বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রমজান মাসে পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবার বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সে অনুযায়ী, সংস্থার পক্ষ থেকে গত কয়েকবারের তুলনায় এবার ভর্তুকি মূল্যে বিপুল পরিমাণে পণ্য বিক্রি করা হবে। এ জন্য টিসিবির গুদামে পণ্য মজুত করতে সম্প্রতি সয়াবিন তেল, চিনি ও মসুর ডাল কিনতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পাশাপাশি টিসিবির পণ্য কালোবাজারে বিক্রি রোধেও বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সোমবার টিসিবি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
টিসিবির দরপত্রে বলা হয়েছে, রমজান ঘিরে ট্রাক সেল বিক্রি কার্যক্রমের জন্য নতুন মজুত গড়তে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ জন্য টিসিবি ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে। এছাড়া পাঁচ হাজার টন পরিশোধিত চিনি কেনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মজুত বাড়াতে আরও চার হাজার টন মসুর ডাল কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। টিসিবি সূত্র জানায়, এবার রমজান গত কয়েকবারের তুলনায় বিপুল পরিমাণে তেল, চিনি, মসুর ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুর বিক্রি করা হবে। অধিক ক্রেতার কাছে ভর্তুকি মূল্যে এসব পণ্য পৌঁছে দিতে এ আয়োজন। যাতে এবার অন্যান্য বারের তুলনায় বাজারে চাপ কম পড়ে। যাতে পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে।
জানতে চাইলে টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির যুগান্তরকে বলেন, এবার রেকর্ড পরিমাণে টিসিবি খোলা বাজারে পণ্য বিক্রি করবে। সে জন্য রমজানের দুই থেকে তিন মাস আগে থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে পণ্য কিনে টিসিবির গুদামে মজুত করতে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করে পণ্য কেনা হবে। তারপর সেসব পণ্য অধিক ক্রেতার কাছে পৌঁছে দিতে টিসিবির ডিলারদের নির্দেশ দেওয়া হবে। আশা করি, এবার এ কার্যক্রম খুব ভালোভাবে সম্পন্ন করা হবে। আর সেভাবেই এবার মাঠে নামা হচ্ছে। কালোবাজারে যাতে এসব পণ্য বিক্রি না হতে পারে সে জন্যও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোনো ডিলার এ কাজে জড়িত থাকলে ডিলারশিপ বাদ করে টিসিবির পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, টিসিবির ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মাসব্যাপী ভর্তুকি মূল্যে চার পণ্য- সয়াবিন তেল, চিনি, মসুর ডাল ও পেঁয়াজ বিক্রি করা হচ্ছে। যা ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে। সেক্ষেত্রে সারা দেশ ৪০০-৪৫০টি ট্রাকের মাধ্যমে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। সেখানে সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১১০ টাকা, চিনি-৫৫ টাকা, মসুর ডালের কেজি ৬০ টাকা ও প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর রমজানে পণ্য কি দামে বিক্রি হবে তা পরে জানানো হবে।
জানতে চাইলে বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, রমজান ঘিরে টিসিবির পণ্য যাতে কালোবাজারে বিক্রি না হয়, সেক্ষেত্রে অধিদপ্তরের তদারকি টিম সার্বিকভাবে কাজ করবে। টিমের সদস্যরা রাজধানীসহ দেশের প্রত্যেকটি অঞ্চলে টিসিবির ট্রাক সেল কার্যক্রম পর্যালোচনা করবে। সরেজমিন গিয়ে গুদাম থেকে বিক্রির স্থান পর্যন্ত তদারকি করবে। রুটিনমাফিক তদারকির সঙ্গে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ সময় কোনো অনিয়ম পেলে সঙ্গে সঙ্গে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে টিসিবির আহ্বান করা দরপত্রে বলা হয়েছে, চিনি, সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল কেনার পর ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুর, বরিশাল, মৌলভীবাজার, ময়মনশিংহ, কুমিল্লাহ, মাদারীপুর, ঝিনাইদহ ও বগুড়ায় টিসিবির গুদামে রাখা হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান টিসিবিতে পণ্য সরবরাহ করবে তাদের সয়াবিন তেলের জন্য ৯০ লাখ টাকা জামানত রাখতে হবে। আর চিনি ও ও মসুর ডালের জন্য ৭০ লাখ টাকা জামানত রাখতে হবে। এই জামানত পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট কিংবা ব্যাংক গ্যারান্টি আকারে দাখিল করতে হবে। এতে সফল দরদাতাকে ৫ শতাংশ হিসাবে পারফরম্যান্স সিকিউরিটি (কার্জ সম্পাদন জামানত), পে-অর্ডার, ব্যাংক ড্রাফট ও ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে দেওয়া হবে। তবে আংশিক পরিমাণে পণ্য সরবরাহ প্রস্তাবের ক্ষেত্রে দরপত্র জামানত আনুপাতিক হারে নির্ধারিত হবে।
এছাড়া ৩০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ২ লিটার পেট বোতলে করে দিতে হবে। পাশাপাশি পাঁচ হাজার টন চিনি ৫০ কেজির বস্তায় সরবরাহ করতে হবে। আর চার হাজার টন মসুর ডাল ৫০ কেজি ওজনের বস্তায় সরবরাহ করতে হবে। চলতি বছরের ১৪ মার্চের মধ্যে সম্পূর্র্ণ পরিমাণ সয়াবিন তেল, মসুর ডাল ও চিনি সরবরাহ করতে হবে।