বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে আদালত কারও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিলে তা ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তি’ হিসাবে গণ্য করার বিধান রেখে একটি আইনের খসড়ায় অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সোমববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘পরিত্যক্ত সম্পত্তির বাড়ি (সম্পূরক বিধানাবলি) আইন, ২০২২’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। সচিবালয়ে এ বৈঠকে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন সরকার প্রধান।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পরে সাংবাদিকদের বলেন, এ আইনের খসড়ায় পরিত্যক্ত সম্পত্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সরকারপ্রধানের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে। “আমাদের দেশে পরিত্যক্ত সম্পত্তি হল ১৯৭১ সালে যারা দেশত্যাগ করে চলে গেছে তাদের সম্পত্তি। তখন পিও ১৬ আইন দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ হত। পরে ১৯৮৫ সালে একটি অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ হত।”
সামরিক সরকারের সময়ে করা ওই অধ্যাদেশ এখন উচ্চ আদালতের আদেশে আইনে পরিণত করা হচ্ছে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আগে দুই ভাগে বিষয়গুলো বিবেচনা করা হত। একটি হল তিন শতাংশ জমির ওপর বাড়ি, অন্যটি তিন শতাংশের বেশি জমির ওপর বাড়ি।
তিন শতাংশের বাড়িগুলো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া হয়। আর তিন শতাংশের বেশি জমির বাড়িগুলো পূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতায়। এসব জমিতে এখন অনেক অফিস আছে। পূর্ত মন্ত্রণালয় বিভিন্ন দপ্তরকে লিজ বা ভাড়া দেয়। এখন আইনে যে পরিবর্তন আসছে, সেই ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, “যুদ্ধাপরাধ মামলায় কেউ অভিযুক্ত হলে, সেক্ষেত্রে কোর্ট যদি সম্পত্তি জব্দ করে দেয়, সেটাও পরিত্যক্ত সম্পত্তির মধ্যে পড়বে, যা আগে ছিল না “
সচিব জানান, ‘মন্ত্রী, সচিবসহ বড় বড় ব্যক্তিরা’ গুলশান-বনানীতে যেসব বাড়িতে থাকেন, তার বেশিরভাগই পরিত্যক্ত সম্পত্তি। এসব সম্পত্তির দাম এখন অনেক বেড়ে গেছে। আগে পরিত্যক্ত সম্পত্তি সরকারের অধীনে থাকলেও নতুন আইনে সরকারপ্রধানের অধীনে চলে যবে জানিয়ে আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, “আগে সরকারের সিদ্ধান্ত দিতে হত, আর এখন সরকারপ্রধান করা হল।” যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে আসা গণজাগরণ মঞ্চসহ বিভিন্ন সংগঠন আগে থেকেই মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনে এ বিষয়ে স্পষ্ট কোনো নির্দেশনা না থাকায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল থেকে আসা কোনো রায়েই সম্পদ জব্দ বা ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আসেনি।
ট্রাইব্যুনাল আইনে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি স্পষ্টভাবে বলা না থাকায় একাত্তরের বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণের আদেশ দেয়নি। তার বদলে রাষ্ট্রকে বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে বলেছিল আদালত। পাঠ্যপুস্তকেও তাদের গৌরবগাথা অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছিল। পরে ২০১৬ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকারী এবং দণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের সব স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত প্রস্তাব জাতীয় সংসদে গৃহীত হয়।