বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কয়েক মাস ধরে তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি আদেশ বাড়ছে। গেল আগস্ট মাসে পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আগস্টে নিটওয়্যার ও ওভেন মিলে গত বছরের একই সময়ে প্রায় দ্বিগুণ আদেশ এসেছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে দরও বেড়েছে পোশাকের।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বাণিজ্য নিরঙ্কুশ ক্রেতানির্ভর। ক্রেতাদের একতরফা পছন্দমতোই রপ্তানি আদেশ এবং দরদাম নির্ধারণ হয়ে থাকে। এ কারণে পোশাক বাণিজ্যকে ‘বায়ার্স মার্কেট’ বলা হয়। সে অবস্থা কিছুটা হলেও বদলাতে শুরু করেছে। চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগে বায়ার্স মার্কেট থেকে সাপ্লায়ার্স মার্কেট বা ম্যানুফেকচারার্স মার্কেটের দিকে এগোচ্ছে দেশের পোশাক বাণিজ্য। হাতে প্রচুর রপ্তানি আদেশ থাকায় সব ক্রেতার রপ্তানি আদেশ নিচ্ছেন না উদ্যোক্তারা।
গত আগস্টে নিটওয়্যারের মোট ৮৪ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের মূল্যের রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে। ৩৯ কোটি পিস পণ্যের বিপরীতে যা পেয়েছেন উদ্যোক্তারা। গত বছরের ৪৪ কোটি ডলারের আদেশ ছিল এবং পণ্যের পরিমাণ ছিল ২৭ কোটি ৪৮ লাখ পিস। নিটের বিপরীতে মূল্য হিসাবে এই অর্থমূল্যের রপ্তানি আদেশ পাওয়া যায় ওই আগস্টে। বিকেএমইএর তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসের তুলনায়ও আগস্টের রপ্তানি আদেশের পরিমাণ অনেক বেশি। জুলাই মাসে রপ্তানি আদেশের পরিমাণ ছিল ৫৮ কোটি ডলার।
বিকেএমইএর প্রথম সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম সমকালকে বলেন, আগস্টের মতো চলতি সেপ্টেম্বরেও রপ্তানি আদেশের প্রবাহ অব্যাহত আছে। নিজের কারখানার পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমেরিকার একটি ব্র্যান্ডের নিয়মিত কাজ করে তার কারখানা এমবি নিট। চলতি আদেশের সঙ্গে গত সপ্তাহে আরও ২৫ হাজার পিস বেশি গেঞ্জির রপ্তানি আদেশ বাড়িয়ে দিয়েছেন ক্রেতা। সব কারখানায় একই অবস্থা। হাতে প্রচুর রপ্তানি আদেশ। প্রচুর রপ্তানি আদেশ থাকায় দর নিয়ে দর কষাকষিতে আগের মতো আপস করতে হচ্ছে না।
রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর পোশাক উৎপাদনে কাঁচামাল আমদানির অনুমতি ইউটালাইজেশন ডিক্লারেশন (ইউডি) নিতে হয়। বিজিএমইএর তথ্য বলছে, সমাপ্ত আগস্টে সংখ্যায় ১৭ হাজার ২২৮টি ইউডি নিয়েছে বিভিন্ন কারখানা। গত বছরের আগস্টে এ সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৭০৫। গত জুলাই মাসের তুলনায়ও আগস্টে ইউডি বেড়েছে। জুলাই মাসে ইউডির সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪৭৫টি। ইউডি নেওয়ার পর এক থেকে তিন মাসের মধ্যে পণ্য জাহাজীকরণ হয়। জাহাজীকরণ হওয়ার পর এনবিআর এবং ইপিবির রপ্তানি চিত্রে তা প্রতিফলিত হয়। এ হিসাবে আগস্টের বেশি ইউডির প্রতিফলন দেখা যাবে অক্টোবর এবং নভেম্বরের রপ্তানি প্রতিবেদনে।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম সমকালকে বলেন, ক্রেতাদের ইচ্ছায় চলে এদেশের পোশাকের বাণিজ্য। সে অবস্থা বদলাতে শুরু করেছে। বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে কিছু বিষয়ে সদস্যদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন তারা। সামর্থ্যের বেশি রপ্তানি আদেশ যেন না নেওয়া হয়, সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষকে। আবার অনুমোদনহীন সাব-কন্ট্রাক্টিং কারখানায় যেতে না হয়, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
ম্যয়সিস গার্মেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন সমকালকে বলেন, পাঁচ পকেটের একটি ডেনিম ট্রাউজার দুই মাস আগেও তিনি রপ্তানি করতেন ১০ থেকে ১২ ডলার। এখন ১২ থেকে ১৪ ডলারে রপ্তানি করছেন। সাধারণ টিশার্ট দেড় ডলার থেকে দিগুণ দামে তিন ডলারে বিক্রি করেন। অবশ্য দেশে সুতার দাম বৃদ্ধির কারণেও পোশাকের দর কিছুটা বেড়েছে।
হঠাৎ করে ক্রেতাদের বাংলাদেশমুখী হওয়ার পেছনে বেশ কয়েকটি কারণের কথা জানা গেছে উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে। তারা মনে করেন, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক কোনো পর্যায়েই করোনার প্রভাব এখন আর প্রায় নেই। পশ্চিমাবিশ্ব স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরেছে। করোনার কারণে বন্ধ থাকা রাষ্ট্রীয়, সামাজিক, পারিবারিক অনুষ্ঠান আবার শুরু হয়েছে। ঘরবন্দি মানুষ আবার দেশ ভ্রমণে বের হতে শুরু করেছে। এতে জমা থাকা চাহিদা প্রকাশ পাচ্ছে বাজারে।