বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সরকারের অন্যতম মেগা প্রকল্প কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’ পূর্ণাঙ্গ রূপ পাওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। আগামী শুক্রবার মধ্যরাতে টানেলটির দ্বিতীয় চ্যানেলের মুখ উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হবে এ প্রকল্পের কাজ। ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের প্রথম এই টানেল চালু করার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা (একনেক) শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিংকালে মঙ্গলবার পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু টানেল আমাদের স্বপ্নের অন্যতম মেগা প্রকল্প, রোমাঞ্চকর প্রকল্প। এটি ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই শেষ হয়ে যাবে বলে প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা একনেক বৈঠকে জানিয়েছেন।’ পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এর আগে এই টানেলের প্রথম চ্যানেলের মুখ খুলে দেওয়া হলেও আগামী শুক্রবার দ্বিতীয় চ্যানেলের মুখ খুলে দেওয়া হবে। এর মধ্য দিয়ে টানেলের কাজ অনেক এগিয়ে যাবে। তারপর ঘষামাজা করে উদ্বোধনের দিন-তারিখ নির্ধারণ করবে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।’
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউবের বোরিং (খনন) কাজ শেষ হবে আগামী শুক্রবার। অর্থাৎ বোরিং মেশিনটি খনন শেষে শুক্রবার শহরের প্রান্তে বের হয়ে আসবে। নির্ধারিত সময়ের আগেই (অনটাইম) খনন কাজ শেষ হওয়ায় এটিকে ‘ব্রেক থ্রো ইভেন্ট’ বলে মনে করছে টানেল নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ। প্রকল্পের পরিচালক হারুনুর রশীদ চৌধুরী মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, ‘দ্বিতীয় টিউবের বোরিং বা খননকাজ শুক্রবার শেষ হচ্ছে। তবে খননকাজ শেষ হওয়া মানেই টানেলের নির্মাণকাজ শেষ হওয়া নয়। আরও অনেক কাজ আছে। এর মধ্যে এ প্রকল্পের ৭৩ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।’ দেশে প্রথমবারের মতো কোনো নদীর তলদেশে এই টানেল নির্মাণ হচ্ছে। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। চীনের সাংহাই নগরীর মতো ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তোলার লক্ষ্যে টানেল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকার। টানেল চালু হলে বদলে যাবে চট্টগ্রামের চেহারা। দক্ষিণ চট্টগ্রাম তথা কক্সবাজারের চেহারা।
সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর এই টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে পুরোদমে কাজ শুরু হয় আরও তিন বছর পর। নদীর তলদেশে এই টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। টানেল সাইটে নদীর প্রস্থ ৭০০ মিটার এবং পানির গভীরতা ৯-১১ মিটার। টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ হাজার ৪০০ মিটার। নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি সংলগ্ন এলাকায় কর্ণফুলী নদীর তীর থেকে তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ তথা প্রথম টিউবের বোরিং কাজ শুরু হয়। টানেলটি হচ্ছে দুটি টিউবে চার লেনবিশিষ্ট। এছাড়া টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং ৭২৭ মিটার ওভারব্রিজ রয়েছে। চীনের কমিউনিকেশন এবং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসাবে কাজ করছে। মোট নির্মাণ ব্যয়ের মধ্যে বাংলাদেশ সরকার ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা চীন সরকার ব্যয় করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। বাঁশখালীতে হচ্ছে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। মহেশখালীতে হয়েছে এলএনজি স্টেশন। আনোয়ারায় হচ্ছে বৃহৎ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এসব মেগা প্রকল্পের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক ভূমিকা রাখবে বঙ্গবন্ধু টানেল।