বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এ যেন এক যুদ্ধ। কর্মকর্তা থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি শ্রমিক। কারোর নেই দম ফেলার ফুরসত। করোনা সংক্রমণকে থোড়াই কেয়ার করে সবার ব্যস্ততা অভিন্ন লক্ষ্যে। সবার বিরামহীন প্রচেষ্টায় ‘অলীক স্বপ্ন’ এখন রূপ নিয়েছে বাস্তবতায়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শেষ হয়েছে কর্ণফুলী টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ। কাজের এমন ধারাবাহিকতা দেখে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরাও স্বপ্ন দেখছেন নির্ধারিত সময়ের আগেই কর্ণফুলী নদীর তলদেশের নির্মাণাধীন দেশের প্রথম টানেল যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার।
কর্ণফুলী টানেলের প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী বলেন, টানেলের দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ শেষ হওয়ায় বলতে গেলে টানেলের সবচেয়ে কঠিন কাজটি শেষ হয়েছে। খনন শেষ হওয়ায় টানেলকে যান চলাচলের উপযোগী করার প্রক্রিয়া শুরু হবে আগামী দুই মাসের মধ্যে। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের আগেই টানেলের কাজ শেষ হবে। এরই মধ্যে টানেলের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭৩ শতাংশ। জানা যায়, গত বছরের ২ আগস্ট টানেলের প্রথম টিউবের কাজ শেষ হওয়ার পর ১২ ডিসেম্বর আনোয়ারা প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় টিউব খননের কাজ শুরু হয়। গত ৭ অক্টোবর শেষ হয় দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ। খননকাজ শেষ হওয়ার পর দ্বিতীয় টিউব থেকে বোরিং মেশিন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি সরাতে লাগবে দুই মাস। এরপর শুরু হবে টিউবে স্লাব এবং কার্পেটিংয়ের কাজ। এর আগে খনন শেষ হওয়া প্রথম টিউবে বর্তমানে বসানো হয়েছে ১৭০০ মিটারেরও বেশি স্লাব। দুই টিউবের স্লাব বসানোর পর শুরু হবে কার্পেটিংয়ের কাজ। এরপর লাইটিং, অক্সিজেন সরবরাহ এবং প্রয়োজনীয় বিউটিফিকেশন কাজ হবে টানেলে। নগর ও আনোয়ারা প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়কের নির্মাণ কাজও এগিয়ে চলছে। পতেঙ্গা প্রান্তের ফ্লাড গেটের নির্মাণ কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। আনোয়ারা প্রান্তের ৭২৭ মিটার দীর্ঘ ওভারব্রিজের কাজও এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেলের মূল দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার হলেও প্রতিটা টিউবের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। প্রতি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন থাকবে টানেলে। চীনের সাংহাই নগরীর মতো চট্টগ্রাম শহর ও আনোয়ারাকে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’র আদলে কর্ণফুলী নদীতে তৈরি হচ্ছে টানেল। মেগা এ প্রকল্পের এক প্রান্তে রয়েছে চট্টগ্রাম নগরী, বিমান ও সমুদ্রবন্দর। অপর প্রান্তে আনোয়ারার ভারী শিল্প এলাকা। বিভক্ত দুই অংশকে একই সুতোয় যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। বাংলাদেশ সরকার ও চাইনিজ এক্সিম ব্যাংক এ প্রকল্পে যৌথ অর্থায়ন করছে। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এটি পুরোদমে চালু হলে প্রতি বছর প্রায় ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনীতি। বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে শিল্পকারখানা ও পর্যটনশিল্পে।