বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনা মহামারী মোকাবলো করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশকে আরও সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে জাতিসংঘ। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, করোনার মধ্যেও অর্থনৈতিক অগ্রগতি, নারীর কর্মসংস্থান ও নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রতি হয়েছে বাংলাদেশের। অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, জাতিসংঘের এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত হবে। কিন্তু এক্ষেত্রে জাতিসংঘের আরও সহায়তা বাড়ানো প্রয়োজন। জাতিসংঘ এক্ষেত্রে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। এছাড়া পৃথক আরেক সাক্ষাত অনুষ্ঠানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে এলডিসি উত্তরণের পরও শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো বিদায়ী সাক্ষাত করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে। ওই সময় দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, কোভিডকালীন অর্থনীতি এবং পুনরুদ্ধার, কর্মসংস্থান, নারীর উন্নয়ন, ক্ষমতায়ন ও সমতা অর্জনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। পরে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়েছে। ওই সময় আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবনের স্বপ্ন ছিল একটি দারিদ্র্য ও শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তোলা। জাতির পিতার সেই অর্থনৈতিক দর্শন অনুসরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বে গত এক দশক গড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এমনকি অপ্রত্যাশিত অভিঘাত কোভিড-১৯ মহামারীকালে গত বছর যেখানে বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে গেছে।
অর্থমন্ত্রী জানান, মহামারী করোনার এই ক্রান্তিকালেও কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশ শীর্ষ পাঁচটি সহনশীল অর্থনীতির মধ্যে রয়েছে। অতি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সভার টেকসই উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ২০২১-এ বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে এসডিজি প্রোগ্রেস এ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করেছে। বাংলাদেশের অগ্রগতির পথে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে জাতিসংঘ বরাবরের মতো সবসময় সহযোগী হিসেবে কাজ করবে বলে অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারের মর্যাদা পেয়েছে। দেশের অবকাঠামো খাতের দ্রæত উন্নয়ন হওয়ায় বাড়ছে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর এই সময়ে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারীর দেশগুলোর একটি অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া বাংলাদেশের সামনে মধ্যম আয় থেকে উচ্চ আয়ের দেশে পৌাঁছানোর লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছে। এ লক্ষ্যে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, রূপকল্প-২০৪১ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নের কাজও শুরু করে দিয়েছে সরকার। এসব স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন। এ কারণে জাতিসংঘের সহায়তা বাড়াতে হবে। অর্থমন্ত্রীর প্রত্যাশার ব্যাপারে মিয়া সেপ্পো জানান, এসডিজি অর্জনে বাংলাদেশের পাশে থাকবে জাতিসংঘ। বিশেষ করে দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মসংস্থান এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সহায়তা আরও বাড়ানো হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে জাতিসংঘের দীর্ঘ ক‚টনৈতিক সুসম্পর্কের ধারাবাহিকতা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে চার বছরের কর্মকাল তার জীবনে উজ্জ্বল স্মৃতি হয়ে থাকবে। তিনি ঢাকায় অবস্থানকালে সার্বিক সহযোগিতার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর ও অধিদফতরসহ দেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান।
এলডিসি অর্জনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহযোগিতা কামনা, এলডিসি অর্জনে রফতানি বাণিজ্য শুল্ক ও কোটামুক্ত সুুবিধা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সহযোগিতা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইলি সৌজন্য সাক্ষাত করেন। ওই সময় অর্থমন্ত্রী স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পরও বাংলাদেশের জন্য বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রদত্ত অগ্রাধিকার সুবিধাদি অব্যাহত রাখার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন সমন্বিতভাবে বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের সর্ববৃহৎ গন্তব্য। বাংলাদেশ বিনিয়োগের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। বাংলাদেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং তারা বাংলাদেশের উন্নয়নের অন্যতম আস্থাশীল অংশীদারে পরিণত হয়েছে।