বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : সারা দেশের নদ-নদী ও বালুখেকোদের তালিকা তৈরি করছে নৌ-পুলিশ। তাদের কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর নব্যতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টিকারীদের তালিকা তৈরি করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন নদ-নদীতে যারা বাঁশ দিয়ে বানা তৈরি বা ঝোঁপ বানিয়ে দখলের মধ্যে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে। নদীর তীর দখলদার ও বালুখেকোদের তালিকা তৈরির পর তাদের বিরুদ্ধেও অভিযান শুরু হবে।
জানা যায়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় নদীর পাড় ঘেঁষে প্রথমে ময়লা, বালি বা মাটি ফেলে ভরাট করা হয়। ধীরে ধীরে নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে এলে পাড়ে নির্মাণ করা হয় স্থাপনা। এভাবেই সারা দেশের বিভিন্ন নদ-নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। এসব বিষয় নিয়ে নদী রক্ষা কমিশন কাজ করলেও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিটগুলো এসব বিষয়ে তেমন মাথা ঘামায় না। নদীপথের সংঘবদ্ধ অপরাধ দমনসহ নদী দখল ও দূষণ কমাতেই ২০১৩ সালে পৃথক নৌ-পুলিশের ইউনিট গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘদিনেও নদী রক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেনি নৌ-পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সম্প্রতি নৌ-পুলিশ ইউনিটের প্রধান হিসেবে যোগ দিয়েছেন অতিরিক্ত আইজিপি মো. শফিকুল ইসলাম। এরপর থেকেই তিনি নদ-নদী ও জলজ সম্পদ রক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় নদী দখলদার ও বালুখেকোদের তালিকা করা হচ্ছে। সম্প্রতি চাঁদপুরের ষাটনলে জেলেদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় নৌ-পুলিশের প্রধান শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘নদী দখলদার ও বালুখেকোরা যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কারণ নদী বাঁচলেই দেশ বাঁচবে, বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্ণতা পাবে।’
অতিরিক্ত আইজিপি পদমর্যাদার এই পুলিশ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, ‘নৌ-পুলিশের বিধিতে অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলোতে তারা সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে পারবে। আইন ও বিধি অনুযায়ী নৌ-পুলিশ এখন তাদের অধিক্ষেত্র এলাকায় পূর্ণমাত্রায় কাজ করে যাবে। নদী দখলদার বা বালুখেকো থেকে শুরু করে নদীপথের সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রকে দমন এবং বেআইনি বা অনুমোদনহীন জলযান জব্দ করাসহ প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
নৌ-পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, তাদের বিধিমালায় নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নদীর গতিপথ বাধাগ্রস্তকরণ, নাব্য নৌপথে বিঘ্ন সৃষ্টি, নাব্য নৌপথের নাব্যতা পরিবর্তন, অবৈধ খনন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, অবৈধ দখল ও ভরাট সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘন বা লঙ্ঘনের চেষ্টার ক্ষেত্রে আইনের অধীন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে নৌ-পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নৌ-পুলিশ এখন থেকে তাদের অধিক্ষেত্রের সব বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সারাদেশের নদ-নদী থেকে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সরকারঘোষিত বালুমহল ইজারা নিয়ে বৈধভাবে বালু তোলার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু ইজারাদাররা সরকারঘোষিত এলাকার বাইরেও এবং নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বালু তুলে নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টি করছেন। নৌ-পুলিশ বালু খননের প্রক্রিয়া যথাযথ হচ্ছে কিনা তা যাচাই-বাছাইয়ের পাশাপাশি অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করেন তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
নৌ-পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাথী রাণী শর্মা জানান, নদীর গতিপথে বাধা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে ১৫ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন নদ-নদীতে অভিযান চালিয়ে ১৩৩টি বানা বা ঝোপ অপসারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি একই সময়ে রাত্রিকালীন বাল্কহেড চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ নিশ্চিত করতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে মোট ১০৬টি বাল্কহেড জব্দ করা হয় এবং ৩৪ জন আসামির বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন নৌযান থেকে চার হাজারের বেশি লিটার চোরাই তেল ও ২২ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।
নৌ-পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, প্রতি বছরের নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত জাটকা ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ হওয়ায় নৌ-পুলিশ মৎস্য সম্পদ রক্ষায় অভিযান চালিয়ে থাকে। চলতি মাসের প্রথম পনেরো দিন নৌ-পুলিশের অভিযানে প্রায় ১২ হাজার কেজি জাটকা উদ্ধার করা হয়। একইসঙ্গে ১১০ কোটি টাকা মূল্যমানের ৪ কোটি ৬৪ লাখ মিটার অবৈধ জাল জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় ১০৯ জন আসামির বিরুদ্ধে ৫৮টি মামলা দেওয়া হয়েছে এবং ৪৮টি মাছ ধরার নৌকা আটক করা হয়েছে।
নৌ-পুলিশ সূত্র জানায়, নৌ-পথে সংগঠিত বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত সুচারুভাবে সম্পন্ন করার জন্য নৌ-পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে সম্প্রতি একটি বিশেষ মনিটরিং সেল স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া হেডকোয়ার্টার্স থেকে প্রতিটি নৌ-জেলা এলাকায় নিয়মিত তদরকি করাসহ নিজেদের এবং অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে সমন্বয়ের মাধ্যমে দখলদার ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।