বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে ২০২০ সালে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কমেছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। এতে বলা হয়েছে, গত বছর বাংলাদেশে তিনটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটলেও, কোনো প্রাণহানি হয়নি।
প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়, বরাবরের মতো বাংলাদেশভিত্তিক সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আইএস কিংবা আল-কায়েদার মতো আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীদের যোগসূত্র নেই বলে দাবি করে আসছে সরকার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২০১৯ সালে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে ৭ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। এটি এখন আপিল বিভাগে আছে। ২০১৬ সালে হোলি আর্টিজান বেকারিতে চালানো ওই হামলায় এক আমেরিকান নাগরিকসহ ২০ জন নিহত হন। হামলাকারীদের দাবি, তারা জঙ্গি সংগঠন আইএসের সঙ্গে সম্পৃক্ত।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতা, যা বৈশ্বিক মহামারজনিত সংকটে আরও প্রকট আকার নিয়েছে, সন্ত্রাসবাদের মামলাগুলোয় দশকব্যাপী জট তৈরি করেছে। এসব মামলায় রায় প্রদানের হার ১৫ শতাংশ। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। জানুয়ারিতে কাউন্টার টেরিরিজম এজেন্সিকে আরও শক্তিশালী করতে বাংলাদেশ সরকার নতুন একটি ইউনিট গঠন করেছে।
২০২০ সালে বাংলাদেশে সংগঠিত সন্ত্রাসী হামলা ২৮ ফেব্রুয়ারি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে চট্টগ্রাম নগরীর একটি পুলিশ চৌকির কাছে। ৩১ জুলাই নওগাঁ জেলার একটি হিন্দু মন্দিরে হামলা হয়, যেখানে একটি ঘরে তৈরি বোমা পাতা হয়। দুটি হামলার জন্যেই আইসিস দায় স্বীকার করে। চট্টগ্রামের হামলায় দুজন পুলিশ সদস্য এবং একজন বেসামরিক ব্যক্তি আহত হন। নওগাঁর হামলায় কেউ হতাহত হননি।
২৪ জুলাই আইসিস-অনুপ্রাণিত তৃতীয় হামলায় ঢাকার গুলিস্তানে একটি পুলিশের মোটরসাইকেলে ছোট একটি আইইডি পাতা হয়। পরে যা ভুয়া (ফেক) বলে প্রমানিত হয়।
আইন প্রণয়ন, আইন প্রয়োগ এবং সীমান্ত নিরাপত্তা : প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইন সংশোধন করা হয় ২০১২ ও ২০১৩ সালে। ওই আইন অপরাধ বিচার ব্যবস্থায় পুরোদমে প্রয়োগ হতে থাকে ২০২০ সালেও। এই আইনের আওতায় সাতটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বেশ কিছু মামলার বিচার শুরু হয়। এসব মামলার মধ্যে আছে ২০১৫ সালে ব্লগার ও বিজ্ঞানবিষয়ক লেখক অনন্ত বিজয় দাশ হত্যা মামলা। এই হত্যার দায় স্বীকার করে আল কায়েদাপন্থি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলাম।
নিজ সীমান্ত ও বন্দর নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করেছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মহল ঢাকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। কে-৯ নামের একটি ইউনিটকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়েছে। তারা বিমানবন্দরে নিরাপত্তা দিচ্ছে। যদিও সেখানে তাদের উপস্থিতি স্থায়ী নয়।
এতে বলা হয়েছে, ইন্টারপোলের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শেয়ার করলেও, সন্ত্রাসী তালিকা দিতে পারেনি ঢাকা। চিহ্নিত কিংবা সন্দেহভাজন সন্ত্রাসী তালিকা করতে বাংলাদেশকে কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জাতিসংঘের অধীনে মাদক ও অপরাধ দমনে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে জাতীয় পর্যায়ে কর্মশালার আয়োজন করেছে বাংলাদেশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানায় নিয়মিত অভিযান চালিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষিত তদন্তকারী দল বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে সিলেটের হযরত শাহ জালাল (র.) মাজারে হামলা ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে। আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী সিলেট থেকে নওগাঁ ও চট্টগ্রামে হামলায় জড়িত ছয় জনকে গ্রেপ্তার করেছে।