বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমাতে ইতোমধ্যেই সরকার ১৩টি নির্দেশনা জারি করেছে। সেই নির্দেশনা অমান্য করে যেকোনো ধরনের জনসমাগম বা সামাজিক অনুষ্ঠান শনাক্ত করতে প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ। পাশাপাশি নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক সাজা এবং তদন্ত সাপেক্ষে মামলা দায়েরেরও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশে দিনকে দিন বেড়েই চলেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। সরকারের তরফ থেকে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুই সপ্তাহের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অফিসগুলোতে অর্ধেক লোক কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
অথচ সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে সচেতনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দেশ ও দেশবাসীর স্বার্থে করোনাকালীন সময়ে কঠোর নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। সূত্রটি বলছে, নির্দেশনার মধ্যে আছে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, কোনো ধরনের গণসমাগম না করা, গণপরিবহণে চলাচলের ক্ষেত্রে বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা, বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করা, মাস্কবিহীন কোনো ব্যক্তিকে সেবা না দিতে প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি অফিসের সামনে নোটিশ টানিয়ে দেওয়াসহ ১৩টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে সরকারের তরফ থেকে। সূত্রটি আরও জানিয়েছে, গোপনে অনেকেই জনসমাগম করছেন। বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজনও হচ্ছে গোপনে। নানা ধর্র্মীয় অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হচ্ছে পুলিশ বা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই। এতে করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে। একশ’র বেশি লোক সমাগম না করার জন্য সরকারের তরফ থেকে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা জারি হয়েছে।
সেখানে দেশের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠানের নামে শত শত মানুষের জমায়েত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানাতে প্রয়োজনে জেল জরিমানাও করা হচ্ছে। তাতেও অবস্থার তেমন উন্নতি হচ্ছে না। বিশেষ বিশেষ এলাকায় ড্রোন ব্যবহারের চিন্তাভাবনা করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ঢাকা ও চট্টগ্রামে স্বল্প পরিসরে ড্রোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও পরিকল্পনা বিভাগের উপমহাপরিদর্শক মো. হায়দার আলী খান যায়যায়দিনকে বলেন, গোপনে অনেকেই গণজমায়েত করছে বলে আমাদের কাছেও তথ্য আছে। অনেকেই আবার বিয়েসহ নানা সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও গণজমায়েত করছেন। নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মাধ্যমেও গণজমায়েত হওয়ার তথ্য মিলছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনি। গণজমায়েত করার আগে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের তরফ থেকে অনুমতি নেয়ার কথা থাকলেও, তা নেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে যেকোনো ধরনের গণজমায়েতকারীদের ও গণজমায়েতের স্থান চিহ্নিত করতে প্রয়োজনে ড্রোন ব্যবহার করা হবে।
যদিও ড্রোন উড়ানোর জন্য সুনির্দিষ্টভাবে পুলিশের কোনো অনুমতি নেই। তবে দেশ ও দেশবাসীর স্বার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অনুমতি নিয়ে প্রয়োজনে সেটিও করা হবে। নানা অনুষ্ঠানের নামে গণজমায়েতকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। সরকারি নির্দেশনা অমান্যকারীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল জরিমানার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে মামলা দায়ের করা হবে। প্রয়োজনে সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম আরও বাড়ানো হবে। র্ যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমিয়ে আনতে ফ্রন্টলাইনার হিসেবে আমরা কাজ করছি। তবে মানুষের মধ্যে সরকারি নির্দেশনা মানার প্রবণতা কম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যা খুবই আতঙ্কের বিষয়। মানুষকে সচেতন করার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনা অমান্যদের বিরুদ্ধের্ যাবের চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত সারাদেশে কাজ করছে। ভুয়া চিকিৎসক থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রেই চারটি ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়েই আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। অথচ বাহিনীটির ১৩ জন ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে সমপরিমাণ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার কথা। তারপরেও সীমিত সংখ্যক ফোর্স আর ভ্রাম্যমাণ আদালত দিয়েই করোনাভাইরাসে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে আমরা যথাসাধ্য কাজ করে যাচ্ছি। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, ‘আমরা সরকারি নির্দেশনা মানুষকে মানানোর চেষ্টা করছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে। নির্দেশনা না মানার কারণে অনেককে জেল জরিমানাও করা হয়েছে। আমি মানুষকে আরও সচেতন ও সরকারি নির্দেশনা মানানোর ক্ষেত্রে ২০ জন ম্যাজিস্ট্রেট চেয়েছিলাম।
কিন্তু এত ম্যাজিস্টেট না থাকায় স্বল্প সংখ্যক ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।’ ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, রাস্তায় দেখা যায় অধিকাংশ মানুষই নূ্যনতম মাস্ক পর্যন্ত পরতে চায় না। নানা অজুহাত দেখায়, মাস্ক না পরার ক্ষেত্রে। অথচ এটি ওইসব ব্যক্তিদের ভালোর জন্যই বলা হয়। সচেতনতা ব্যতীত কাউকে নির্দেশনা মানতে বাধ্য করাটা কঠিন কাজ। তবে আমাদের তরফ থেকে করোনাভাইরাসের নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রণে আক্রান্ত ও মৃতু্য হার কমাতে ঢাকার বিভিন্ন স্থাপনা ও তার আশপাশে জীবাণুনাশক ওষুধ ও পানি ছিটানো অব্যাহত আছে। তিনি আরও বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এবং করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে লঞ্চ, বাস ও রেলস্টেশনসহ বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে সচেতনতামূলক মাইকিং করা অব্যাহত রয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মো. ফারুক হোসেন যায়যায়দিনকে বলেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে মাত্র একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যে হারে ওমিক্রনের সংক্রমণ বাড়ছে, সে তুলনায় মানুষকে সচেতন করতে বা আইনগত পদক্ষেপ নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না।