বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ- ভালো উৎপাদনে ভালো পুষ্টি, আর ভালো পরিবেশেই উন্নত জীবন’। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হবে। খাদ্য দিবসের গুরুত্ব তুলে ধরতে একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারের আয়োজন করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতির পিতার জন্মশতবর্ষ স্মরণীয় করে রাখার জন্য একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন এবং বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত ‘বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’ অবমুক্ত করবেন তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী ‘বঙ্গবন্ধু ধান ১০০’ দিয়ে নির্মিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি উন্মোচন করবেন। ভাত বাঙালির প্রধান খাদ্য। মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে সাত কোটি মানুষের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হয়েছে দেশকে। তখন আমদানি করে খাদ্য চাহিদা মেটানো হতো। অথচ এখন দেশের জনসংখ্যা দ্বিগুণেরও অনেক বেশি। জলবায়ুর প্রভাবে কমেছে আবাদি জমির পরিমাণ। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতি তো বাংলাদেশের নিয়মিত ঘটনা। তারপরও খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় চার কোটি টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের রেকর্ড গড়েছে বাংলাদেশ। কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। মহামারি করোনাকালেও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকায় বিশ্বে কৃষি ও খাদ্যের ১১ খাতে সেরা বাংলাদেশের নাম।
সরকারের কৃষি অনুকূল নীতি এবং প্রণোদনায় কৃষক ও কৃষিবিদদের চেষ্টায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে চাল রপ্তানি করছে দেশ। অধিক জনঘনত্বের এ দেশে জমি কমছে, তারপরও কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধি বিশ্বের কাছে এক বিস্ময়ের ব্যাপার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যমতে, বর্তমানে ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। যা বাংলাদেশের জন্য বিশাল এক অর্জন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় মাইলফলক বলে উলেস্নখ করেছেন বিশিষ্টজনরা। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সে দেশে গত ২০১৯-২০ অর্থবছরে পাঁচ কোটি ২৬ লাখ টন ধান উৎপন্ন হয়েছে, যা বিশ্বে চতুর্থ সর্বোচ্চ। চীন ১৪ কোটি ৮৫ লাখ টন উৎপাদন করে প্রথম, আর ভারত ১১ কোটি ৬৪ লাখ টন উৎপাদন করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। কৃষি ও খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখা, চালসহ কৃষিপণ্য, প্রক্রিয়াজাত মাছ-মাংস রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একের পর এক স্বীকৃতি পাচ্ছে বাংলাদেশ। এরমধ্যে ২০২২-২০২৪ মেয়াদে এশিয়া অঞ্চলের প্রতিনিধি হিসেবে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) কাউন্সিলের সদস্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশ। এদিকে, স্বাধীনতার পরে দেশে প্রতি হেক্টর জমিতে দুই টন চাল উৎপাদিত হতো। আর এখন হেক্টরপ্রতি উৎপাদন হচ্ছে চার টনেরও বেশি। কেবল উৎপাদন বৃদ্ধিই নয়, হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনের দিক থেকেও অধিকাংশ দেশকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ। একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষের দিক থেকেও বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। এখন ধানের উৎপাদন তিন গুণেরও বেশি, গম দ্বিগুণ, সবজি পাঁচগুণ এবং ভুট্টার উৎপাদন বেড়েছে ১০ গুণ। ধান, গম ও ভুট্টা বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম। কৃষি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কৃষি তথ্যের প্রচলনের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ও সরকারিভাবে কমিউনিটি রেডিও চালু হয়েছে। বাংলাদেশের পড়াশোনা না জানা কৃষকরাই ব্যবহার করছেন আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি। কৃষিকে এগিয়ে নিতে কৃষি যান্ত্রিকীকরণে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার। অন্যদিকে, দেশে রীতিমতো সবজি বিপস্নব ঘটে গেছে গত এক যুগে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তথ্য মতে, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। খাদ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।
কিন্তু ভেজাল ও বিষাক্ত খাদ্যে বাজার সয়লাব। যার ফলে ক্যানসার, কিডনি রোগসহ বিভিন্ন দুরারোগ্য জটিল রোগের প্রার্দুভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি খাদ্য বিশেষ করে শাক-সবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস উৎপাদনে বিভিন্ন ধরনের বিষাক্ত কেমিক্যাল বিশেষ করে কীটনাশক, পেস্টিসাইড, হরমোন ও অনিয়ন্ত্রিত এন্টিবায়োটিক ব্যবহার বাড়ছে। কৃষক ও উদ্যোক্তা মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করলেও ভালো মূল্য পাচ্ছেন না। কৃষি পণ্যের টেস্টিং ল্যাব চালু না হওয়ায় ব্যাপক সম্ভাবনাময় রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারিত হচ্ছে না। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার শুক্রবার বিকালে যায়যায়দিনকে বলেন, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্য বিশ্বের উদাহরণ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। মহামারির চরম বিরূপ পরিস্থিতিতে এবং ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনের ধারা অব্যাহত রেখেছে। চালে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। বাংলাদেশ এখন খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশ। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে, করোনায় খাদ্য ঘাটতি হয়নি।