বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সারাদেশে নিবন্ধিত গণপরিবহন আছে ৪৯ লাখ ৭১ হাজার ৫৩৫৩টি। যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ২০ ধরনের যানের কোনটি কীসে চলে তার কোনও হিসাব নেই সরকারের কাছে। ফলে জ্বালানি পরিকল্পনা প্রণয়ন কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে এ সংক্রান্ত জরিপ করা হবে। জ্বালানি বিভাগ থেকে উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
জ্বালানি বিভাগ সূত্র বলছে, সম্প্রতি ডিজেলের দাম বেড়ে যাওয়ার পর সিএনজিচালিত বাসের ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে যাত্রী ও বাস মালিকরা পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়েছে। তবু কমছে না যাত্রী ভোগান্তি।
গত ২২ নভেম্বর জ্বালানি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরিবহনে জ্বালানি ব্যবহারের ধরন চিহ্নিত করার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি জ্বালানি বিভাগের এক বৈঠকে হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সংসদীয় কমিটিতে উত্থাপিত বিষয়টিকে ধরে এ সংক্রান্ত জরিপ করার প্রস্তাব দেন। বৈঠকে জ্বালানি সচিব মো. আনিছুর রহমান একটি প্রতিবেদন দ্রুত জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, এখন ডিজেল ছাড়াও সিএনজি, পেট্রোল, অকটেন, অটোগ্যাস ও বিদ্যুতের ব্যবহার হচ্ছে। পেট্রোল ও অকটেনচালিত কিছু গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ের কথা ভেবে অটোগ্যাসে রূপান্তর করছে। আবার সিএনজি দিয়ে যেসব গাড়ি চালানো যায় সেগুলোও অটোগ্যাসে রূপান্তর করা হচ্ছে। সারাদেশে ব্যাপকভাবে সরকার অটোগ্যাসের সম্প্রসারণের কথা চিন্তা করছে। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দেশে অটোগ্যাস স্টেশন নির্মাণ করছে। ফলে জ্বালানি ব্যবহারের ধরনে পরিবর্তন আসছে।
দেশে যে পরিমাণ ডিজেল প্রতি বছর আমদানি করা হয় তার বেশিরভাগই পরিবহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ফলে সরকারের যদি জানা না থাকে কোন পরিবহন কী জ্বালানিতে চলছে, তবে জ্বালানি পরিকল্পনা সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। এতে কোনও জ্বালানির আধিক্য সৃষ্টি হতে পারে, আবার সংকটও হতে পারে। ফলে জ্বালানি ব্যবহারের ভিত্তিতে পরিবহনের জরিপ জরুরি।
দ্রুত এই জরিপ করা সম্ভব কিনা জানতে চাইলে একটি সূত্র জানায়, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) কাছে নিবন্ধিত পরিবহনের একটি সংখ্যা রয়েছে। নিবন্ধনের সময় একটি পৃথক ঘরে জ্বালানির ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়টি যোগ করা যেতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাইড্রোকার্বন ইউনিটের মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রস্তাবটি তৈরি করে বিআরটিএ (বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ)-এর কাছে চিঠি দিয়েছি। সঙ্গে স্থায়ী কমিটির সুপারিশ, মন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্তও জানিয়েছি। ই-নথির মাধ্যমে বিআরটিএ-এর চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠিতে তাদের কাছ থেকে পরিবহনের তালিকা ও কোন জ্বালানিতে কী পরিমাণ যান চলে তা জানতে চেয়েছি।’ তিনি বলেন, আমরা কোনও সময় উল্লেখ করিনি। আশা করছি তারা দ্রুত উদ্যোগ নেবেন।
বিআরটিএ সূত্র বলছে, ১০ বছরে দেশে নিবন্ধিত যান বেড়েছে ৩৫ লাখ ৪৪ হাজার ১৬৭টি। এ তালিকায় মোটরসাইকেল থেকে ট্রাক্টর সবই রয়েছে। তবে এসবের মধ্যে বিদ্যুৎচালিত কোনও পরিবহন নেই। কার্বন নিঃসরণ কমাতে সরকার বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের ওপর জোর দিলেও দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের অবকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি। আগামীতে এই খাত বিকশিত হলে যানবাহনে জ্বালানির ব্যবহারেও ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। তরল জ্বালানিতে এক কিলোমিটার যাতায়াতে খরচ হয় ৯-১০ টাকা। বৈদ্যুতিক গাড়িতে খরচ পড়বে ৫০ পয়সা।