নিজস্ব প্রতিনিধি : পাবনার ফরিদপুর উপজেলার এরশাদনগরে জমে ওঠেছে নৌকার হাট। স্থানীয়দের ভাষ্যে, দীর্ঘ তিন যুগেরও বেশি সময় ধরে চলে আসছে এই ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট। আকার ও প্রকার ভেদে বিক্রেতারা নৌকার দাম হাঁকছেন দুই থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত। প্রতিহাটে ২৫০ থেকে ৩০০ নৌকা বিক্রি হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। সে হিসেবে সপ্তাহে দুইদিন নৌকা বিক্রির মাধ্যমে এরশাদনগর হাটে লেনদেন হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষার আগমনে চলনবিলে বেড়েছে নৌকার কদর। চাহিদা বেশী থাকায় নৌকা তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিলপাড়ের নৌকার কারিগরেরা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় মুখর এরশাদনগরের এই নৌকার হাট। ভরা বর্ষায় থই থই জলে পথঘাট, খালবিল একাকার। চলনবিল অঞ্চলের মানুষের পারাপার আর মাছ ধরায় এখন একমাত্র ভরসা নৌকা। তাই সারা বছর অবহেলায় থাকা পুরনো নৌকাটি পেরেক ঠুকে, আলকাতরা মাখিয়ে চলছে ব্যবহার উপযোগী করার চেষ্টা। কেউ বা আবার ছুটছেন নৌকার হাটে। সপ্তাহে দুইদিন রোববার ও বুধবার জেলার ফরিদপুর উপজেলার বিয়েলবাড়ি ইউনিয়নের এরশাদনগরে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এই হাটের কার্যক্রম চলে।
ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিহাটে ২৫০ থেকে ৩০০ নৌকা এখান থেকে বিক্রি হয়। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। সে হিসেবে সপ্তাহে দুইদিন নৌকা বিক্রির মাধ্যমে এরশাদনগর হাটে লেনদেন হয় প্রায় ২৫ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাঠজুড়ে সারি সারি সাজিয়ে রাখা হয়েছে শত শত কোসা ও ডিঙি নৌকা। যেসব এলাকায় এরই মধ্যে বর্ষার পানি ঢুকেছে, সেখানকার মানুষের ভিড় সবচেয়ে বেশি। তবে নৌকার দাম অন্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর কষাকষি এই হাটের প্রাত্যাহিক চিত্র; যা চলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাইকাররাও এসে এখান থেকে ট্রলার, ট্রাক ও ভ্যানসহ বিভিন্ন যানে করে নৌকা নিয়ে যান।
শাহজাদপুর থেকে নৌকা কিনতে আসা আলী শেখ বলেন, প্রতি বছরই বর্ষার শুরুতে মাছ শিকার করার জন্য নৌকা কিনতে এ হাটে আসি। এ বছর নৌকার দাম কিছুটা বেশি। গতবছর যে নৌকা তিন হাজার টাকায় পাওয়া গেছে এ বছর একই নৌকার দাম নেওয়া হচ্ছে সাড়ে চার হাজার টাকা। নৌকার ব্যাপারী রঞ্জন বিশ্বাস বলেন, এই নৌকার হাট অনেক বছরের পুরোনো। পাবনার চাটমোহরের মির্জাপুর, হান্ডিয়াল, নুরনগর, নাটোরের গুরুদাসপুর, মান্নান নগর ও সিরাজগঞ্জের তাড়াশ থেকে মেহগনি, কড়ই, আম চাম্বল ও রেইনট্রি কাঠের শত শত নৌকা আসে। ”নৌকা তৈরির ব্যবহৃত কাঠ, লোহার পেরেকসহ শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির ফলে এ বছর নৌকার মূল্য কিছুটা বাড়তি’। এমন কথাই জানান রঞ্জন বিশ্বাস।
জেলার চাটমোহর এলাকার নৌকা তৈরির কারিগর শ্রী শঙ্কর জানান, বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এখান থেকে নৌকা কিনে বিভিন্ন হাটে নিয়ে বিক্রি করেন। ”চলাচল ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে খাল-বিল, চকে মাছ ধরার কাজে ব্যবহার করা হয় ডিঙি নৌকা। একটু বড় আকারের ডিঙি নিয়ে অনেকে নদীতে মাছ ধরতে যান। একটি নৌকা তৈরি করতে দু’জন মিস্ত্রীর অন্তত একদিন সময় লাগে। নৌকার সাইজ ও কাঠের ধরন ভেদে তিন থেকে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়’। পাবনা বিসিক শিল্প নগরীর উপ-মহাব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, নৌকা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য বহন করে। বর্ষায় নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বছরের নির্দিষ্ট সময়ে জেলার এই অঞ্চলে নৌকার হাট বসে। এখন আর আগের মতো নৌকার হাটের সেই জৌলুশ নেই। তিনি বলেন, আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে মানুষ এখন নৌপথে যাতায়াত কম করেন। তাই নৌকার চাহিদাও কম। এই শিল্পের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের তালিকা সংগ্রহ করে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের উদ্যোগসহ তাদের প্রণোদনার আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে।