নারীরা সহযোদ্ধা, সহযোগী, সেই বিশ্বাস রাখতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে নানা ক্ষেত্রে মেয়েরা এখন নেতৃত্বের পর্যায়ে এগিয়ে এলেও নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ না হওয়ায় নিজের উদ্বেগের কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কেবল আইন করে যে এ সমস্যার সমাধান হবে না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সমাজের মানসিকতার পরিবর্তনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার বেগম রোকেয়া দিবসের অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, “যে জিনিসটা সব থেকে এখন আমাদের জন্য পীড়াদায়ক, সেটা হচ্ছে মেয়েদের উপর সহিংসতা। আমরা যদিও আইন করে দিয়েছি যেমন আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন করেছি, আমরা নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে আইন করেছি, আমরা পারিবারিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইন করে দিয়েছি। “শুধু আইন করলে হবে না, এখানে মানসিকতাটাও বদলাতে হবে। চিন্তা চেতনায় পরিবর্তন আনতে হবে এবং বিশ্বাসটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিনিস।”

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বিশ্বাসটা করতে হবে যে নারীরা শুধু ভোগের বস্তু না, নারীরা সহযোদ্ধা। নারীরা সহযোগী। সহযাত্রায় চলতে হবে। সমান অধিকার দিতে হবে। এটা হল বাস্তবতা।” ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে পাঁচ নারীকে চলতি বছরের রোকেয়া পদক দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে যুক্ত হন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে। তার পক্ষে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা পদক তুলে দেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরো অনেক নারী ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন দেশের বিভিন্ন এলাকায়। সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা অবদান রেখে চলেছেন। সরকার প্রতি বছর তাদের সম্মানিত করবে। নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার সাখাওয়াত হোসনের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে তার অবদান স্মরণ করে প্রতিবছর এ পুরস্কার দেয় বাংলাদেশ সরকার।

শেখ হাসিনা বলেন, “একজন নারী হিসেবে বেগম রোকেয়া আমাদের আদর্শ। কারণ সমাজের অচলায়তন ভেদ করে তিনি যদি শিক্ষার আলো না জ্বালতেন, তাহলে আজকে আমরা যতদূর এগোতে পেরেছি এটা পারতাম না। “তিনি আমাদের পথ দেখিয়ে গেছেন। তিনি আমাদেরকে আলোর পথে যাত্রা শুরু করিয়েছেন।”

১৮৮০ সালের ৯ ডিসেম্বর রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বেগম রোকেয়া। ১৯৩২ সালের একই দিনে কলকাতার সোদপুরে তার মৃত্যু হয়। রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার ব্যবস্থায় নারীর সমান অধিকারের জন্য আমৃত্যু লড়াই করেছেন মহিয়সী এই নারী। মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে নারীকে গৃহকোণে আবদ্ধ রাখার ধ্যান-ধারণা পাল্টাতে তিনি ছিলেন সোচ্চার। তার দেখিয়ে দেওয়া পথ ধরেই বাংলাদেশে নারীমুক্তি আন্দোলন চলছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “বেগম রোকেয়া যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আমি মনে করি, অনেকটাই আমরা সে স্বপ্ন পূরণ করতে সক্ষম হয়েছি।” রংপুরের পায়রাবন্দে বেগম রোকেয়ার বাড়িটি সংরক্ষণ করে সেখানে নারীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং রংপুরে তার নামে বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “দেশটা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সর্বক্ষেত্রে নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের বিমান, হেলিকপ্টারও নারীরা চালাচ্ছে। আমাদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের নারী অফিসার পুলিশ এবং আমাদের সেনাবাহিনী বা বিমান বাহিনীর মেয়েরা অত্যন্ত চমৎকার কাজ করছে।

“এখন আমাদের নারীদের অংশগ্রহণটা আমাদের স্বশস্ত্র বাহিনীতে বা পুলিশ বাহিনীতে, শান্তিরক্ষা মিশনে নারীদেরকে বেশি চায়। এটা হলো বাস্তবতা।” নারীরা এখন অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় গিয়েও যে কাজ করছে, সে কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “এটাই সব থেকে বড় কথা যে পুরুষরা যেটা পারে, নারীরা তার থেকে আরো ভালো পারে, বেশি পারে। তাতে কোনো সন্দেহ নাই। এবং সেটাই প্রমাণ হয়েছে।”

এ সময় রসিকতা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাই হোক, আমি বেশি বলব না, শেষে আবার দেখা যাবে যে পুরুষরা শেষে… আমার ভোট না কমে যায় আবার।… আমাদের তো ইলেকশন করে আসতে হয়, আমাদের সবদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার।” বলা হয় বাংলাদেশের সমাজ পুরুষশাসিত; কিন্তু মেয়েদের ছাড়া পুরুষ চলতে পারে কি না- সেই প্রশ্ন পুরুষদের কাছে রাখেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “সেই মায়ের পেটে জন্ম নিতে হয়, বোনের হাত ধরে হাঁটা শেখে, বড় হয়ে স্ত্রীর উপর নির্ভরশীল থাকে, বয়োবৃদ্ধ হয়ে গেলে তো কন্যা সন্তানই বেশি দেখে। সেই যত্ন নেয় বেশি।” নারীর উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশপাশি দেশকে এগিয়ে নিতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে বলেন প্রধানমন্ত্রী। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. সায়েদুল ইসলামসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী
Comments (0)
Add Comment