বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রায় ৭০ হাজার নারী শ্রমিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব ও জর্দানসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। অথচ ২০২০ সালে এই সংখ্যা ছিলো মাত্র ২২ হাজার। চলতি বছরের নভেম্বর মাসে রেকর্ড-সংখ্যক ১১ হাজারের মতো নারী শ্রমিক গেছে। আর জুলাই মাসে গেছে সর্বনিম্ন। তবে বিদেশে পাড়ি জমানো বেশির ভাগ নারী শ্রমিকের ভাষার দক্ষতা ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ নিয়ে অবলেহার অভিযোগ রয়েছে ।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ব্যুরোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, নারী শ্রমিক প্রেরণের আগে তাদেরকে সঠিকভাবে ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে কি না সে ব্যাপারে সারা দেশে থাকা টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টারের (টিটিসি) দায়িত্বশীলদের আরো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কারণ তাদের অনেকে ঠিকভাবে ঢাকার বিমানবন্দরেই কথা বলতে পারছে না। বিদেশ যাওয়ার পর তাদের কী অবস্থা হতে পারে?
গতকাল রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক মো: ফখরুল আলম নয়া দিগন্তকে এ প্রসঙ্গে বলেন, বিদেশ যাওয়ার পর যেসব নারী শ্রমিক এক বছরের মধ্যে কোনো কারণে দেশে ফেরত আসছে, আমরা তাদেরকে (নির্যাতিত, নিপিড়িত) ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তহবিল থেকে বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন হওয়ার আগেই ডেস্ক থেকে পাঁচ হাজার করে টাকা দিচ্ছি। এই টাকা দিয়ে তারা যার যার বাড়িতে যেতে পারছে। নির্ধারিত সময়ের আগে তারা কেন দেশে ফিরছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এদের অনেকের অনেক ধরনের সমস্যা আছে। তবে কেউ প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে এসে ফেরত আসা প্রসঙ্গে লিখিত অভিযোগ দিচ্ছে না। যদিও কেউ দিয়ে থাকে সেটি অনেক কম। তবে তাদের (নারী) কথায় যেটা বোঝা যাচ্ছে, সেটি হচ্ছে, তারা যে গৃহকর্তার বাড়িতে কাজ করতে গিয়েছিল, সেখানে হতে পারে ভাষার কারণে এডজাস্ট করতে পারেনি। এডজাস্ট না হওয়ার কারণে তাদের নির্ধারিত সময়ের আগে দেশে ফেরত আসতে হচ্ছে বলে আমার মনে হচ্ছে। চলতি বছরের ১১ মাসে বাংলাদেশ থেকে ৭০ হাজারের মতো নারী শ্রমিক কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিদেশে গেছে। এটা অবশ্যই ভালো সংবাদ। এমন খবরের প্রতিক্রিয়ায় বিমানবন্দর প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের সহকারী পরিচালক ফখরুল আলম এ প্রতিবেদককে বলেন, ভালো সংবাদ অবশ্যই।
তবে আরো ভালো হতো যদি এদেরকে বিদেশ যাওয়ার আগে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে পাঠানো হতো। তিনি বলেন, নারী শ্রমিকদের বিদেশে যাওয়ার আগে ঢাকাসহ সারা দেশের টিটিসিগুলোতে এক মাসের ভাষা প্রশিক্ষণ করানো বাধ্যতামূলক; কিন্তু তারা সেই প্রশিক্ষণ মনে হয় সঠিকভাবে নিচ্ছে না। প্রশিক্ষণকে ঠিকভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে না। উদাহারণ দিয়ে তিনি বলেন, বিদেশের নিয়োগকর্তা এক গ্লাস পানি চাইলো; কিন্তু আমাদের নারী কর্মী সেটি না বুঝে বাড়ির দরজার গেট খুলে দিলো। এমন আরো অনেক ধরনের সমস্যা রয়েছে। যেগুলো তাদের ট্রেনিং দিয়ে বোঝানো উচিত। তা ছাড়া যারা যাচ্ছে তাদের মধ্যে অনেকেরই স্মার্টনেস নেই। ক্যাপাবল নয়। বলতে পারেন গণহারে শুধু নারী কর্মী বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এর জন্য তাহলে কী করা উচিত জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, নারী কর্র্মী বিদেশে যাওয়ার আগে তাদেরকে অবশ্যই সঠিক প্রশিক্ষণ নিতে হবে। এখন সারা দেশে থাকা জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর অধীনস্থ টিটিসিগুলোতে নারী কর্মীদের গুরুত্বের সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তারপর সার্টিফিকেট দেয়া উচিত। এর জন্য রিক্রুটিং এজেন্সির পাশাপাশি বিএমইটি’র যেসব কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তাদেরকে আরো দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। নারীরা যাতে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারে সে জন্য অবশ্যই তাদের মনিটরিংও বাড়াতে হবে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যেসব নারী শ্রমিক নির্ধারিত মেয়াদের আগে দেশে ফিরছে তারা বিমানবন্দরে তার ডেস্কে লিখিত অভিযোগ খুব একটা দিচ্ছে না। যদিও পরবর্তী সময়ে দেশের বিএমইটি’র অফিসগুলোতে অভিযোগ দিয়ে আমাদের ব্যুরো থেকে প্রতিটা ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়ে থাকে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬৮ হাজার ৫৭৯ জন নারী কর্মী বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। এর মধ্যে সৌদি আরবেই গেছে ৪৬ হাজার ৩৬১ জন। এরপর জর্দানে ১১ হাজার ৬৯৭ এবং ওমানে সাত হাজার ৬৪৫ জন। কাতারে এক হাজার ৭৯৫, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৬০৫ জন, লেবাননে ৯৯ জন, কুয়েতে ১৫ জন, সিঙ্গাপুরে ১৯ জন এবং মালয়েশিয়ায় তিনজন। সবমিলিয়ে ১১ মাসে ৬৮ হাজার ৫৭৯ জন নারী কর্মী বিদেশে গেছেন।