বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রপ্তানি পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণে আইনের মাধ্যমে একটি পৃথক কর্তৃপক্ষ গঠন করতে যাচ্ছে সরকার, যে আইনের খসড়ায় জালিয়াতি করে বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে রপ্তানি পণ্যের সনদ গ্রহণের বিষয়টিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো ব্যক্তি প্রথমবার এ ধরনের অপরাধ করলে অনধিক ১ লাখ টাকা জরিমানা অথবা এক বছরের কারাদন্ড এবং দুবার একই অপরাধের জন্য ৩ লাখ টাকা জরিমানা বা দুই বছরের কারাদন্ডের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, রপ্তানি পণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রণ, পরীক্ষণ ও সনদ প্রদান আইনের খসড়ায় প্রথমে একটি কাউন্সিল গঠনের সিদ্ধান্ত হলেও পর্যালোচনা সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে কর্তৃপক্ষ গঠনের। সম্প্রতি আইনের খসড়াটি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে সভা হয়।
সভার সভাপতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) হাফিজুর রহমান সেখানে বলেন, আইনটিতে যে কাউন্সিলের কথা বলা হয়েছে, তার পরিবর্তে কর্তৃপক্ষ করা হলে অধিক যুক্তিযুক্ত হবে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি নতুন নতুন পণ্য রপ্তানি করতে গিয়ে মান নিয়ন্ত্রণ জটিলতাসহ নানা সমস্যায় পড়ছে দেশীয় পণ্য। দেশের মান নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ বিএসটিআই সাধারণ পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সনদ দিলেও অনেক দেশ সেই সনদ গ্রহণ করে না। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে এখন আবার হালাল সার্টিফিকেশন দিতে হয়। এর ফলে সম্ভাবনা সত্ত্বেও অনেক দেশে পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না দেশীয় রপ্তানিকারকেরা। এ পরিপ্রেক্ষিতে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)-কে পণ্যের মাণ নিয়ন্ত্রণে একটি কাউন্সিল গঠনের জন্য আইনের খসড়া করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইপিবির সিইও ও ভাইস চেয়ারম্যান এ এইচ এম আহসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের অনেক খাদ্যপণ্য রপ্তানি হচ্ছে, যেগুলো রপ্তানির আগে অনেক দেশ নিশ্চয়তা চায় যে পণ্যটি মানুষের খাদ্যের জন্য উপযুক্ত (ফিট ফর হিউম্যান কনজাম্পশন)।
বিএসটিআই সাধারণভাবে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ সনদ দিলেও খাদ্যের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অর্থাৎ ফিট ফর হিউম্যান কনজাম্পশন সনদ দিতে পারে না। আইনের মাধ্যমে নতুন কর্তৃপক্ষ হলে এ ধরনের সনদ দেবে যাতে দেশীয় রপ্তানিকারকেরা খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানিতে কোনো ধরনের ঝামেলায় না পড়ে। নতুন কর্তৃপক্ষ হালাল পণ্যের সনদ দেবে কি-না এ প্রশ্নের উত্তরে ইপিবির ভাইস চেয়ারম্যান জানান, সম্প্রতি বিএসটিআই ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে মিলে হালাল পণ্যের সার্টিফিকেশন দেওয়া শুরু করেছে। এ কারণে খসড়া আইনে হালাল পণ্যের বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। তবে সরকার চাইলে এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেও হালাল সনদ দেওয়ার বিধান যুক্ত করতে পারে। খসড়া আইনে কর্তৃপক্ষের জন্য যে বোর্ড গঠনের প্রস্তাব রয়েছে সেখানে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের একজন প্রতিনিধি রাখার কথা বলা হয়েছে। আইনের খসড়ায় অবশ্য বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র সচিবের কথা বলা হয়েছে।
তবে পর্যালোচনা সভায় এটি সংশোধন করে বাণিজ্যমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করার প্রস্তাব করা হয়েছে। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে পরিচালিত হবে কর্তৃপক্ষের কার্যক্রম। তিনিই হবেন বোর্ডের সদস্য সচিব। এই কর্তৃপক্ষ যদি বিশ্বাস করে যে কোনো কোম্পানি বা এজেন্সি জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো পণ্য রপ্তানি করছে তবে সংশ্লিষ্ট রপ্তানি পণ্যের সনদ সংশোধন, বাতিল বা স্থগিত করতে পারবে। জালিয়াতি প্রমাণের জন্য রপ্তানিকারক কোম্পানি বা এজেন্সির হিসাব সংক্রান্ত দলিলপত্র তল্লাশি করতে পারবে। কোনো যানবাহনে (বিমান, মোটর ও নৌযান) বাজেয়াপ্তযোগ্য কোনো পণ্য রপ্তানি করলে ওই যানবাহন তল্লাশিরও ক্ষমতা থাকবে। এমন কি এই আইনে কোনো যানবাহন থামানোর প্রয়োজন পড়লে এবং বল প্রয়োগ করে সেটি থামাতে ব্যর্থ হলে প্রয়োজনে গুলি করে তা থামানোর ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।