বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনে কেন্দ্রীয় শহিদমিনার ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। মূল বেদিসহ সংলগ্ন এলাকা রং করা হয়েছে। রাস্তার পাশের দেওয়ালে ভাষা আন্দোলন নিয়ে লেখা কবিতা ও স্লোগান শোভা পাচ্ছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। সিসিটিভির মাধ্যমে সমগ্র এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
এবারও করোনাভাইরাস মহামারির কারণে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিবসটি পালন করা হবে। বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের সময় লোকসংখ্যা নির্দিষ্ট ও মাস্ক পরাসহ বেশ কয়েকটি শর্ত দেওয়া হয়েছে। শনিবার বিকালে কেন্দ্রীয় শহিদমিনার পরিদর্শন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান। দিবসটিতে ভাবগম্ভীর পরিবেশ বজায় রাখতে তিনি ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, একুশের প্রথম প্রহরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের উদ্দেশে কেন্দ্রীয় শহিদমিনারের বেদিমূল প্রস্তুত করা হচ্ছে এবং যথাসময়ে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও সুশৃঙ্খলভাবে পালনে সংশ্লিষ্ট সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন তিনি। বিকালে শহিদমিনার এলাকায় দেখা যায়, অমর একুশে পালনের প্রস্তুতির প্রায় ৮৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। প্রায় দেড়শ স্বেচ্ছাসেবী আল্পনা আঁকার কাজ করছেন। এর আগে বেদি ও এর আশপাশের স্থানগুলো ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হয়। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ঢাবির কাজী মোতাহার হোসেন ভবনের সামনে র্যাব, পুলিশ ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে সিসিটিভির মাধ্যমে সমগ্র এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে জনসমাগম এড়াতে গত বছরের মতো এবারও সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে সর্বোচ্চ পাঁচজন ও ব্যক্তিপর্যায়ে সর্বোচ্চ দুইজন একসঙ্গে শহিদমিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সবাইকে অবশ্যই যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে পলাশী মোড় থেকে শহিদমিনার পর্যন্ত রাস্তায় ৩ ফুট পরপর চিহ্ন থাকবে। এ চিহ্ন অনুসরণ করে সবাই পর্যায়ক্রমে শহিদমিনারে যাবেন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। বিভিন্ন প্রবেশপথে স্বেচ্ছাসেবকরা হ্যান্ডমাইক দিয়ে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ জানাবেন।
সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে অমর একুশে উদ্যাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটির সমন্বয়কারী ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, আমাদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। শহিদবেদিতে প্রাথমিক রং করার কাজ শেষ হয়েছে। এখন আল্পনা আঁকার কাজ চলছে। এক কথায় বলতে গেলে ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখন শুধু সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোয় আমাদের প্রচুর জনসমাগম হয়েছে। এবার করোনার কারণে ভিড় এড়াতে এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক (বিএনসিসি, রোভার স্কাউট) থাকবেন। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
শহিদমিনারে ৬ স্তরের নিরাপত্তা : ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে ছয় স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম। শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় শহিদমিনারের নিরাপত্তাব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা জানান। তিনি বলেন, শহিদমিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের জন্য নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি থাকবে না। ইউনিফর্ম পরিহিত সদস্যের পাশাপাশি সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন থাকবে। এর পাশাপাশি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডিবি, র্যাব ও সোয়াত টিম দায়িত্ব পালন করবে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, শহিদমিনারকেন্দ্রিক রাস্তাগুলোর প্রতিটিতে পুলিশের চেকপোস্ট থাকবে। চেকপোস্টের বাইরে ও ভেতরে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে আসবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে যথাযথ নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তারা আসবেন-বিষয়টি মাথায় রেখেই সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। করোনার কারণে এবারও কিছু বিধিনিষেধ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধিগুলো সবাইকে মেনে চলার অনুরোধ জানানো হবে। দিবসটি পালনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ শেষে পরিবারের কাছে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং পরিবারের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন করতে হবে। তিনি বলেন, শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় কেউ কোনো ধরনের ব্যাগ বহন করতে পারবে না। নিজের মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ প্রতি বছর শহিদমিনার এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক মোবাইল ফোন চুরি হয়।
যেভাবে যাবেন শহিদমিনারে : ভাষাশহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে প্রবেশে বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা ট্রাফিক বিভাগ। এদিন ঢাবি এলাকায় হেঁটে প্রবেশ করতে হবে। ট্রাফিক বিভাগকে সহায়তার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে-পলাশী মোড় হয়ে জগন্নাথ হল ক্রসিং দিয়ে শহিদমিনারে প্রবেশ করতে হবে। এছাড়া দোয়েল চত্বর দিয়ে বের হতে হবে। এছাড়া বকশীবাজার থেকে জগন্নাথ হল ক্রসিং, চানখারপুল থেকে রোমানা চত্বর সড়ক, টিএসসি থেকে শিববাড়ি ক্রসিং চত্বর, উপাচার্য ভবন থেকে ভাস্কর্য ক্রসিং সড়ক দিয়ে প্রবেশ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কাঁটাবন মোড়, শাহবাগ মোড়, নীলক্ষেত মোড়, টিএসসি সড়ক দ্বীপ, দোয়েল চত্বর মোড়, হাইকোর্ট মোড়, শহীদুল্লাহ হল মোড়, রোমানা চত্বর মোড় ও ফুলার রোড মোড়ে ব্যারিকেড থাকবে।