বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নতুন প্রজন্মকে ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হিসেবে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। গতকাল সকালে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থসমূহের প্রকাশনা উৎসব, বঙ্গবন্ধু স্কলার বৃত্তি প্রদান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজের চূড়ান্ত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে এত গান, এত কবিতা, এত রচনা লেখা হয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোনো নেতার নামে লেখা হয়েছে কিনা জানি না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানটাকে মানুষ যে এত আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করেছে… সেখান থেকে আমি মনে করি শুধু গ্রহণ করলেই হবে না। আমাদের নতুন প্রজন্ম সেই আদর্শে আদর্শবান হয়ে, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘টার্গেট ছিল ২০২১ সালের সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশকে একটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে আসার। কিন্তু এরপর আমরা দিয়েছি ২০৪১ সাল। আজকে নতুন প্রজন্ম ২০৪১ সালের সৈনিক হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, উন্নয়নশীল দেশ হতে আমরা ধাপে ধাপে উন্নত দেশে উন্নীত হব। সেটা করা খুব কঠিন কাজ না। আমরা সেটা করতে পারব। নতুন প্রজন্মের প্রশংসা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, জাতির পিতা সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চেয়েছিলেন। সোনার মানুষ এখন তৈরি হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে মানুষ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে এবং প্রত্যেকে প্রযুক্তির মাধ্যমে আজকে বিশ্বটা সবার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। বিশ্বকে জানার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশ এখন আর অন্ধকারে পড়ে থাকছে না। বরং বাংলাদেশের মেধাবী ছেলে-মেয়েরাও বিশ্বের কাছে নিজেদের আরও উপস্থাপন করতে পারছে, তাদের সেই জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হচ্ছে।
এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। প্রযুক্তির সেটাই হচ্ছে বড় অবদান। বাংলাদেশের মানুষের আজকের যে অবস্থা সেটা ১৩/১৪ বছর আগেও এমন ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা হলো বাস্তবতা। কিন্তু আমরা সেই পরিবর্তনটা আনতে পেরেছি। এটা হলো আমাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া। কিন্তু এটা অব্যাহত রাখতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং উন্নয়নের কথা তুলে ধরে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার কমিয়েছে, সাক্ষরতার হার বাড়িয়েছে, মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পেরেছে, পুষ্টির নিরাপত্তা দিতে পেরেছে। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর যে গুরুত্ব দিয়েছিলাম সেখানেও আমরা যথেষ্ট সফল হয়েছি। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ, অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। শিক্ষায়, জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, অর্থনৈতিকভাবে, বাংলাদেশের মানুষ উন্নত হবে, সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।
১১ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন : অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর লেখা ১১টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ১১টি বইয়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা ‘কোটি মানুষের কণ্ঠস্বর’ বইটির সম্পাদনা করেন। বইয়ের মোড়ক উন্মোচন ছাড়াও অনুষ্ঠানে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে নির্বাচিত ১৩ জন মেধাবী শিক্ষার্থীকে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলার’ বৃত্তি এবং ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কুইজ’ প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত বিজয়ী ১০০ জনের মধ্যে নির্বাচিত ১০ জনকে পুরস্কার তুলে দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। মুজিববর্ষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট এবং জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বিত আয়োজনে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলার’ বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।
স্নাতক পর্যায়ের সামাজিক বিজ্ঞান, কলা ও মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা, আইন, ভৌত বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, শিক্ষা ও উন্নয়ন, চিকিৎসা, চারু-কারু, কৃষিবিজ্ঞান এবং মাদরাসা শিক্ষা অধিক্ষেত্রের প্রত্যেক অধিক্ষেত্র থেকে একজন করে মেধাবী শিক্ষার্থীকে সুনির্দিষ্ট মানদন্ডের ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু স্কলার’ হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। তাদের প্রত্যেককে বৃত্তি হিসেবে এককালীন ৩ লাখ টাকার অ্যাকাউন্ট পে-চেক, সনদ এবং একটি সম্মাননা স্মারক দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি এবং আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ও অনুবাদ উপকমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. ফখরুল আলম। সাহিত্য অনুষ্ঠান উপকমিটির আহ্বায়ক এবং সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের আগে ধারণ করা বক্তব্য অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুজিববর্ষের থিম সং ‘তুমি বাংলা ধ্রুবতারা, হৃদয়ের বাতিঘর’ পরিবেশন করা হয়।