বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা বাড়াতে একটি চুক্তি এবং দুটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাশাপাশি বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে গতকাল দেশটির প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সলিহর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর দুই নেতার উপস্থিতিতে এসব চুক্তি-সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর ও হস্তান্তর হয়। বৈঠকের পর দুই নেতার যৌথ বিবৃতিতে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে সহযোগিতা আরও জোরদার করার প্রত্যয় ঘোষিত হয়েছে। বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দিয়েছে মালদ্বীপ। পরে মালদ্বীপের পার্লামেন্টে ভাষণ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
বুধবার মালদ্বীপে পৌঁছানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে মালেতে প্রেসিডেন্টের দফতরে পৌঁছালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহাম্মদ সোলিহ তাকে স্বাগত জানান। সেখানে লাল গালিচা সংবর্ধনার পর গার্ড অব অনার এবং গান স্যালুটে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রী দুই দেশের ‘লাইন অব প্রেজেন্টেশন’ পরিদর্শন করেন এবং প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন। পরে দুই দেশের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে নেতৃত্ব দেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সোলিহ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ অন্যরা ছিলেন। পরে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের দুই শীর্ষ নেতার উপস্থিতিতে স্বাক্ষর হয় চুক্তি ও সমঝোতা। এর মধ্যে চুক্তিটি করা হয়েছে দুই দেশের আন্তবাণিজ্যে দ্বৈত কর পরিহারের লক্ষ্যে। স্বাস্থ্যসেবা সহযোগিতা এবং বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসক পাঠানোর বিষয়ে যে সমঝোতা স্মারক মালদ্বীপের সঙ্গে ছিল, তার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া দুই দেশের যুব ও ক্রীড়া উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে আরেকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে মালদ্বীপকে ১৩টি সামরিক যান উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। এ অনুষ্ঠানে সেগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়। পরে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও যোগাযোগ উন্নয়নের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সলিহর সঙ্গে তার বিশদ আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, যুব ও ক্রীড়া, মৎস্য ও কৃষি খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদার করতে তারা সম্মত হয়েছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং রোহিঙ্গাদের দ্রুত মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে একসঙ্গে কাজ করতেও সম্মত হয়েছেন তারা। দুই দেশের মধ্যে একটি অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) এবং পারস্পরিক বিনিয়োগ সুবিধার জন্য একটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর বৈঠকে জোর দিয়েছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সুযোগ থাকার পরও আমরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে এখনো পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এ কথা জানাতে পেরে আনন্দিত যে আমরা আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সামগ্রিক বিষয়ে অত্যন্ত ফলপ্রসূ আলোচনা করেছি। আমরা আমাদের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছি এবং ফলাফল সন্তোষজনক পেয়েছি। বহুপক্ষীয় ফোরামে সহযোগিতা, একে অপরের প্রার্থীদের সমর্থন দেওয়া এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতার বিষয়েও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, এটা অত্যন্ত সন্তুষ্টির বিষয় যে বাংলাদেশ থেকে স্বাস্থ্য পেশাজীবীদের নিয়োগের জন্য মালদ্বীপের প্রস্তাব বাংলাদেশ গ্রহণ করেছে। আমরা মালদ্বীপের ছাত্রদের জন্য বিশেষায়িত স্নাতকোত্তর মেডিকেল কোর্সের সুযোগ তৈরি করব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি, সরাসরি ফ্লাইটের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে যোগাযোগ এবং পর্যটন সহযোগিতার আদান-প্রদান বৃদ্ধি পাবে। আমরা একটি সরাসরি শিপিং লাইন স্থাপনের সম্ভাবনাও পর্যালোচনা করছি। কনস্যুলার ও কমিউনিটির সমস্যাগুলো দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় প্রাধান্য পেয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনিবন্ধিত বাংলাদেশি কর্মীদের নিবন্ধনের বিষয়টি মালদ্বীপ আলোচনায় তুলেছে। বাংলাদেশ মালদ্বীপের নাগরিকদের জন্য ‘অন অ্যারাইভাল ভিসা’ ব্যবস্থা চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহ বলেছেন, দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের সফর বিনিময়ের মধ্য দিয়ে এ বছর বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে।
বিকালে রাজধানী মালের হোটেল জিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মালদ্বীপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফয়সাল নাসিম, পার্লামেন্টের স্পিকার মোহাম্মদ নাশিদ এবং দেশটির প্রধান বিচারপতি উজ আহমেদ মুতাসিম আদনান। এসব সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে মালদ্বীপের পার্লামেন্টে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের উষ্ণ সম্পর্কের কথা তুলে ধরেন এবং মালদ্বীপের সরকারি-বেসরকারি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। সন্ধ্যায় মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট এবং ফার্স্ট লেডির দেওয়া ভোজ সভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। আজ শুক্রবার তিনি মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন। সফর শেষে ২৭ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকা ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।