ইউক্রেন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ইউক্রেনে মোট কতজন বাংলাদেশি আছেন তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সর্বোচ্চ ৫০০ বাংলাদেশি আছেন। বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশটিতে সর্বোচ্চ দেড় হাজার বাংলাদেশি আছেন। অন্যদিকে, প্রবাসী এই বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদেরকে পোল্যান্ড হয়ে দেশে ফেরার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের কাছে যতটুকু খবর আছে, প্রায় ৫০০ জন বাংলাদেশি সেখানে অবস্থান করছেন। এরমধ্যে প্রায় ২৫০ জনকে নিয়ে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আমাদের পোল্যান্ড মিশন সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছে। ইউক্রেনের প্রবাসীদের পোল্যান্ড আসার জন্য আমরা ব্যবস্থা করছি। পোল্যান্ড যেন তাদের অন অ্যারাইভাল ভিসা দেয়, আমরা সেটা অনুরোধ করেছি। পোল্যান্ডে বাংলাদেশিদের জন্য দুই সপ্তাহের ভিসা দেওয়া হতে পারে। পোল্যান্ডে বেশ কয়েকটি জায়গায় তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেখান থেকে তাদেরকে বিশেষ বিমান পাঠিয়ে আনা যায় কিনা, সেটি আমরা আলোচনা করছি। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে সিভিল এভিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘এ কাজে সহায়তা করার জন্য ইটালি এবং জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে কূটনীতিকদের পোল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে।’ইউক্রেনে বাংলাদেশ দূতাবাস না থাকায় পোল্যান্ডের ওয়ার্সে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ইউক্রেণ দেখভাল করা হয়। পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকেও পাওয়া সম্ভব হয়নি। রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লার আগে জেষ্ঠ্য কূটনীতিক মো. মাহফুজুর রহমান পোল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। মো. মাহফুজুর রহমান বৃহস্পতিবার সময়ের আলোকে বলেন, ‘ইউক্রেনে কয়েকশ’র বেশি বাংলাদেশি থাকার কথা নয়। রাশিয়ায় যখন বিশ্বকাপ ফুটবল হয়েছিল তখন অনেকেই বিশ্বকাপ দেখার জন্য রাশিয়ায় এসে ইউক্রেনে ঢুকেছিল ইউরোপের দেশে যাওয়ার জন্য। তাদের মধ্যে একটা অংশ ইউক্রেনের নিরাপত্তাকর্মীর হাতে ধরা পড়ে জেলে ছিল। সেই সংখ্যাটাও কয়েকশ’র বেশি না।’

‘বাংলাদেশিদের এখনই ইউক্রেন ছাড়ার প্রয়োজন নেই’, এই কথা উল্লেখ করে মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘আশা করছি শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা হবে। তাই বাংলাদেশিরা এখনই ইউক্রেন না ছাড়লেই ভালো। কেননা একবার যদি ছেড়ে চলে আসে তবে পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে ঢোকা খুব কঠিন হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইউক্রেনে যে সকল বাংলাদেশি আছেন তাদের বেশিরভাগই ব্যবসায়ী এবং শিক্ষার্থী।’ কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, পোল্যান্ডে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস প্রতিনিয়ত ইউক্রেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। একাধিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে গ্রুপ খোলা হয়েছে। যেখানে নিরাপদে অবস্থান বিষয়ে সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি পোল্যান্ডে সিমান্তে আসার জন্য ট্রাভেল পারমিটসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের জরুরি ফরম সরকরাহ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া দূতাবাসের একাধিক বার্তা এই প্রতিবেদক দেখার সুযোগ পেয়েছে।

বার্তাগুলোর মধ্যে রয়েছে, ‘যাদের পাসপোর্ট সাথে নেই তারা ট্রাভেল পারমিটের জন্য দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করুন, ট্রাভেল পাস এই মূহর্তে আপনাদের জন্য আইডি হিসেবে কাজ করবে’, ‘সবাই সাবধানে বড়ো শহর ত্যাগ করার চেষ্টা করুন, যদি পূর্বাঞ্চল থেকে বের হয়ে পশ্চিম দিকে আসতে না পারেন কোনো কারণে’, ‘এইটা ট্রাভেল পারমিটের ফর্ম। এইটা পূর্ন করে পাসপোর্টের কপিসহ পাঠিয়ে দিন’, ‘যাদের পাসপোর্টের মেয়াদ আছে তাদের ট্রাভেল পারমিটের প্রয়োজন নেই’, ‘যাদের কাছে পাসপোর্ট নেই তাদের ট্রাভেল পারমিটের প্রয়োজন’ ইত্যাদি।

ইউক্রেন প্রবাসী বাংলাদেশি জনাব মাহবুব ৩৫ বছর ধরে ইউক্রেনে ব্যবসা করছেন। তিনি বৃহস্পতিবার রাতে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘ইউক্রেনে এখন যুদ্ধ চলছে। আমি আমার বাসাতেই আছি। অনেক প্রবাসী বাংলাদেশি ইউক্রেন ছেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। তবে আপাতত আমি ইউক্রেন ছাড়তে চাচ্ছি না। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে দেশের দূতাবাস প্রতিনিয়ত যোগাযোগ রাখছে। এখানে সর্বোচ্চ দেড় হাজার বাংলাদেশি রয়েছে।’ বাংলাদেশ সরকার বলেছে যে পোল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত আসলে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রবাসীদের দেশে ফিরতে সহযোগিতা করবে, এই তথ্য জানালে জনাব মাহবুব বলেন, ‘হুম এটা আমাদেরও জানানো হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন যে পোল্যান্ড সীমান্ত পর্যন্ত আসা খুব কঠিন।’

ইউক্রেন প্রবাসী ইসলাম গাওসুল শাহীন গত ৩০ বছর ধরে দেশটিতে ব্যবসা করছেন। তিনি সময়ের আলোকে বলেন, ‘ইউক্রেনে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে, কেউই বাসা থেকে হতে পারছে না। বাংলাদেশিরা নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছে, কিন্তু চারদিকেই বিপদ। তবে পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাস সবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ইউক্রেনে হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাই।’

ইউক্রেনইউক্রেন থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেশে ফেরাতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার
Comments (0)
Add Comment