বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পরীক্ষার হলে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটের ১৬তম বিশেষ সভায় গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী।
এদিকে শিক্ষক ফারহানার বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌস বলেন, ‘চুল কেটে দেওয়া ছাড়াও শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ব্যক্তিগত আক্রমণ ও খারাপ আচরণের একাধিক অভিযোগ আমরা পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে শুধু একটি বিভাগের অভিযোগ নয়, সব বিভাগেই অভিযোগ রয়েছে। জুতার শব্দ হলেও তিনি শিক্ষার্থীদের শাসন করেন। সব অভিযোগ তদন্ত করা হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই এগুলো জানা যাবে।’
ওই বিভাগের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর সজীব সরকার বলেন, শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিন তাকে দিয়ে কাঁচি আনিয়ে একে একে ১৩ থেকে ১৪ ছাত্রের চুল টেনে ধরে কেটে দিয়েছেন। বিভাগের অফিস সহায়ক আবদুল মালেক এ ঘটনার সাক্ষী দিয়ে বলেন, ‘আমিও ঘটনার সময় পরীক্ষার হলে অবস্থান করছিলাম। সেখানে আমি শিক্ষক ফারহানাকে ছাত্রদের চুল টেনে ধরে কাঁচি দিয়ে কাটতে দেখেছি।’
চুল কেটে দেওয়ার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দুই শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষক ফারহানার উগ্র আচরণের কারণে তারা এবং পরীক্ষার হলে উপস্থিত অন্য শিক্ষকেরা কিছু বলার সাহস পাননি। চুল কেটে দেওয়া শিক্ষার্থীদের একজন তানভীর হোসেন। তিনি বলেন, ‘করোনায় দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার পর পরীক্ষা শুরু হলেও শিক্ষক ফারহানা পরীক্ষার তিন-চার দিন আগে নিয়মবহির্ভূতভাবে রুটিন দিয়েছেন। সেখানে প্রতিদিন পরীক্ষা রাখা হয়েছে। এটি অমানবিক। রুটিন পরিবর্তনের দাবিতে আমরা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা স্মারকলিপি দেওয়ার চেষ্টা করি। পরে তিনি আমাদের নাম সংগ্রহ করেন।’
তানভীর আরও বলেন, গত শনিবার পরীক্ষার হলে গিয়ে পুরো চার ঘণ্টা তাদের মানসিকভাবে নির্যাতন করেন ওই শিক্ষক। ব্যাপারটি নিয়ে পরদিন তারা কথা বলতে চাইলে তিনি তাদের চুল কেটে দেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ফারহানা ইয়াসমিন চুল কাটার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার একটু রাগ রয়েছে। পরীক্ষার জন্য, পড়ালেখার জন্য আমি শিক্ষার্থীদের একটু একটু বকাঝকা করি। কিছু ছাত্র আমার কাছে এসে পরীক্ষা পিছিয়ে দিতে বলেছিল। আমি এতে রাজি হইনি। হয়তো সেই রাগে এ ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
এদিকে শিক্ষক ফারহানাকে বরখাস্ত এবং ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে অনশন শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন চার শিক্ষার্থী। দুজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া গতকাল দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একাংশ মিছিল নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে গিয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় দুটি সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়।