হার্ডলাইনে সরকার ॥ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির চক্রান্ত ব্যর্থ

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : শারদীয় দুর্গোৎসবকে কেন্দ্র করে গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টির অপচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। এ ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দ্রুততম সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হার্ডলাইনে গিয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তি তাদের নীলনক্সা বাস্তবায়নে এগোতে পারেনি। এদিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে গত দুদিনে মন্দিরকেন্দ্রিক ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে শতাধিক। অপরদিকে শুক্রবার চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে দুপুরে কয়েকটি পূজামন্ডপে বিচ্ছিন্ন হামলার ঘটনা ঘটে।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজাম-পে হামলার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ ও খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদ শনিবার চট্টগ্রামে অর্ধদিবস অবরোধ ডেকে- এক ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করে নেয়। বাংলাদেশে পূজামন্ডপকেন্দ্রিক ঘটনাবলী নিয়ে সরকারের অবস্থান ও এ্যাকশনের ভূয়সী প্রশংসা করেছে ভারত সরকার। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাম্পাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এ প্রশংসা করেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন পূজামন্ডপে হামলা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপি এ দেশে সাম্প্রদায়িকতাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। শুক্রবার তার বাসভবনে এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সেতুমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন। কুমিল্লার ঘটনার জেরে শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ থেকে মুসল্লিরা একটি মিছিল বের করেন। এ সময় মিছিলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রাম রেঞ্জ ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, কুমিল্লার ঘটনা নিয়ে বহুমুখী তদন্ত এগিয়ে চলছে। গ্রেফতারকৃতরা ছাড়াও বিভিন্নভাবে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রামে প্রতিমা বিসর্জন বিলম্বিত ॥ স্টাফ রিপোর্টার চট্টগ্রাম অফিস জানান, মহানগরীর পূজামন্ডপগুলোতে বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে দুর্গাপূজা হলেও শেষটা সুন্দর হয়নি। শুক্রবার জুমার নামাজের পর একদল লোক এসে হামলা চালায় জেএমসেন হল মন্ডপে। এতে থেমে যায় প্রতিমা বিসর্জনের আয়োজন। হামলার প্রতিবাদে পূজা উদ্যাপন পরিষদ নেতারা ‘নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করা পর্যন্ত’ প্রতিমা বিসর্জন না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং প্রশাসন অনুরোধে প্রতিমা বিসর্জন শুরু হয়। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে অর্ধদিবস সর্বাত্মক অবরোধের ডাক দিয়ে পরে তা প্রত্যাহার করে নেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্যপরিষদের নেতা এ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত। জেএমসেন হলে হামলার ঘটনায় ৬৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে অত্যন্ত কঠোর অবস্থান ব্যক্ত করা হয়। সাধারণত প্রতিবছর বেলা ১১টা থেকে প্রতিমা বিসর্জনের কাজ শুরু হয়। তবে এবার বিজয়া দশমীর দিনটি শুক্রবার হওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নির্দেশনা ছিল জুমার নামাজের জন্য বেলা আড়াইটার পর পূজামন্ডপগুলো থেকে প্রতিমা বের করার। সেই প্রস্তুতিও চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করে একটি মিছিল এসে হামলা চালায় জেএমসেন হল পূজামন্ডপে। হলের তোরণ তখন বন্ধ ছিল। তারা গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করে। এছাড়া পূজার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে এবং বাইরে থেকে ঢিল ছুড়তে থাকে। এ সময় মন্ডপে থাকা পূজারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতারাও। কারণ, এ মন্ডপটিতে পূজার আয়োজন করে থাকে উদ্যাপন পরিষদ। এছাড়া এটিকে চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রধান পূজামন্ডপ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য জনকণ্ঠকে বলেন, সবকিছু সুশৃঙ্খলভাবে চলছিল। প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে বেলা আড়াইটা থেকে প্রতিমা বিসর্জনের কথা জানিয়ে দেয়া হয় সকল মন্ডপগুলোকে। কিন্তু এ হামলা সবকিছু এলোমেলো করে দিয়েছে। মন্ডপে যদি হামলা হয়, তবে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার পথে যে হামলা হবে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? এ অবস্থায় আমরা মহানগরীর সকল পূজামন্ডপকে প্রতিমা নিরঞ্জন স্থগিত রাখতে বলি। তিনি জানান, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া নিরাপত্তা বিধানের আশ্বাস দিয়ে প্রতিমা বিসর্জনের কাজটি সম্পন্ন করতে বলেন। শুধু তা-ই নয়, তারা বলেছেন সাম্প্রদায়িক অপশক্তি দেশের ভাবমূর্তি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতি নষ্ট করতে চায়। সরকার অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে রয়েছে। প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সরকারের এই আন্তরিকতাকে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। এ অবস্থায় আমরা প্রতিমা বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যা ১৬টি থানার মন্ডপগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম মহানগরী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনও বিকেলে জেএমসেন হল পূজামন্ডপে ছুটে যান। তিনিও সকল ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার আশ্বাস দেন। এছাড়া চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোঃ মমিনুর রহমান এবং প্রশাসন ও পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জেএমসেন হলে যান। তারা পূজা উদ্যাপন পরিষদের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু নেতৃবৃন্দ বারবারই নিরাপত্তা নিশ্চিতের ওপর জোর দেন। ঘটনার প্রতিবাদে উদ্যাপন পরিষদের নেতা ও সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন সড়কে অবস্থান নিলে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। জেএমসেন হল পূজামন্ডপে হামলার ঘটনার পর সেখানে যান হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত। তিনি এ হামলার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের যথাযথ শাস্তির দাবিতে আজ শনিবার বেলা ১২টা পর্যন্ত চট্টগ্রামে অর্ধদিবস হরতালের ডাক দেন। পরে অবশ্য তা প্রত্যাহার করা হয়। শুক্রবার জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী মসজিদ গেটে ‘কুমিল্লার ঘটনার প্রতিবাদ’ জানিয়ে সমাবেশ করে একদল লোক। তবে এক্ষেত্রে কোন ব্যানার ছিল না। সমাবেশ শেষে তারা মিছিল নিয়ে জেএমসেন হলের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। এক্ষেত্রে তারা মোড়ে ট্রাফিক পুলিশের বেষ্টনী অতিক্রম করে। তবে পুলিশ তাদের প্রতিরোধ করে এবং মিছিল থেকে প্রায় অর্ধশতাধিক লোককে আটক করা হয়।

 

 

বাংলাদেশের প্রশংসায় ভারত ॥ ধর্মীয় সমাবেশে হামলা সংক্রান্ত কিছু বিভ্রান্তির খবরের পর উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বাংলাদেশের গৃহীত ত্বরিত পদক্ষেপ এবং অন্যান্য নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ভারত বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বৃহস্পতিবার বিকেলে সাপ্তাহিক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে ধর্মীয় সমাবেশে হামলা সংক্রান্ত অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার বিষয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর খবর আমাদের গোচরে এসেছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বাংলাদেশ সরকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মোতায়েনসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ভারত অবগত রয়েছে যে, বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং অবশ্যই সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসাধারণের সহায়তায় বাংলাদেশে চলমান দুর্গাপূজা উৎসব উদ্যাপন অব্যাহত রয়েছে। মুখপাত্র আরও বলেছেন, ভারতীয় হাইকমিশন ও বাংলাদেশে তাদের কনসুুলেট ঢাকায় এবং স্থানীয় পর্যায়ের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে স্পষ্টতই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছে’।

বিএনপি সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে- কাদের ॥ বিশেষ প্রতিনিধি জানান, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি বলেছেন, বিএনপির শাসনামলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের জন্য প্রতিটি রাত ছিল দুঃস্বপ্নের। ওই সময় সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্যও প্রতিটি রাত ছিল দুঃস্বপ্নের। এই বুঝি মন্দিরে, বাড়িঘরে হামলা হলো! বিএনপি আবারও তাদের সেই পুরনো রূপে ফিরে আসছে। তারা নতুন করে সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিচ্ছে এবং সহযোগিতা করছে। শুক্রবার ওবায়দুল কাদের তার বাসভবনে ব্রিফিংকালে তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার পূজামন্ডপের ঘটনায় বিএনপির বক্তব্য অনেকটা ঠাকুর ঘরে কেরে, আমি কলা খাইনার মতো। আসলে বিএনপি নেতারা অন্ধ বলেই সবকিছুতেই অন্ধকার দেখতে পান। ষড়যন্ত্র করে বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার রঙিন খোয়াব অচিরেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপিকে নিয়ে দুঃস্বপ্ন দেখার কোন কারণ নেই। কারণ তারা গত একযুগ ধরে নির্বাচন ও রাজপথে এমন কোন সক্ষমতা দেখাতে পারেনি যে আওয়ামী লীগ দুঃস্বপ্ন দেখবে। ‘আওয়ামী লীগ প্রতিমুহূর্তে দুঃস্বপ্ন দেখছে- এই বুঝি বিএনপি এলো, আওয়ামী লীগের ক্ষমতা গেল’ মর্মে সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিবের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ক্ষমতা দেয়ার মালিক সর্বশক্তিমান আল্লাহ এবং এদেশের জনগণ। কাজেই দুঃস্বপ্ন বিএনপিই দেখছে। যারা হাওয়া ভবন নামের খাওয়া ভবন তৈরি করে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল তাদের মেগা প্রকল্প দেখলে মনোযন্ত্রণা হওয়াই স্বাভাবিক বলেও মন্তব্য করেন ওবায়দুল কাদের। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নিজেদের শাসনামলে দেশে একটি মেগা প্রকল্প করার সাহস ও সক্ষমতা দেখাতে পারেনি। কিন্তু তারাই আজ মেগা প্রকল্প নিয়ে মেগা মিথ্যাচারে নেমেছে। তিনি বলেন, এটা প্রতিহিংসাপরায়ণ ও ব্যর্থ এক বিরোধী দল বিএনপির ঈর্ষাকাতরতা ছাড়া কিছুই নয়। প্রেসক্লাবে সভা-সমাবেশ আয়োজনের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব স্বভাবসুলভভাবে সরকারের ওপর দায় চাপিয়েছেন মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতীয় প্রেসক্লাবের একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি রয়েছে, তারা নীতিমালা অনুযায়ী হল রুম ভাড়া দেন, এটা তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত। অথচ বিএনপি নেতারা সেখানেও সরকারের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। দোষারোপের রাজনীতির দুষ্টুচক্রে বিএনপি আবর্তিত হচ্ছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এ থেকে তারা বের হতে পারছে না।

বায়তুল মোকাররমে সংঘর্ষ ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, কুমিল্লায় হামলার ঘটনার জেরে শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর গেট দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন মুসল্লিরা। এ সময় মিছিলটি পল্টন-বিজয়নগর হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড়ে বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ৫ জনকে আটক করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে মিছিলটি যখন নাইটিঙ্গেল মোড় পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ ব্যারিকেড দেয়। আর তখনই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে সাউন্ডগ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। তখন বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোড়ে। প্রায় ১০ মিনিট পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় পল্টন, কাকরাইল, বিজয়নগর, ফকিরাপুল এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোঃ সাজ্জাদুর রহমান জানান, অপ্রীতিকর ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা এড়াতে জুমার নামাজের আগে থেকেই বায়তুল মোকাররম এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জুমার নামাজ শেষে মুসল্লিরা নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে মিছিল বের করে। পুলিশ তাদের বায়তুল মোকাররম থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত মিছিলের অনুমতি দেয়। কিন্তু তারা নাইটিঙ্গেল মোড়ে গিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করেন। এ সময় বিক্ষোভকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়ে ও লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করে। তখন পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে। এ ঘটনায় পুলিশের ৫ সদস্য আহত হয়েছে। এদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্যের অবস্থা গুরুতর। আহতরা হচ্ছেন রমনা জোনের এসি মোঃ বায়জিদুর রহমান, উপ-পরিদর্শক (এসআই) সালমান, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মহিদুল ও বাকি দুই পুলিশ সদস্যের নাম জানা যায়নি। তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। ডিএমপির রমনা বিভাগ সহকারী কমিশনার (এসি) বায়জিদুর রহমান জানান, মিছিলকারীদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে আমি আহত হয়েছি। হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে আবারও ঘটনাস্থলে আসছি। এদিকে বায়তুল মোকাররম মসজিদের ইমাম জুমার নামাজের সালাম ফেরানোর পর পরই মালিবাগ মুসলিম যুবসমাজ নামে একটি ব্যানারে মুসল্লিরা বিক্ষোভ শুরু করেন। শুরুতে তারা মসজিদ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে আস্তে-আস্তে মিছিলটি রাস্তায় নেমে পড়ে। এক পর্যায়ে মিছিলটি মালিবাগের দিকে এগোতে থাকে। তখন পুলিশ তাদের নাইটিঙ্গেল মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। মুসল্লিদের এই ব্যানারে হেফাজতে ইসলামসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের অংশ নিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভ মিছিল থেকে কোরান অবমাননাকারীদের শাস্তির দাবির পাশাপাশি হেফাজতে ইসলামের নেতাদের মুক্তির দাবিতে স্লোগানও দেয়া হয়। বিক্ষোভকারীরা সরকার নাস্তিকদের হেফাজত করছে এমন অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদের ওপর হামলা ও তাদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ জানায়, সাধারণত বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে যেসব বিক্ষোভ হয়, সেগুলোর নেতৃত্ব কোন না কোন সংগঠন কিংবা রাজনৈতিক দল দিয়ে থাকে। কিন্তু আজকের (শুক্রবার) এই বিক্ষোভে প্রকাশ্যে কেউ নেতৃত্বে ছিলেন না। তাই মিছিলটি নিয়ন্ত্রণে আনতে কিছুটা বেগ পেতে হয়েছে। মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) আঃ আহাদ জানান, পরিস্থিতির অবনতি যাতে না ঘটে এবং অন্য কোন গোষ্ঠী যেন সাধারণ মুসল্লিদের বিক্ষোভ মিছিলকে ব্যবহার করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে, সেজন্য পুলিশ শুরু থেকে শান্তিপূর্ণভাবে নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। নাইটিঙ্গেল মোড়ে আসার পর বিক্ষোভকারীদের কেউ কেউ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। তখন পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের ধাওয়া দেয় এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। বেলা আড়াইটার পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। এরপর যান চলাচল শুরু হয়।

কুমিল্লায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লায় পূজামন্ডপের ঘটনাকে ঘিরে শুক্রবারও নগরীসহ বিভিন্ন উপজেলায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এছাড়া ছিল বিভিন্ন ধরনের গুজবও। শুক্রবার জুমার নামাজ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবী বিসর্জনকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর ছিল সতর্ক পাহারা। এছাড়া শহরের সড়কগুলোতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র‌্যাব-বিজিবি-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল ও কড়া নজরদারি লক্ষ্য করা গেছে। পূজাম-পকে কেন্দ্র করে সংঘটিত ঘটনায় শুক্রবার পর্যন্ত জেলার ৩টি থানায় ৬টি মামলায় ৬৮৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশ ৪২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেছে। র‌্যাব-১১ কুমিল্লা ক্যাম্পের কমান্ডার মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান, এ ঘটনার ভিডিও-ছবি এডিটিং করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচারের করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী যুবক গোলাম মাওলাকে বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর কান্দিরপাড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মির্জাপুরে ৭ যুবক গ্রেফতার ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা মির্জাপুর থেকে জানান, দুর্গা মন্ডপে বিশৃঙ্খলা ও আলোকসজ্জার বাতি ভাংচুর করার অপরাধে ৭ যুবককে গ্রেফতার করেছে মির্জাপুর থানা পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে তাদের উপজেলা সদরের মির্জাপুর ও সরিষাদাইড় এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলেন সদরের পুষ্টকামুরী গ্রামের নূরুল ইসলামের ছেলে নাহিদ মিয়া (২৩), জালাল মিয়ার ছেলে রিফাত মিয়া (২০), দুলাল মিয়ার ছেলে মিহির মিয়া (২২), শহীদ মিয়ার ছেলে রনি মিয়া (২৫), রিপন মিয়ার ছেলে অনিক মিয়া (২১), বাইমহাটি গ্রামের আঃ মান্নানের ছেলে আবু নাইম (২৫) ও রাজনগর গ্রামের হেলাল দেওয়ানের ছেলে ইমরান (২০)। মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গিয়াস উদ্দিন জানান, গ্রেফতারকৃত ৭ আসামি বৃহস্পতিবার রাতে মির্জাপুর পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের লিটন কর্মকারের বাড়ির দুর্গা মন্ডপে গিয়ে ৮/১০ জন উচ্ছৃঙ্খল যুবক মদ্যপ অবস্থায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। একইভাবে তারা পাশের দুলাল কর্মকারের দুর্গা ম-পের গেট ও আলোকসজ্জার সব বাতি ভাংচুর করে। এদের মধ্যে ৭ জনকে গ্রেফতার করে টাঙ্গাইল কোর্টে পাঠানো হয়েছে বলে তিনি জানান।

নবীগঞ্জে সংঘর্ষ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা হবিগঞ্জ থেকে জানান, কুমিল্লায় ঘটনার জেরে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জে বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ওসিসহ ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত ৪ জনকে সিলেটে ও বাকিদের নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৪ অক্টোবর) রাত ৯টার দিকে জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার গুমগুমিয়া গ্রামে হরিবল ঠাকুর মন্দিরের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান ॥ স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, কুমিল্লায় সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সকলকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজার রাখার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া শীর্ষ উলামায়ে কেরামগণ। শুক্রবার দুপুরে পীববাড়ির জামিয়া দারুল আরকাম আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার হল রুমে আসন্ন ১২ রবিউল আওয়াল জশনে জুলুস থেকে বিরত থাকার বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান তারা।

নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ১৪৪ ধারা জারি॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, শুক্রবার দুপুরের পর নোয়াখালীর চৌমুহনীতে উচ্ছৃঙ্খল জনতা স্থানীয় কয়েকটি পূজামন্ডপে হামলা চালায়। এতে চার পুলিশসহ অন্তত ৪০জন আহত হয়। হামলার সময় একটি মন্ডপে যতন সাহা (৪০) নামে একজন ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী পৌরসভা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। শুক্রবার রাতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খান বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শনিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা চৌমুহনী পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

হার্ডলাইনে সরকার ॥ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির চক্রান্ত ব্যর্থ
Comments (0)
Add Comment