আহতরা হলেন- স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৪০), কলেজ শিক্ষার্থী ভাড়ারা গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে রিয়াদ হোসেন (২২), ভাড়ারা গ্রামের আলাউদ্দিনের ছেলে তুহিন আহমেদ (২৩), আব্দুর রহিম (৩৩), হোসেন আলী (৫০), রুবেল (৩০), নলদহ গ্রামের হিরা শেখের ছেলে আল্রেক শেখ (৪০), জসিম উদ্দিন (৩৫), আবু তালেব(৩২), তুহিন হোসেন (২৭) আব্দুল্লাহ(৩৫), লালু শেখ (৩৩) মোস্তফা(৪০), আল আমিন (২৮)। বাকিদের নাম-পরিচয় পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, সকালে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী (ঘোড়া মার্কা) সুলতান মাহমুদের সমর্থক ১৫/২০ নির্বাচনী প্রচারণায় বের হন। এ সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আবু সাঈদ খানের লোকজনের সাথে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। লোকজন মিছিল বের করলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে দুইপক্ষের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপানো হয়। এ সময় সুলতান মাহমুদের ভাতিজা স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলীসহ দুইপক্ষের অন্তত ২৫ জন গুরুতর আহত হয়। পরে তাদেরকে উদ্ধার করে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে ৬ জনকে রাজশাহী মেডিকেলে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ভাঁড়ারা ইউনিয়নের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী সুলতান মাহমুদ বলেন, গতরাত ১০ টার পরে সাঈদ চেয়ারম্যানসহ আমার যারা ভোট করছে অন্তত ৪/৫ জনের বাড়িতে গিয়ে সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে গুলি করে। আমার ভোট না করতে হুমকি দেয়। তখন থেকেই এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। পরে সকালে আহতদের আমার সমর্থকরা দেখতে গেলে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার লোকের উপর অতর্কিতভাবে হামলা চালিয়ে গুলি করে। ৭ জন গুলিবিদ্ধসহ ১৮/১৯ জনের মত আহত হয়েছে। ভোটের শুরু থেকেই বর্তমান চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে। এই ঘটনায় অনেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনে হেরে যাওয়ায় আশঙ্কায় প্রতীক পাওয়ার পর থেকে নৌকার লোকজন ভোট চাইতে দিচ্ছে না। নির্বাচনী পোস্টার ছেঁড়া থেকে শুরু করে অফিস ভাঙচুরসহ আমাকে বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আমি শঙ্কার মধ্যে আছি।
তবে আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী আবু সাঈদ খান বলেন, রাতে আমার লোকজন নৌকার ভোট চাইতে গেলে কালাম মেম্বরকে সুলতানের লোকজন হাতুরি পেটা করলে সকালে আমি তাকে দেখতে যাই। ফিরে আসার পথে কোলাদী ইন্দ্রারা মোড়ে আসলে সিএনজিতে করে এসে জয় বাংলা শ্লোগান দিয়ে সুলতানের লোকজন আমাদের উপর বৃষ্টির মত গুলি করে। এসময় আমাকে চতুরদিক থেকে ঘিরে ধরলে আমার ছোট ভাইয়ের পায়ে গুলিবিদ্ধ হয়। এ সময় আমি পাশের ড্রেনে লাফিয়ে না পড়লে আমাকে তারা হত্যা করত। এ ঘটনায় আমার ১০/১২ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে। এ ঘটনায় সঠিক বিচার চান তিনি।
পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিকস কনসালটেন্ট ডা. রাশেদুল ইসলাম বলেন, আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। কয়েকজনকে রাজশাহী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ১০/১২ জনের এই হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
পাবনা সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম জানান, ভাড়ারা ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। অন্তত ৮/১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। কয়েকজন আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, লোক মুকে শুনেছি আহত এক চপয়ারম্যান প্রার্তী মারা গেছেন।
আহত ইয়াছিন আলমকে নিয়ে যাওয়া এম্বুলেন্স ড্রাইভার জনি মৃত্যুর বিসয়টি নিশ্চিত করে জানান, বনপাড়া নামক স্থান অতিক্রম করার সময়ে তিনি মারা গেছেন। তারা লাশ নিয়ে পাবনায় ফিরছেন।
পাবনা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা না করতে সব প্রার্থীকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি কোনো প্রার্থীর লোকজন হামলা চালায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, আগামী ২৬ ডিসেম্বর চতুর্থ ধাপে পাবনার সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।