয়োগ নিয়ে দুই দেশের সঙ্গে সমঝোতা হলে দেশের উন্নয়নে এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।
গোলাম মসিহ বলেন, দেশটিতে সফরকালে সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ ও পরিবহন মন্ত্রীর সাথে দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে সালমান এফ রহমান বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বর্তমান সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। পাশাপাশি সৌদি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। সৌদি বিনিয়োগ মন্ত্রী খালিদ আল ফালিহ বাংলাদেশের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন। এ ধরনের প্রস্তাবে সৌদি বিনিয়োগকারীরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে সৌদি মন্ত্রীরা স্বীকার করেছেন বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ রয়েছে। বাংলাদেশে আরো বেশি সৌদি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। সউদী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে এটা একটি ইতিবাচক দিক।
এক প্রশ্নের জবাবে গোলাম মসিহ বলেন, বাংলাদেশে ৪১ বছরের মধ্যে সউদী বিনিয়োগকারীরা প্রথম বিনিয়োগ করতে যাচ্ছেন। ২০১৬ সাল থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদি আরবে কয়েকবার সফরের মাধ্যমে ভ্রাতৃপ্রতীম সৌদির সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর জোরদার হতে থাকে। এ কূটনৈতিক সম্পর্ককে কাজে লাগাতে পারলে উভয় দেশই লাভবান হবে বলে সাবেক রাষ্ট্রদূত আশাবাদ ব্যক্ত করেন।