নিজস্ব প্রতিনিধি : এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রেমঘটিত, পরকীয়া, ধর্ষণের পর, পারিবারিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও নির্বাচন কেন্দ্রীয় সহিংসতায় পাবনা জেলায় গেল এক বছরে প্রায় অর্ধশত খুনের ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও সংঘাত, সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, মারামারি, চুরি, ছিনতাই, জখম, ডাকাতি, অপহরণের মতো নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড সংঘটিত হয়েছে।
সচেতন মহলে বিষয়টি উদ্বেগের ও হতাশা সৃষ্টি করেছে। তারা আইন শৃংখলা পরিস্থিতির মারাত্বক অবনতি হিসেবে দাবী করলেও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জেলায় গেল এক বছরে যতগুলো খুন, হত্যা বা জখমের মতো ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি ঘটনা দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্লু উদঘাটনসহ সংশ্লিষ্ট অপরাধে অভিযুক্ত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে আইনের দ্বারস্থ করা সম্ভব হয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, ৬ জানুয়ারি সকাল ৯ টায় পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের পাটেশ^র গ্রামে আকরাম আলী (৪০) নামে এক ঠিকাদারকে পিটিয়ে হত্যার খবর পাওয়া যায়। পুলিশ ওই এলাকার সরিষা ক্ষেত থেকে মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত আকরাম জেলার চাটমোহর উপজেলার কচুয়াগাড়িয়া গ্রামের মৃত আব্দুস সামাদের ছেলে। তিনি রাজমিস্ত্রির ঢালাই কাজের সাব ঠিকাদারের কাজ করতেন বলে পুলিশ জানায়। নিহত আকরাম আলীকে পিটিয়ে এবং মুখ থেতলে হত্যা করা হয়।
১৬ জানুয়ারি জেলার সাঁথিয়ায় জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে দুইজন নিহত হয়। বেলা ১১টার দিকে উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের নাড়িয়াগদাই বাজারে এ ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- কাশিয়াবাড়ী গ্রামের শামসুল মোল্লার ছেলে নাসির (৩০) এবং মেলাইপুর গ্রামের সাকাতের ছেলে মুন্নাফ (৪২)। জায়গা কিনে ঘর তোলাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
১৪ ফেব্রুয়ারি জেলা সদরের ভাড়ারা ইউনিয়নের আতাইকান্দি বাজারের ভূভির মোড়ে প্রতিপক্ষের গুলিতে আমিরুল ইসলাম (২৮) নামের এক আওয়ামী লীগ খুন হন। নিহত আমিরুল ভাঁড়ারা ইউনিয়নের কাথুলিয়া গ্রামের মন্তাজ বেপারীর ছেলে। তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের কর্মী ছিলেন।
১৮ মার্চ সকালে চাটমোহর উপজেলার পৌর এলাকার দোলং মহল্লার পাশে একটি বাগান থেকে যমুনা রানী (৫৫) নামের এক নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সে মৃত গোসাই সরকারের স্ত্রী। পুলিশের দাবী, নিহত যমুনা রানী সরকারকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তারই মাদকাসক্ত সন্তান স্বপন কুমার সরকার (২৭)। টাকা না পেয়ে মাকে শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ ওই বাগানে ফেলে রাখে।
২০ মার্চ চাটমোহর উপজেলার গুমানী নদীর ক্যানাল থেকে নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার পাকা গ্রামের কুরবান আলীর ছেলে পলাশ মিয়া (৪০) নামের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, তাকে কয়েকদিন আগে কুপিয়ে হত্যা করে লাশ ওই স্থানে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়।
২৫ মার্চ জেলার সাঁথিয়া উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের দয়ারামপুর গ্রামে পূর্ববিরোধ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে নাজির উদ্দিন (৩৭) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। সে দয়রামপুর গ্রামের ইলবাজ প্রামানিকের ছেলে।
৩১ মার্চ ঈশ্বরদী উপজেলার পৌর এলাকার চারা বটতলা স্কুলপাড়া মহল্লায় হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগমকে (৬৬) দূর্বৃত্তরা গলা কেটে হত্যা করে। ঘটনার রাতে ওই বৃদ্ধ মহিলা ঘরে একাই ছিলেন। সকালে কোন সাড়া না পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ গিয়ে গলাকাটা অবস্থায় মরদেহ উদ্ধার করে।
১ এপ্রিল জেলার সাঁথিয়া উপজেলার গৌরিগ্রাম ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধের জেরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আলহাজ শেখ (৩৫) নামে এক যুবক নিহত হয়। নিহত আলহাজ শেখ উপজেলার ঘুঘুদহ পূর্বপাড়া গ্রামের মানিক শেখের ছেলে এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি শরবেশ শেখের নাতি।
৫ এপ্রিল আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের গঙ্গারামপুর গ্রামে নিখোঁজের চারদিন পর শাহজাহান আলী (৩৫) নামে এক যুবদল নেতার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত শাহজাহান পাবনা শহরের শালগাড়িয়া মহল্লার তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে। তিনি জেলা যুবদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। গঙ্গারামপুর গ্রামের আবুল কাশেমের বাড়ির পেছনে টয়লেটের হাউজ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
২৯ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদীতে দিনে-দুপুরে মুক্তি খাতুন রিতা (২৮) নামে এক গৃহবধুকে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। দুপুর আড়াইটার দিকে পৌরসভা এলাকার মশুড়িয়াপাড়া এলাকার নিজ বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত মুক্তি খাতুন রিতা ওই এলাকার বায়োজিদ সারোয়ারের স্ত্রী। স্বামী বায়োজিদ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পাওয়ার প্লান্টে চাকরি করেন। রিতাকে হত্যার পর তার শাশুড়ি নিলিমা খাতুন বেনুকেও (৫২) শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয় বলে জানা গেছে। ওই সময় তিনি চিৎকার করলে হত্যাকারীরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
৩০ এপ্রিল জমি নিয়ে বিরোধে পাবনা সদর উপজেলার চরতারাপুরে রুবেল প্রামাণিক নামে এক যুবককে (৩২) কুপিয়ে হত্যা করেছে তার আপন দুই ভাই। দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রুবেল উপজেলার চরতারাপুর ইউনিয়নের নতুন টাটিপাড়া গ্রামের মোজাহার প্রামাণিকের ছেলে।
৮ মে পাবনা শহরের পৌর এলাকার দিলালপুর বড়বাজার এলাকায় পুরুষ ভিক্ষুকের ছুরিকাঘাতে আল্লাদী (৪৬) নামের এক নারী ভিক্ষুকের মৃত্যু হয়। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দিলালপুর পানির ট্যাংকির নিচে এ ঘটনা ঘটে। পূর্ববিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ডটি ঘটেছে বলে দাবি পুলিশের।
১৫ মে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলায় কানিজ ফাতেমা (২০) নামে এক গৃহবধুকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর মরদেহ ইছামতি নদীর ডোবায় ফেলে দেয় দূর্বৃত্তরা। পুলিশ এদিন বেলা ১১টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত কানিজ ফাতেমা বেড়া পৌর এলাকার মো. আব্দুল কাদেরের মেয়ে ও সাঁথিয়া পৌর এলাকার ফেসওয়ান গ্রামের চাঁদু শেখের ছেলে রাকিবুল ইসলামের স্ত্রী।
২০ মে পাবনা শহরের রাধানগর ডিগ্রি কলেজ বটতলা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রনি হোসেন ওরফে ভাইস্তে রনি (২৬) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রনি পৌর সদরের নারায়ণপুর মহল্লার মৃত জালাল হোসেনের ছেলে।
২০ মে পাবনার বেড়া উপজেলার আমিনপুর এলাকায় মন্টু শেখ (৫৫) নামে এক ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এছাড়াও সিগারেট কেনাকে কেন্দ্র করে স্বদেশ চন্দ্র সাহা (৫০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
২৮ মে ঈশ^রদী উপজেলার সরকারি কলেজের সামনে রূপনগর মাহাতাব কলোনীতে একটি ভাড়া বাসায় খুন হন কাপড় ব্যবসায়ী শাকিল হোসেন। সে উপজেলার মুলাডুলি ইউনিয়নের প্রতিরাজপুরের দুবলিয়া গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের ছেলে। ছোট ভাইয়ের সাথে তার স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে পরিকল্পিত খুনের শিকার হন বলে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে নিশ্চিত করে।
১০ জুন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার আতাইকুলা থানার মাধপুর গোছাইপাড়া গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে অটোরিক্সা চালক সেলিম হোসেন (২৫) ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। এ সময় ছিনতাইকারীরা তার পায়ের রগ কেটে হত্যা করে লাশ ফেলে রেখে যায়।
১১ জুন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ক্ষেতুপাড়া ইউনিয়নের ডাঙ্গা মাঝগ্রামে সূর্য্য খাতুন (৫০) নামে এক গৃহবদুর রহস্যজনকত মৃত্যু হয়। পরিবারের দাবী পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়। সে আব্দুল মাজেদের স্ত্রী।
২৪ জুন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার সাহাপুর ইউনিয়নের আওতাপাড়ার পশিশ্চমপাড়ায় মানিক সরদারের বাড়ি থেকে চাপা হোসেন (৩২) নামে এক প্রতিবন্ধী যুবককে ছুরিকাঘাত ও শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ছামেলা খাতুন (৪০) নামে এক নারীকে আটক করেছে পুলিশ। প্রতিবন্ধী যুবক চাটমোহরের বাসিন্দা বলে জানা যায়।
২৬ জুন পাবনার সুজানগর উপজেলার হাটখালী ইউনিয়নের ভাদুরভাগ গ্রামের একটি খালে কচুরিপানার ভেতর থেকে অজ্ঞাত তরুণীর বস্তাবন্দি অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ ও স্থানীয়দের ধারণা, অন্য কোথাও তরুণীকে হত্যা করে এখানে লাশ রেখে গেছে দূর্বৃত্তরা।
২৭ জুন পাবনা সদর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের চরপাড়া বাজার সংলগ্ন গ্রামের একটি মসজিদের সামনে থেকে পুলিশ বিল্লাল হোসেন (৩৮) নামে এক চরমপন্থি দলের আঞ্চলিক নেতার লাশ উদ্ধার করে। প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা নিশ্চিত করার পর চলে যায়। নিহত বিল্লাল হোসেন সাদুল্লাপুর ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের আব্দুল করিমের ছেলে। তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দল সর্বহারা পার্টির স্থানীয় নেতা ছিলেন।
৩ জুলাই পাবনা সদরের দোগাছি ইউনিয়নের দক্ষিণ রামপন্দ্রপুর গ্রামে প্রতিপক্ষের লোকজন কুপিয়ে ও গলা কেটে সুমন প্রামাণিক (৩৮) নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করে। সুমন দক্ষিণ রামচন্দ্রপুরের বাকি বিল্লাহ প্রামাণিকের ছেলে।
২০ আগস্ট পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল থেকে নিখোঁজের দুদিন পর সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ইমন হাসানের (১৬) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত ইমন হাসান উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের মাঝগগ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে। পরিবারের দাবি, তার অটোরিকশাটি ছিনতাইয়ের জন্য ইমনকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার দিন সকালে চাটমোহর-মান্নাননগর সড়কের হান্ডিয়াল দরাপপুর ব্রিজের পাশে বিলের পানিতে ভাসমান অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে।
২২ আগস্ট পাবনার বেড়া উপজেলার বাঙ্গাবাড়িয়ায় আপন ভাতিজার বিয়ে ভাঙাকে কেন্দ্র করে ভাতিজার হাতে চাচা হাতিম উদ্দিন (৫৮) নামের এক বৃদ্ধ নিহত হয়।
২৫ আগস্ট পাবনা সদর উপজেলার হামচিয়াপুর গ্রামে এক স্কুলছাত্রীকে (১৪) ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
১২ সেপ্টেম্বর পারিবারিক বিরোধের জেরে চাচাতো ভাইয়ের লাঠির আঘাতে বোন পারুল খাতুন (২৫) নিহত হয়। পাবনার ফরিদপুর উপজেলার দিঘুলিয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পারুল ওই গ্রামের আজেদুল ইসলামের স্ত্রী।
১৯ সেপ্টেম্বর পাবনা সদরের চরশিবরামপুর গ্রামে জমিজমা বিরোধে মোজাহার সরদার (৬৫) নামের এক বৃদ্ধকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত মোজাহার চরশিবরামপুর গ্রামের মৃত বিরাত সরদারের ছেলে।
২৩ সেপ্টেম্বর পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছায় পুলিশের ধাওয়ায় মজিবুর রহমান (৬৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। রাত ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মজিবুর রহমান মালিগাছা বাজারের বাসিন্দা। পুলিশের দাবী, পুলিশের ধাওয়ায় নয়, তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মজিবুর রহমান এলাকায় চিহ্নিত মাদক কারবারি। তার বিরুদ্ধে সদর থানায় কমপক্ষে ছয়টি মাদক মামলা রয়েছে।
১ অক্টোবর জমি সংক্রান্ত পারিবারিক বিরোধে পাবনা সদর উপজেলার ভাড়ারা ইউনিয়নের আতাইকান্দা গ্রামের আব্দুর রশিদ মোল্লা (৫৫) নামে এক গ্রাম্য চিকিৎসককে কুপিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের লোকজন। নিহত রশিদ ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আতাইকান্দা গ্রামের মৃত কিতাব মোল্লার ছেলে। তিনি গ্রাম্য চিকিৎসক ছিলেন।
২ অক্টোবর পাবনার ঈশ^রদী উপজেলার পাকশী রূপপুর ইউনিয়নের জিগাতলা গ্রামে মাদক বিক্রি ও সেবনে বাধা দেওয়ায় বিপ্লব ফকির (২৪) নামে এক যুবককে সারা রাত বেঁধে রেখে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। বিপ্লব উপজেলার পান্না ফকিরের ছেলে। তিনি পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন। তার এক বছর বয়সী একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
২৩ অক্টোবর পাবনা শহরের অন্তত বাজারে পারিবারিক বিরোধের জেরে বিশাল রায় (২২) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নিহত বিশাল দক্ষিণ রাঘবপুর গ্রামের ভরিকের ছেলে। তিনি শহরের বড় বাজারে সুইপারের কাজ করতেন।
৯ নভেম্বর পাবনার সুজানগর উপজেলায় ভায়না ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর সমর্থক ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হয় সবুজ হোসেন (২৮) এক যুবক। নিহত সবুজ চলনা গ্রামের হাশেম আলীর ছেলে।
১৬ নভেম্বর পাবনা সদরের মালিগাছা ইউনিয়নের ফলিয়া গ্রামে হামিদা খাতুন (৩২) নামের এক গৃহবধুকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে ওই গ্রামের তেজেম মোল্লার স্ত্রী। স্বামীর পরকীয়া বাঁধা দেয়ায় নিহত গৃহবধুর শরীর থেকে এক হাত ও দুই পা বিচ্ছিন্ন করে এই খুনের ঘটনা ঘটানো হয় বলে পুলিশ ও নিহতের স্বজেনরা জানান।
১৬ নভেম্বর পাবনার ভাঙ্গুড়ার উপজেলার খানমরিচ ইউনিয়নের হেলেঞ্চা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর স্ত্রী আইরন নেছা (৬২০ কে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে তারই আপন মেয়ে ও জামাইয়ের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় পুলিশ মেয়ে রেবেকা খাতুনকে গ্রেপ্তার করে।
২০ নভেম্বর পাবনা সাঁথিয়া উপজেলার বনগ্রাম গাঙ্গহাটির বামনডাঙ্গা গ্রামের হারুন প্রধানের ছেলে কৌশিক হোসেন (১৪) নামে এক কিশোরকে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে হত্যা করে। কৌশিক মিয়াপুর হাজী জসিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ রাস্তার পাশের একটি মেহগনি গাছের বাগান থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
চার দিনের ব্যবধানে পাবনা সদর, ঈশ^রদী ও সাঁথিয়াতে ৫ জনের আত্মহত্যার ঘটনাটি বেশ চাঞ্চল্যের সৃস্টি করে। পাবনা ২০ নভেম্বর ফেসবুক ব্যবহারকে কেন্দ্র করে বিবাদে পাবনার সাঁথিয়ায় স্বামী-স্ত্রী কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। মৃতরা হলেন; সাঁথিয়া উপজেলার মানপুর গ্রামের মানিক হোসেনের মেয়ে মারিয়া খাতুন (১৮) ও একই উপজেলার কল্যাণপুর গ্রামের রমজান আলী ব্যাপারীর ছেলে রাকিব ব্যাপারী (২৫)।
২২ নভেম্বর পাবনা মানসিক হাসপতালে শাহনাজ বেগম (৩৩) নামে এক রোগী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। ভোরে হাসপতালের মহিলা ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শাহনাজ বেগম জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার পিংনা পশ্চিমপাড়া গ্রামের লাল চান মিয়ার স্ত্রী। হাসপাতালে ভর্তির একদিনের মাথায় তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এদিকে ২৫ নভেম্বর পাবনার ঈশ্বরদীতে ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ (ইউল্যাব) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী বাবুপাড়া রেলকলোনীর মৃত ফজলুল হকের ছেলে সোহেল আফ্রিদি (২৩) ও পৌরসভাধীন রহিমপুর এলাকার রেজউল করিমের ছেলে মনির হোসেন (১৮)। একজন স্ত্রীর সাথে সম্পর্কের অবনতি আর অন্যজন প্রেমঘটিত কারণে আত্মহত্যা করে।
১১ ডিসেম্বর পাবনা সদর উপজেলার ভাঁড়ারা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইয়াসিন আলম (৪০) নিহত হন। এ দিন সকালে ইউনিয়নের চারা বটতলার ইন্দারা মোড় কালুরপাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
১৩ ডিসেম্বর পাবনা সদরের চরতারাপুর ইউনিয়নের চরতারাপুর বাজারে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের সময়ে মোবাইলে ভিডিও ধারণকালে দূর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে প্রাণ যায় নাসিম হোসেন (১৭) নামের এক যুবকের। সে সদরের আটঘরিয়াপাড়া গ্রামের নায়েব আলীর ছেলে।
১৩ ডিসেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া নওদাপাড়া এলাকা থেকে কলেজ ছাত্র হৃদয় হোসেনের (২৪) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১০ ডিসেম্বর তাকে অপহরণ করা হয়। মুক্তিপণের ৪০ লাখ টাকা না পেয়ে তাকে অপহরণকারীরা হত্যা করে বলে জানা যায়।
১৮ ডিসেম্বর পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার দেবোত্তর ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপের সংঘর্ষে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থক সেলিম হোসেনকে (৩৫) পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে। নিহত সেলিম ইউনিয়নের শ্রীকান্তপুর গ্রামে জমসেদ আলীর ছেলে ও জেলা কৃষক লীগের সদস্য।
২১ ডিসেম্বর পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের মুনসিদপুর গ্রামের রাউল রহমানের স্ত্রী শারমীন শিলাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে সুমন আলী নামের এক যুবক এলোপাথারী কুপিয়ে হত্যা করে। এ সময় তার স্বামী রানাউল রহমানও গুরুতর আহত হন।
২৮ ডিসেম্বর পাবনা সদর উপজেলার হেমায়েতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে হেরে গিয়ে আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী মঞ্জুরুল ইসলাম মধুর কর্মি, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা শামিম হোসেনকে (৪০) গুলি করে হত্যা করেছে বলে জানা যায়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে ইউনিয়নের নাজিরপুর হাটপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত শামীম ওই এলাকার নুর আলী প্রামাণিকের ছেলে এবং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের প্রচার সম্পাদক।
পাবনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিবুল ইসলাম খান জানান, আমি পাবনাতে যোগদানের পর হত্যা, খুন, জখমসহ বিভিন্ন ধরণের অপরাধ প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। আগের তুলনায় এখন অপরাধ অনেক কমে এসেছে। ইতোমধ্যে প্রায় শতভাগ অপরাধের কারণ, অভিযুক্তদের সনাক্ত ও আইনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে। অপরাধ দমনে শুধু পুলিশ বাহিনী বা আইনশৃংখলা বাহিনী নয়, পাশাপাশি সকল শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতা প্রয়োজন এমন দাবী জানান পুলিশের এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা।