বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক :করোনা মহামারীর সময় ঘরবন্দী হয়ে থাকা মানুষের দুয়ারে নিত্যপণ্যসহ খাবার, ওষুধ, পোশাক এবং এমনকি কাঁচাবাজারও পৌঁছে দিয়েছে বিভিন্ন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান। এর আগে অনলাইন কেনাকাটা শহরকেন্দ্রিক থাকলেও করোনায় সেটি গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। ই-কমার্সে সম্পৃক্ত হয় মুদি দোকানী, ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও। বেড়ে যায় ঘরে বসে সেবার পাওয়ার চাহিদা। আর সেজন্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যস্ততা বাড়ে, ব্যবসা ভালো হয়। আর এই সুযোগে এই খাতে গজিয়ে উঠা ব্যবসায়ী, প্রতারণার মানসিকতায় সম্পৃক্ত হওয়া, গ্রাহকদের অতিলোভের কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় সম্ভাবনাময় এই খাতে। আর এদের অনৈতিক কর্মকান্ড ও প্রতারণার কারণে গ্রাহকদের আস্থা হারিয়েছে অনলাইন কেনাকাটার প্রতিষ্ঠানগুলো।
মানুষের চাহিদার সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান চটকদার বিজ্ঞাপন ও মনভোলানো প্রতিশ্রæতির আড়ালে নির্বিচার প্রতারণা শুরু করে। তারা বাজারমূল্যের চেয়ে অনেক কম দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে মানুষের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। এসব টাকা কেউ পাচার করেছেন দেশের বাইরে, কেউবা আত্মসাৎ করেছেন নিজেরাই। অন্যদিকে গ্রাহকদের দিনের পর দিন পণ্য না দিয়ে দিয়েছেন আশ্বাস। তবে এবার আর আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে নারাজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ই-কমার্স খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হার্ডলাইনে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইআইটি) এএইচএম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, যেসব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে গ্রাহকদের অভিযোগ আছে, ৩১ মার্চের পর তাদের বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে যাবে সরকার। তাদেরকে সরকারি সহায়তার শেষ তারিখ হলো ৩১ মার্চ। এর মধ্যে যদি তারা সাহায্যের জন্য আসে তাহলে আমরা তাদের সর্বাত্মক সাহায্য করবো। একই সঙ্গে তাদের ব্যাংকিং সমস্যাগুলো সমাধানের চেষ্টা করবো। কিন্তু এরপর আমরা আর তাদের বাইরে দেখতে চাই না। তাদের জেলের ভেতর দেখতে চাই।
ই-কমার্স খাতে প্রতারণার প্রথম অভিযোগ উঠে ইভ্যালির বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটির গ্রাহকের কাছে হাজার কোটি টাকা দেনার বিপরীতে মূলধন মাত্র ৬১ কোটি টাকা। বাকী টাকা কোথায় তার কোন সদুত্তর নেই। এরপর একে একে বের হতে থাকে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, সিরাজগঞ্জ শপ, রিং আইডি, কিউকম, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিডস, দালাল প্লাস, বাজাজ কালেকশন, টুয়েন্টিফোর টিকেট ডট কম, গ্রিন বাংলা, এক্সিলেন্ট ওয়ার্ল্ড এ্যাগ্রো ফুড এন্ড কনজ্যুমারস, গিøটার্স আরএসটি ওয়ার্ল্ডসহ অস্যংখ্য প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার তথ্য। এর মধ্যে ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী। তবে প্রতারণার মাধ্যমে যাদের অর্থ আত্মসাৎ করা হয়েছে সেই গ্রাহকরা আদৌও তাদের টাকা ফেরত পাবে কিনা সে বিষয়ে নেই কোন নিশ্চয়তা।
এরই মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা উদ্যোগের পর গত ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো ৭ থেকে ৮ হাজার গ্রাহকের মধ্যে ৯ জনের টাকা ফেরত দিয়েছে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্ট। এরপর গতকাল অর্থ পরিশোধ করার পরও যারা পণ্য হাতে পাননি দালাল প্লাসের এমন ১০ গ্রাহক ১৭ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন।
এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, ই-কমার্সের যে অস্থির অবস্থা, সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে আমরা বেরিয়ে আসছি। কিন্তু একটা জিনিস বলতে চাই। যারা এখানে বিনিয়োগ করেছে তাদের বলতে চাই, অনেকেই ধৈর্য হারা হয়ে গেছেন, ধৈর্য হারা হলেই যে ১০ দিনের মধ্যে ঠিক করে দেবো, বিষয়টা এত সহজ নয়। এখানে অনেক জটিলতা রয়েছে। যেমন- কিছু টাকা দেশের বাইরে চলে গেছে, সে টাকা ফেরত আনতে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। তিনি বলেন, কিছু টাকা এসএসএল, হস্টার বা অন্য পেমেন্ট গেটওয়েতে আছে। তারচেয়ে গ্রাহকদের দাবি অনেক অনেক বেশি। সেক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসছে তাদের নিজস্ব কিছু সম্পত্তি দিয়ে সমন্বয় করার চেষ্টা করছে। আমাদের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যে টিম কাজ করছে তাদের মূল ফোকাস হচ্ছে আমরা এদের রিহ্যাব করতে চাই। তারা যাতে ব্যবসায় ফেরত আসতে পারে সেটাই আমাদের লক্ষ্য।
সরকার আসলে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানকে সাপোর্ট করতে চায় উল্লেখ করে অতিরিক্ত সচিব বলেন, তাদের এ সাপোর্টটা গ্রহণ করা দরকার। গ্রাহকদের যে টাকা আটকে আছে সেটা ফেরত দিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। সেটা নিয়েই আমরা কাজ করছি। তবে এ কাজের একটা শেষ আছে। আমরা সারা বছর এ কাজ করতে পারবো না। এজন্য ৩১ মার্চ পর্যন্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিগুলোকে সুযোগ দিচ্ছি। তারা যোগাযোগ করে একটা প্রসেসের মধ্যে আসুক।
তিনি আরও বলেন, ৩১ মার্চের মধ্যে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান কোনোভাবে যোগাযোগ না করে বা তাদের প্রতিনিধি যদি এখানে পজিটিভভাবে না আসে, সে ক্ষেত্রে আমাদের পরিকল্পনা আছে ৩১ মার্চের পর তাদের বাংলাদেশে লুকিয়ে থাকবে এটা আমরা চাই না। তারা পালিয়ে যাবে সেটা ভিন্ন বিষয়। অথবা তারা জেলের মধ্যে থাকবে। আমরা হার্ডলাইনে যাব ৩১ মার্চের পর। যারা আমাদের আহবান সাড়া দেবে, আমাদের কাছে সাহায্য চাইবে, তাদের আমরা আইনানুগ সাহায্যের চেষ্টা করবো। কিন্তু দেশের ভেতর থেকে লুকোচুরি করবে, সেটা হবে না।