নিউ নরমাল পৃথিবীতে আবারো ধীরে ধীরে নরমাল হতে শুরু করছে সব কিছু। ধীরে ধীরে উন্মুক্ত হচ্ছে আকাশও। ঢাকা থেকে সরাসরি বিমান চলবে মালেতে, এ খবরে পর্যটনপিয়াসী আর দশ জনের মত আমার কলিজায়ও যে এক-আধটু নাচন ধরেনি তা স্বীকার না করে পারছি না। মালদ্বীপে আমার যাওয়া হয়ে উঠেনি। ঐ যে, ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া… …’ টাইপ বিষয় আর কি।
ওল্ড নরমাল দুনিয়ায় ভেবেছি, আজ যাব তো কাল, কিন্তু সেই যাওয়া আর হয়ে উঠেনি। কাজেই আবার যখন ক্রমেই উন্মুক্ত আকাশ আর সরাসরি বিমানযাত্রার হাতছানি ঢাকা থেকে মালেতে, এবার আর সুযোগটা হাতছাড়া করতে আগ্রহী নই আমি অন্তত মোটেও। মালদ্বীপের কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে উঠে নীল নীল স্বচ্ছ জলরাশি আর স্বচ্ছতার বিশাল বিস্তার। মালদ্বীপে যাওয়া হলে অনেক কিছুই দেখার পরিকল্পনা আছে মাথার ভেতরে। মালদ্বীপের জেলেদের মাছ ধরার একটা অদ্ভুত কায়দা আছে। তারা সমুদ্রে ছিপ ফেলে আর ছিপ টানতেই মুহুর্তেই উঠে আসে মাছ। টিভিতে দেখে দেখে মালদ্বীপের জেলেদের মাছ ধরার এই বিষয়টি আমার মাথায় এমনভাবে ঢুকে গেছে যে মালদ্বীপে একবার যেতে পারলে, জেলেদের সাথে এভাবে মাছ শিকারে একবার আমার যেতে হবেই হবে।
সকালে খবরের কাগজে মালদ্বীপে চলমান সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের খবর পড়তে পড়তে এসব সাত পাঁচ চিন্তা মাথায় ঘুরছিল। আর সাথে ঘুরছিল আরেকটা চিন্তাও। প্রতিবেশি মলদেভিয়ানরা যখন স্বচ্ছ পানিতে মাছ শিকারে এতটাই পারঙ্গম, তখন আমাদের এখানে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে আগ্রহীর সংখ্যা এত বেশি কেন? চিন্তাটা হঠাৎই মাথায় আসার কারণও অবশ্য একটা আছে।
সদ্যই চলমান প্যান্ডেমিকের মধ্যে প্রথম বিদেশ সফর শেষে দেশে ফিরেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে আবারো বাংলায় ভাষণ দিয়ে তিনি গর্বিত করেছেন বাঙালি জাতিকে। অংশ নিয়েছেন একাধিক দ্বিপাক্ষিক ও গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক বৈঠকে। পাশাপাশি সন্মানিত হয়েছেন এসডিজি গোল অর্জনের পথে ঠিকঠাক মত আগাতে থাকা বাংলাদেশকে সঠিক নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। এতে তিনি নিজে যত না সন্মানিত হয়েছেন, তার চেয়ে ঢের বেশি তিনি সন্মানিত করেছেন বাংলাদেশের সতের কোটি মানুষকে। অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই আরেকটি সফল বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করেও ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা কিছু কম দেখছি না।
প্রধানমন্ত্রী এই করোনাকালে বিদেশি বিমান সংস্থাকে টাকা না দিয়ে, দেশের টাকায়, দেশের বিমান চার্টার করে নিউ ইয়র্ক গিয়েছেন তা নিয়ে কোথায় প্রশংসার ঢেউ উঠবে, তা তো নয়-ই, বরং নানাভাবে রটানো হচ্ছে তিনি নাকি ব্যাগ ভরে ধন-সম্পদ নিয়ে উড়াল দিয়েছিলেন। ভাবখানা এমন যে হেলসিংকি আর নিউ ইয়র্ক যেন সিলেট কিংবা চট্টগ্রামের মত বাংলাদেশের দুটো শহর আর কি। মধ্যপ্রাচ্যের কোন বাদশা যখন হাজারের উপর সুটকেস নিয়ে বিদেশ সফরে যেয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শিরোনাম হন, তখন তা এসব দুর্মুখদের চোখে পড়েনা। কিন্তু পানিটা ঘোলা করে মাছ শিকারের কোন সুযোগও তারা ছাড়তে রাজি না।
আমি ইদানিং এ ধরনের ঘোলা পানির জেলেদের বিরুদ্ধে সচেতন মানুষদের মিডিয়ায় বলতে লিখতে দেখছি। আমি অবশ্য এটাও সমর্থন করি না। বরং বলা যায় এর আদৌ কোন প্রয়োজন দেখিনা। পাগলেতো বলবে কত কিছুই আর চতুস্পদে খাবে আরো কতই কিছু। তাই পাগল আর চতুস্পদের পিছনে সময় দেয়া সময়ের অপচয় ছাড়া অন্য কিছু হতে পারে না। আর এরপরও যারা এ ধরনের অপপ্রচারে একটু-আধটু সুরসুরি বোধ করছেন, ভাবতে চাচ্ছেন, ‘বলাতো যায় না, হতেও তো পারে ডাল মে কুছ কুছ কালা’, তাদের বলবো এই কদিন আগেই প্রকাশিত পানামা পেপারসের প্রতিবেদনটি আরেকবার খুটিয়ে পড়ুন। দেখবেন হাজার চেষ্টায়ও তারা আমাদের আশার বাতি ঘর, আমাদের মাননীয় প্রধানন্ত্রীর আয়বহির্ভূত একটি আনারও খোঁজ পায়নি দেশে কিংবা বিদেশে কোথাওই। ওদের চেয়েও বড় ‘ঘোলা পানির মাছ শিকারি’ হাজার চেষ্টায়ও না পারতে বাধ্য হয়েই শেখ হাসিনাকে পৃথিবীর শীর্ষ তিনজন সৎ সরকার প্রধানের মধ্যে একজনের সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য হয়েছে।
লেখক : ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সদস্য সচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ।