বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের জরুরি অধিবেশনে বাংলাদেশ নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে। এ সংক্রান্ত বিতর্কে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের নেতৃত্বে সংলাপের মাধ্যমে সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দিয়েছে। পাশাপাশি জাতিসঙ্ঘ সনদে বর্ণিত সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অখন্ডতা নীতির প্রতি বাংলাদেশের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার এই বিতর্কে যেসব দেশ অংশগ্রহণ করেছে, তাদের অনেকেই ইউক্রেনে হামলার জন্য রাশিয়ার সমালোচনা করেছে। শুধু পশ্চিমা দেশগুলোই নয়, তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশ এই হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনভিত্তিক বিশ্বব্যবস্থার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গে লেভরভের ভার্চুয়াল বক্তব্যের সময় পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতিনিধিরা অধিবেশন কক্ষ ত্যাগ করে প্রতিবাদ জানায়।
বিতর্কের দ্বিতীয় দিন বাংলাদেশের বক্তব্য ভারতের অনুরূপ। জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের উপপ্রধান মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন ইউক্রেন সঙ্কট নিরসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবকে আহ্বান জানান। তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধপীড়িত অঞ্চল থেকে সরে যেতে আগ্রহী ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সাধারণ পরিষদের বিতর্কে ভারতীয় স্থায়ী প্রতিনিধি টি এস ত্রিমূর্তি অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, কূটনৈতিক উপায় ছাড়া এ সঙ্কটের অন্য কোনো সমাধান নেই। তিনি রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির টেলিফোন আলাপের কথা উল্লেখ করে সব পক্ষকে আন্তর্জাতিক আইন, জাতীয় সংহতি ও সার্বভৌমত্বের নীতি মেনে চলার আহ্বান জানান।
এর আগে ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে উত্থাপন করা নিন্দা প্রস্তাব রাশিয়ার ভেটোর কারণে বাতিল হয়ে যায়। এরপর তা আলোচনার জন্য সাধারণ পরিষদে উত্থাপন করা হয়। গত সোমবার বিতর্কের সূত্রপাত করে জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেজ বলেন, যথেষ্ট হয়েছে, ইউক্রেনে হামলা এখনই বন্ধ করতে হবে। বেসামরিক এলাকায় রুশ বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের নিন্দা করে তিনি ইউক্রেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার ওপর সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতি রক্ষার ওপর জোর দেন।
নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপিত খসড়া প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকে ইউক্রেন ইস্যুতে ভারত তার নিরপেক্ষ অবস্থান স্পষ্ট করে। ভারতের পাশাপাশি চীন ও সংযুক্ত আরব আমিরাতও ভোটদানে বিরত ছিল।
সাধারণ পরিষদে সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধি বলেন, বিনা উসকানিতে রাশিয়ার হামলা সব ক্ষুদ্র দেশের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিনিধি বলেন, রাশিয়ার আগ্রাসন আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক শান্তি ও নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। তুরস্ক বলেছে, নিজের দেশের ব্যাপারে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের একমাত্র অধিকার ইউক্রেনের জনগণের, অন্য কারো নয়।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন সরকারি সফরে নিউইয়র্কে অবস্থান করলেও ইউক্রেন ইস্যুতে জাতিসঙ্ঘের বিতর্কে অংশ নেননি। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, আমরা সব রকম যুদ্ধের বিরুদ্ধে। আমরা চাই, জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের উদ্যোগে এ সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হোক। ক্ষুদ্র রাষ্ট্র হিসেবে সব রকম যুদ্ধ বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে রাশিয়ার বড় ধরনের বিনিয়োগ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। একক প্রকল্প হিসাবে এটি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ। এই অর্থের ৯০ শতাংশ রাশিয়া ঋণ হিসাবে দিচ্ছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ নির্মাণ ও উৎক্ষেপণের জন্য রাশিয়ার একটি কোম্পানির সাথে চুক্তি সই করেছে বাংলাদেশ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকাধীন গ্যাজপ্রম বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বেশ আগে থেকেই কাজ করছে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চাপ সৃষ্টির আহ্বান : পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিউইয়র্ক থেকে জেনেভায় অনুষ্ঠিত জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের ৪৯তম অধিবেশনে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়েছেন। এতে তিনি বলেছেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই মিয়ানমারে ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।