বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাস ভাড়া নির্ধারণের পরও চলছে নৈরাজ্য। প্রতিটি রুটে নেওয়া হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এতে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীরা। তারা বুঝতে পারছেন না কোন বাস ডিজেলে, কোনটি সিএনজিতে চলে।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার রাজধানীতে অভিযান চালায় বিআরটিএ। পাশাপাশি তৎপর ছিল ডিএমপির মোবাইল কোর্ট। এদিকে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সিটিং-গেটলক বাস সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা।
জানা যায়, সরকারের নির্ধারণ করে দেওয়া তালিকার চেয়ে বাড়তি টাকা আদায় করায় এদিন রাজধানীর দুটি এলাকায় ১৮টি বাসকে জরিমানা করা হয়। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় মহানগর পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী হাকিম সঞ্জীব দাশ ১০টি বাসকে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
আর কলাবাগান ট্রাফিক বক্স এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক। অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ায় তিনি ৮টি বাসকে ১৮ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করেন। এ সময় আটজন চালকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়।
কলাবাগান সিগন্যালে অন্তত ২৫টি গাড়ি থামিয়ে বাড়তি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে কিনা এবং গাড়িতে বর্ধিত ভাড়ার তালিকা টানানো আছে কিনা পর্যবেক্ষণ করেন ম্যাজিস্ট্রেট। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রফিকুল হক বলেন, গণপরিবহণের নৈরাজ্য ঠেকাতে ডিএমপি, বিআরটিএ ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা রাজধানীসহ সারা দেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।
কলাবাগানে যেসব গাড়ি থামানো হয়েছে সেগুলোর অধিকাংশেই বর্ধিত ভাড়ার তালিকা পাওয়া যায়নি। তালিকা না থাকায় যাত্রীরা বুঝতে পারছেন না কোন জায়গা থেকে কোথায় ভাড়া কত? এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছেন চালক ও সুপারভাইজাররা। এমন অনিয়ম পেলেই মামলা দিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ডা. সঞ্জীব দাশ বলেন, বেলা ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। কিন্তু কোনটা সিএনজিচালিত এবং কোনটা ডিজেলচালিত গাড়ি তা বোঝা কষ্ট হয়ে দাঁড়ায়।
তাই গাড়িতে সিএনজি এবং ডিজেলচালিত স্টিকার লাগানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্টিকার লাগানো হলে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হবে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, আমরা মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে গিয়েছি। একাধিক বিষয়ে অভিযানকারীদের নির্দেশনা দিয়েছি। এ অভিযান আপাতত চলবে। বিআরটিএর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আমরা মূলত দেখছি মূল্য তালিকা টানানো হয়েছে কিনা, সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নিচ্ছে কিনা এবং গ্যাসে চালিত বাসে ডিজেলচালিত বাসের মতো বেশি ভাড়া নিচ্ছে কিনা।
সায়েন্স ল্যাব এলাকায় শাকিল আহমেদ নামে এক যাত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আগে মিরপুরের ভাড়া ছিল ২০ টাকা। এখন এ গাড়িতে আদায় করা হচ্ছে ৩০ টাকা।’ অন্য যাত্রীরাও বিভিন্ন পরিবহণের বিরুদ্ধে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করেন। সিটিং-গেটলক বাস সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা : ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের পরিপ্রেক্ষিতে ‘সিটিং’ ও ‘গেটলক’ বাস সার্ভিস বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন মালিকরা। তাদের যুক্তি, আইনে সিটিং সার্ভিস নেই।
এছাড়া বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় না করা, বাড়তি ভাড়া আদায় মনিটরিংয়ে ১১টি ভিজিল্যান্স টিম গঠন, সিএনজি ও ডিজেলচালিত বাসে পৃথক স্টিকার লাগানোসহ চারটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। এদিন ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এ সময় মালিকরা দাবি করেন, ঢাকা মহানগরী ও আশপাশে চলাচলরত ছয় হাজার বাসের মধ্যে মাত্র ১৯৬টি সিএনজিচালিত।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, সিটিং সার্ভিসে কোনো নিয়মনীতি নেই। তারা নিজের মতো করে যাত্রী পরিবহণ করে। এতে ভোগান্তি হয় যাত্রীদের। তাই সিটিং বা গেটলক সার্ভিস থাকবে না। বাস ভাড়া পুনর্নির্ধারণ ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন টেলিভিশনে বাস-মিনিবাসের ভাড়া পুনর্নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
বলা হচ্ছে, ঢাকা এবং দূরপাল্লার বাস-মিনিবাসের ৮০-৯০ শতাংশ সিএনজিচালিত। এসব বাসে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু আমরা ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় ১২০টি কোম্পানির মধ্যে মাত্র ১৩ কোম্পানির ১৯৬টি বাস সিএনজিচালিত পেয়েছি। এটি মোট গণপরিবহণের মাত্র ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। এনায়েত উল্যাহ জানান, আগামী তিন দিনের মধ্যে ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসে স্টিকার লাগানো হবে। আর অতিরিক্ত ভাড়া যাতে নিতে না পারে সেজন্য মালিক-শ্রমিকদের সমন্বয়ে ১১টি ভিজিল্যান্স টিম মাঠে থাকবে।