বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ২০০৮ সালে রংপুর জেলা স্কুল মাঠে আয়োজিত এক বিশাল জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব নেয়ার ঘোষণা দেন। সেখানে তিনি বলেন, আমি রংপুরের পুত্রবধূ। কাজেই রংপুর আমার নিজের জেলা। রংপুরের উন্নয়নের দায়িত্ব আমি নিজের কাঁধে নিলাম। রংপুরের উন্নয়নের জন্য আমার কাছে কোন দাবি বা সুপারিশ করার প্রয়োজন হবে না। তিনি আরও বলেন, মঙ্গাপীড়িত এলাকা হিসেবে রংপুরের একটা পরিচিতি ছিল। আমরা মঙ্গাকে পুরোপুরি বিদায় দেব। আগামীতে ‘মঙ্গা’ শব্দটিই মানুষ ভুলে যাবে। রাজনৈতিক মঞ্চের বক্তব্য হলেও বাস্তবে কথা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় রংপুর এখন উন্নয়নের মহাসড়কে ছুটে চলছে। রংপুরের যোগাযোগ, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ক্রীড়া, কৃষি সর্বক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। মঙ্গা শব্দটিও ভুলে গেছে এ এলাকার মানুষ।
রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনির হাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা মহকুমা নিয়ে একটি মাত্র জেলা ছিল রংপুর। এরশাদ সরকারের আমলে মহকুমাগুলোকে জেলায় উন্নীত করা হয়। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের সুতিকাগার এই রংপুর। ইতিহাস খ্যাত বিপ্লবী নারী দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠক, রাজা শিবচন্দ্র, বাকের জং, মনিসিং রংপুর থেকেই ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন। বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ইংরেজ মারার লক্ষ্যে ট্রেনে বোমা নিক্ষেপ করেছিলেন সেটিও রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার ভূতছাড়া (বর্তমান মীরবাগ) রেল স্টেশনে।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে রংপুরের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ হন রংপুরের কিশোর যোদ্ধা শঙ্কু সমদ্দার। শহীদ শঙ্কুর আত্মত্যাগ মূলত রংপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন করে উজ্জীবিত করে। ১৯৭১ সালের ২৮ এপ্রিল রংপুরের হাজার হাজার মুক্তিপাগল মানুষ তীর, ধনুক, ছুরি, বল্লম ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণ করে। কয়েকশ’ মানুষ এতে পাকিস্তানী বাহিনীর পাল্টা আক্রমণে শহীদ হয়। দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমণের মতো অসীম সাহসিকতা পৃথিবীর ইতিহাসে সত্যিই বিরল।
বিখ্যাত লোক সঙ্গীত শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের ভাওয়াইয়া গানের দেশ রংপুরের রয়েছে সাহিত্য, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের সমৃদ্ধ ইতিহাস। ‘রঙপুর বার্তাবহ’ নামে একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা রংপুর থেকে প্রকাশিত হয় যেটি ভারত উপমহাদেশের প্রথম বাংলা পত্রিকা।
প্রবাদ ছিল, ‘রঙে রসে ভরপুর, তার নাম রংপুর’। এক সময়ে কৃষিপ্রধান এ অঞ্চলের মানুষের গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ছিল। ছিল সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভিত। নানা কারণে সময়ের পরিবর্তনে সে সমৃদ্ধি মঙ্গায় রূপ নেয়। এ এলাকাটিতে কৃষি শ্রমিকের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় বেশি হওয়ায় অনেকে বেকার থাকত। তাছাড়া চৈত্র-বৈশাখ ও আশি^ন-কার্তিক মাসে ফসলের জমিতে কোন কাজ থাকত না। ফলে উপার্জন না থাকায় এই সময়টা চরম কষ্টে দিন কাটাত এ এলাকার শ্রমজীবী মানুষের। বর্তমান সরকার দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই রংপুরের মঙ্গা নিরসনের জন্য গবেষণার মাধ্যমে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আগাম জাতের ধান উৎপাদন, বহুমুখী ফসল উৎপাদন, সহজ শর্তে ও স্বল্প সুদে কৃষি ঋণ প্রদান, অনাবাদি জমিতে বিকল্প ফসল উৎপাদন, চরাঞ্চলের পতিত জমিতে ভুট্টা, মিষ্টি কুমড়া চাষ, বীজ, সার, কীটনাশকসহ সকল কৃষি উপকরণের সুলভ মূল্য এবং সহজলভ্যতা ইত্যাদি। এছাড়া বর্তমান সরকারের আমলে নির্মিত বঙ্গবন্ধু (যমুনা) সেতু, তিস্তা নদীর উপরে তিস্তা সড়ক সেতু, শেখ হাসিনা সেতু এবং ধরলা নদীর উপরে ধরলা সেতু এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। যোগাযোগ সহজ হওয়ার কারণে রংপুরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক দরিদ্র চাষীর সকালের তোলা ফসল বিকেলেই বিক্রি হচ্ছে ঢাকার বাজারে। ফলে পণ্য বিক্রয়-বিপণন সুবিধা বেড়ে যাওয়া কৃষক পাচ্ছে ন্যায্য দাম।
রংপুরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রধান দাবি ছিল, রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা, রংপুরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ, বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন, শিক্ষা বোর্ড স্থাপন, রংপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণ।
রংপুরকে বিভাগ ঘোষণা, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, রংপুর পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীতকরণ এই তিনটি দাবি পূরণ করেছে বর্তমান সরকার। রংপুরে পাইপ লাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের প্রক্রিয়া চলছে। বর্তমান সরকারই রংপুরে গ্যাস দিবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সাফিউর রহমান সফি। তিনি বলেন, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে রংপুরকে বঞ্চিত করে দিনাজপুরে শিক্ষা বোর্ড স্থাপন করে। ফলে রংপুরে শিক্ষা বোর্ড স্থাপনের সুযোগ নেই। তবে সরকারের এ মেয়াদেই রংপুর গ্যাস আসবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় উপহার রংপুর বিভাগ এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশন। রাজশাহী থেকে আলাদা হওয়ার পর সকল দফতরের বিভাগীয় দফতর এখন রংপুরে। ফলে দাফতরিক কাজে সুদূর রাজশাহী যাতায়াতের কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলার মানুষ। বিভাগীয় শহর হওয়াতে রংপুর হয়ে উঠেছে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা ও সকল অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য উত্তরাঞ্চলের রাজধানী।
রংপুর সিটি কর্পোরেশন ॥ রংপুর সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের রংপুরের স্থানীয় সরকার সংস্থা এবং দেশের দশম সিটি কর্পোরেশন। ২০১২ খ্রিস্টাব্দের ২০ ডিসেম্বর তারিখে জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) বিল, ২০০৯-এর মাধ্যমে রংপুর পৌরসভাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রংপুর সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করা হয়। বর্তমান সরকারের আন্তরিক সহযোগিতায় ২০৫.৭০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ মহানগরকে তিলোত্তমা নগরী হিসেবে সাজানোর কাজ করে চলছেন বর্তমান মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। ৫০.৫৬ বর্গকিলোমিটারের রংপুর পৌরসভাকে যারা পূর্বে দেখেছেন তারা আজকের রংপুর সিটি কর্পোরেশনকে দেখে বিশ^াস করতে পারবেন না। নগরের বুকচিরে চারলেনের ঝকঝকে রাস্তা, মাঝ বরাবর সড়ক বাতি রাতের সিটিকে এক মোহনীয় রূপে তুলে ধরে। বর্ধিত এলাকা ছাড়া নগরীর সকল রাস্তাই পাকা। কোথাও কোন ভাঙ্গাচোরা নেই। বর্ধিত এলাকাগুলোতে রাস্তা এবং ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে জোরেশোরে।
গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু ॥ রংপুর জেলার গঙ্গাচরার উন্নয়ন এবং লালমনিরহাট জেলায় অবস্থিত বুড়িমারী স্থলবন্দরসহ পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে তিস্তার ওপর (কালীগঞ্জ-গঙ্গাচরা) সেতু দাবি করে আসছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। ১৬ সেপ্টেম্বর/২০১৯ রবিবার বেলা ১২টার পর গণভবন থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাকিনা-মহিপুর এলাকায় তিস্তা নদীর ওপর নবনির্মিত সেতুটির দৈর্ঘ্য ৭৫০ মিটার এবং প্রস্থ ১২.১ মিটার। সেতুটি নির্মাণে মোট ব্যয় ১২২.০৯ কোটি টাকা। ‘সেতুটির কারণে ঢাকার দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার পথ কমে গেছে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্যের সুবিধা বেড়েছে এবং ওই এলাকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়ন হচ্ছে।
তিস্তা সড়ক সেতু ॥ রংপুর জেলার কাউনিয়া উপজেলাইয় লালমনিরহাট-রংপুর মহাসড়কে তিস্তা নদীর ওপর অবস্থিত তিস্তা রেল সেতুর পাশে তিস্তা সড়ক সেতুর কাজ শুরু হয় ২০০৬ সালে এবং সমাপ্ত হয় ২০১২ সালের জুন মাসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০ সেপ্টেম্বর ২০১২ সালে এ সেতুটি উদ্বোধন করেন। সেতুটির দৈর্ঘ্য ৮৫০ মিটার এবং প্রস্থ ১২.১ মিটার। নির্মাণে মোট ব্যয় ১২২.০৯ কোটি টাকা।
গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা তিস্তা সেতু এবং তিস্তা সড়ক সেতু এ দুটি সেতু লালমনিরহাট এবং কুড়িগ্রাম জেলাকে রংপুরসহ দেশের অন্যান্য জেলার সঙ্গে যুক্ত করেছে যা রংপুরের উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
পীরগঞ্জে রংপুর মেরিন একাডেমি ॥ উত্তরাঞ্চলে প্রথমবারের মতো সমুদ্রবিষয়ক জ্ঞান চর্চার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে দক্ষ নাবিক ও নৌ প্রকৌশলী তৈরি শিক্ষার দরজা খুলল রংপুর মেরিন একাডেমি। রংপুরের পীরগঞ্জে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়াল উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক দ্বার খুলছে।
রংপুর গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আল মামুন রনি জানান, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত বিভাগ পীরগঞ্জের রায়পুর ইউনিয়নের ফলির বিল এলাকার ১০ একর জমির ওপর প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হয় এই একাডেমি। ২০১২ সালের জুলাই মাসে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে ২০১৫ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফায় রেট শিডিউল বদলের কারণে সংশোধিত ডিপিপি প্রণয়ন ও অনুমোদনের কারণে একাডেমিটি নির্মাণে ২০২১ সাল পর্যন্ত লেগে যায়। একাডেমিকে ভবন, প্রশাসনিক ভবন, প্যারেড গ্রাউন্ড, ডরমেটরি ভবন, সাতটি আবাসিক ভবন, মসজিদ, অত্যাধুনিক জিমনেশিয়াম, সুইমিং পুল, প্রশিক্ষণ ভবনসহ ৩৫টি অবকাঠামো রয়েছে মেরিন একাডেমিতে। আছে মেরিনদের ব্যবহারের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় ও আকর্ষণীয় পুকুর। ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুত সরবরাহের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল সোলার প্যানেল।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ২০০৮ সালের ২ ফেব্রæয়ারি রংপুরে তৎকালীন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদের সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের এক বৈঠকে রংপুরে একটি স্বতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর টিচার্চ ট্রেনিং কলেজের অস্থায়ী ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু হয়েছিল রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের। প্রাথমিকভাবে রংপুর টিচার্চ ট্রেনিং কলেজেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠদান শুরু হয়। পরবর্তীতে ২০০৯ সালের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়’। ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল, ১২ জন শিক্ষক ও ৩০০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে রংপুর মহানগরীর পার্কের মোড় এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়। নবনির্মিত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ॥ চিকিৎসাসেবা এবং চিকিৎসা শিক্ষার জন্য রংপুর বিভাগের আট জেলার মানুষের প্রধান ভরসার স্থল রংপুর মেডিক্যাল কলেজ। এটি ৫০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল ছিল। ছিলনা তেমন চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি। বর্তমান সরকার এ হাসপাতালটিকে ১০০০ শয্যায় উন্নীত করেছে। তৈরি করা হয়েছে আধুনিক আইসিইউ ও সিসিইউ ইউনিট। শেখ হাসিনার কৃপা দৃষ্টিতে এ হাসপাতালটির শুধু কলেবর বাড়েনি, বেড়েছে চিকিৎসা সুবিধা এবং সেবার মান। রংপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ নুরুন্নবী লাইজু বলেন, আমরা এখন স্বয়ং সম্পূর্ণ। ঢাকার চিকিৎসার সকল সুবিধা এখানে রয়েছে।
করোনা ডেডিকেশন আইসোলেশন হাসপাতাল ॥ বর্তমান সরকার চলতি বছরে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় রংপুরে চালু করেছে করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল। ১১ জন চিকিৎসক ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলে ৬৪ জন এখানে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁদের জন্য তিনটি আবাসিক কোয়ার্টার রয়েছে। করোনা রোগীদের ভেন্টিলেটরসহ আইসিইউ সুবিধা রয়েছে এই হাসপাতালে। এখন এই হাসপাতালে ১০০ শয্যা রয়েছে।
রংপুর নগরে সদর হাসপাতাল সংলগ্ন নবনির্মিত ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতালে নতুন এই আইসোলেশন হাসপাতাল চালু করা হয়েছে। এই হাসপাতালে রংপুর বিভাগের আট জেলার করোনা আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন। এই হাসপাতালে ১০টি ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে।
শিল্পকলা একাডেমি, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স ও ২টি নতুন সরকারী স্কুল \ সাংস্কৃতিক চর্চায় নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক মানের জেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন ভবন। এটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। এক একর জায়গার ওপর প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভবনটি নির্মাণ করছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তিনতলা বিশিষ্ট নতুন এই একাডেমিতে থাকছে অত্যাধুনিক কমপ্লেক্স ভবন। থাকছে তিনটি অডিটরিয়াম। এর মধ্যে রয়েছে অত্যাধুনিক ফিক্স অডিটরিয়াম, মাল্টিপারপাস অডিটরিয়াম এবং এরিনা মঞ্চ।
এছাড়া মহিলাদের ক্রীড়া চর্চার জন্য নির্মাণাধীন রয়েছে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। সুইমিং পুলসহ সকল খেলার আয়োজন থাকবে সেখানে। জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, স্বল্প খরচে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির জন্য রংপুরের আরও দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। শীঘ্রই নির্মাণ কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। তিনি আরও জানান, দেশে নির্মিত ৫০টি মডেল মসজিদের মধ্যে ৫টি নির্মাণ করা হয়েছে রংপুরে।
আদালতের বহুতল ভবন ॥ জেলার আরেকটি উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত রংপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বহুতল ভবন। ২০১৯ সালের এপ্রিলে আদালতের নতুন এই ভবনের উদ্বোধন করেন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিছুল হক।
পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) ॥ বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে অক্টোবর-২০১৪ হতে সেপ্টেম্বর- ২০১৮ মেয়াদী একটি চলমান প্রকল্প। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প। উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের (গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট) গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরের মাধ্যমে উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত করে তাদের দারিদ্র্য বিমোচন করার লক্ষ্যে আরডিএ, বগুড়ার অধীনে রংপুরের তারাগঞ্জ জেলায় বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়ার আদলে একটি স্বতন্ত্র একাডেমি বাস্তবায়িত হচ্ছে।
চরাঞ্চলে বিদ্যুতের আলো ॥ বর্তমান সরকারের আমলেই রংপুরের গঙ্গাচড়া ও কাউনিয়া উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের প্রায় সকল ইউনিয়নে পৌঁছেছে বিদ্যুতের আলো। বর্ষাকালে নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে নৌকাযোগে যাতায়াত সুবিধা হলেও শুকনো মৌসুমে যত বিড়ম্বনা। গ্রীষ্ম মৌসুমে চারদিকে ধু-ধু বালুচর। নাগরিক সুবিধা বলতে এখানে তেমন কিছু নেই। দিনে জনসমাগম থাকলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে গ্রামগুলো পরিণত হতো ভুতুড়ে জনপদে। চারদিক ঢেকে যেত অন্ধকারের চাদরে। আলোর ব্যবস্থা না থাকায় সন্ধ্যায় স্থানীয় বাজারগুলোও হয়ে পড়ত জনশূন্য। চারদিকে সুনসান নীরবতা। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও রাতের অন্ধকার দূর করতে বিদ্যুতের আলো এই জনপদের মানুষের কাছে ছিল স্বপ্নের মতো। চারঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের বিদ্যুতের সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিয়েছে।
তিস্তা মহাপরিকল্পনা ॥ সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ হচ্ছে, মুজিববর্ষে দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষকে তিস্তা নদী ঘিরে মহাপরিকল্পনা উপহার দিতে চান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার। প্রায় আট হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। চীন এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পের আওতায় তিস্তা নদীর দুই পাড়ে ২২০ কিলোমিটার গাইড বাঁধ নির্মাণ করা হবে। বাঁধের দুই পাশে থাকবে সমুদ্রসৈকতের মতো মেরিন ড্রাইভ; যাতে পর্যটকরা লং ড্রাইভে যেতে পারেন। এছাড়া এই রাস্তা দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হবে। নদী পাড়ের দুধারে গড়ে তোলা হবে হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন নগরী। রংপুর ও লালমনিরহাট টাউন নামের আধুনিক পরিকল্পিত শহর, নগর ও বন্দর গড়ে তোলা হবে। তিস্তা পাড় হয়ে উঠবে সুইজারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের মতো সুন্দর নগরী। দেড়শ’ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। গড়ে উঠবে আধুনিক সেচ সেবা ও আধুনিক যন্ত্রপাতিসমৃদ্ধ কৃষি খামার। নৌপথ চালু করা হবে। তিস্তা নদী পাড়ে নতুন নতুন পরিকল্পিত শহর গড়ে তোলা হবে। শিল্প-কারখানা, ইপিজেড, ইকোনমিক জোন, কয়েক লাখ হেক্টর কৃষি জমি উদ্ধার, বনায়ন ইত্যাদি রয়েছে।
তিস্তা নদী ঘিরে মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে সামাজিক সংগঠন ‘তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও’। এ সংগঠনের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, এ মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে শুধু উত্তরাঞ্চল সমৃদ্ধ হবে তা না, এর প্রভাব পড়বে জাতীয় অর্থনীতিতে। প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।