বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে বাংলাদেশকে জরুরি ভিত্তিতে আরও ৩০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে শুক্রবার বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে সংস্থাটির বোর্ড সভায় এই ঋণ সহয়তা অনুমোদন দেয়া হয়।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ‘লোকাল গভর্নমেন্ট কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যান্ড রিকভারি প্রজেক্ট’ (এলজিসিআরআরপি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এই ঋণ দেবে সংস্থাটি। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের শহর এলাকায় করোনা মহামারি সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে ৪ কোটি নগরবাসীর জন্য এই ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। এটি ভবিষ্যৎ ধাক্কা মোকাবিলায় প্রস্তুতি জোরদার করে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে শহুরে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তা করবে এই অর্থ। ৩২৯টি পৌরসভা এবং ১০টি সিটি করপোরেশনের সুবিধা বাড়বে। অবকাঠামো, স্থানীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, জলবায়ু প্রভাব, দুর্যোগ এবং ভবিষ্যতে রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে মুক্তির জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে এই অর্থে। প্রকল্পটি দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কর্মসংস্থান তৈরিতে সহায়তা করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ১৫ লাখ দিনের কাজের সুযোগ তৈরি হবে। পাশাপাশি ১০ হাজার নারীর কর্মসংস্থান তৈরি করবে।
সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করবে প্রকল্পটি। জরুরি পরিস্থিতিতে আরও ভালো সমন্বয় ও তথ্য বিনিময়ের জন্য একটি ওয়েবভিত্তিক প্ল্যাটফর্মও স্থাপন করা হবে এই প্রকল্পের আওতায়। আটটি বিভাগে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের আবাসিক প্রতিনিধি মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারি শহুরে এলাকার দরিদ্র জনগণকে মারাত্মকভাবে আঘাত করেছে। কোভিড আয়ের ক্ষতি করেছে এবং মৌলিক পরিষেবা সরবরাহ ব্যাহত করেছে। তবে সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলো মহামারি থেকে নগরের দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরির পাশাপাশি শহরগুলোকে ভবিষ্যতের ধাক্কা সামলানোর জন্য প্রস্তুত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সে কারণেই এই সহায়তা।’
বিশ্বব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশের নগরাঞ্চল দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বৃহৎ ও ক্রমবর্ধমানশীল অংশের প্রতিনিধিত্ব করে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের উল্লেখযোগ্য অংশ নগরাঞ্চলে পরিচালিত হলেও কোভিড-১৯ এর প্রভাবে বাংলাদেশের নগরবাসীর স্বাস্থ্য সমস্যা, বিভিন্ন সেবার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। স্বাস্থ্যগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা ও অর্থনৈতিক প্রভাব নিরসনে সরকার মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। তবে এই দায়িত্বের একটি বড় অংশ নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর (ইউএলজিআই) উপর বর্তায়, যারা মহামারির প্রত্যক্ষ প্রভাব মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।
স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিক সেবা ও অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামোগুলোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান আছে। তবে তাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা ও দক্ষতার অভাব রয়েছে। বর্তমানে নগরকেন্দ্রিক স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল টেকনোলজি, পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন, ড্রেন নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ এবং সড়কবাতি স্থাপনসহ অত্যাবশ্যকীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যে বরাদ্দ পায় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এই খাতগুলোর কাজ পরিচালনার জন্য অতিরিক্ত অর্থ প্রয়োজন। এ ছাড়াও করোনা টিকা নিতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের নিবন্ধন ও এ সংক্রান্ত বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে সহায়তা করবে এই প্রকল্প। এর আগেও করোনার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও টিকা কিনতে বাংলাদেশকে ঋণ সহয়তা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক।