বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : শিল্পকারখানা এবং বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে। এতে পোড়া রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে উদ্বেগজনক হারে। এসব রোগীর চিকিৎসাসহ পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের উন্নত চিকিৎসায় রাজধানীতে সেবা দিয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউট।
পোড়া রোগীর চিকিৎসা এবং প্লাস্টিক সার্জারিতে এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিশেষায়িত হাসপাতাল এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সারাদেশ থেকে আসা রোগীর চাপে চিকিৎসা এবং গবেষণা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে দেশে আরও ৫টি বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিট নির্মাণ করছে সরকার। দুর্ঘটনার পর দ্রুতই যাতে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় সে লক্ষ্যে ৫ বিভাগীয় শহরে এসব বার্ন ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে।
‘স্টাবলিশমেন্ট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট অ্যাট ফাইভ মেডিকেল কলেজ’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকারের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ। প্রকল্পের আওতায় সিলেট, বরিশাল, রংপুর, বরিশাল ও ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এই ৫ বার্ন ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে। পোড়া ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীরা সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্পন্ন চিকিৎসাসেবা দেওয়া প্রকল্পের উদ্দেশ্য। আধুনিক সুযোগ যন্ত্রপাতি ও উন্নত অবকাঠামো থাকবে এই ইউনিটগুলোতে। চিকিৎসক এবং নার্স মিলে প্রতিটি হাসপাতালে ১০০ করে লোকবলে শক্তিশালী বার্ন ইউনিট নির্মাণ করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আজ অনুষ্ঠেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে (একনেক) এই প্রকল্পটি অনুমোদন হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন। কমিশন বলেছে, প্রকল্পটির মাধ্যমে স্থানীয় জনগণ উন্নত মানের স্বাস্থ্য সেবা পাবেন। স্থানীয় পর্যায়ে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা পেলে স্বাস্থ্য খাতে আঞ্চলিক বৈষম্য কমবে। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের ওপর কিছুটা চাপ কমবে। এর মাধ্যমে সরকারের স্বাস্থ্য খাতও শক্তিশালী হবে। এ ছাড়া সরকারের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা মতো ২০৩০ সালের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়ন এবং সবার জন্য চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার আবুল কালাম সমকালকে বলেন, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ রোগী আসেন চিকিৎসা নিতে। প্রায় সমপরিমাণ রোগীর ভর্তিরও প্রয়োজন হয়। এদের ৯০ শতাংশকেই ভর্তি করানো সম্ভব হয় না। বিভাগীয় শহরগুলোতে বিশেষায়িত বার্ন ইউনিটের সেবা নিশ্চিত করা গেলে হাজারো রোগী হয়তো একটা সুস্থজীবন ফিরে পাবেন। তিনি বলেন, পোড়া রোগীদের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম ৪৮ ঘণ্টাকে গোল্ডেন আওয়ার হিসেবে ধরা হয় এ ক্ষেত্রে। এ সময়ের মধ্যে চিকিৎসা একটা পর্যায় পর্যন্ত এগিয়ে নেওয়া গেলে রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। স্থানীয়ভাবে বার্ন ইউনিট না থাকলে এটা সম্ভব নয়।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) নতুন প্রকল্পের তালিকায় নেই। তবে দেশের শিল্পকারখানা এবং বাসাবাড়িতে অগ্নিদুর্ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধির কারণে গুরুত্ব বিবেচনায় জরুরি প্রয়োজন হিসেবে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫৭ কোটি টাকা। এই অর্থের ২৫৪ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি)। বাকি ২০২ কোটি টাকা সরকারের নিজস্ব। আগামী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।