নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনা : সময় ঘনিয়ে আসছে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচনের। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয়পাটি মনোনীত প্রার্থী ও সমর্থকেরা তাদের মনোনীত প্রার্থীদের পক্ষে ভোটারদের দ্বারেদ্বারে যাচ্ছেন, ভোট প্রার্থনা করছেন। উঠোন বৈঠক, দেখাসাক্ষাত, ঘরোয়া মিটিং, পোস্টার, প্যানাসাইন, প্রচারযন্ত্রের প্রচারণা থেমে নেই। আসনটির দুটি উপজেলায় চলছে ভোটের আমেজ।
আগামি ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে আসনটি হাতছাড়া বিএনপির। এবার সেই আসনটি পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে নেমেছে দলটি। নির্বাচনে জয়লাভের মধ্যদিয়ে বিএনপির নতুন অভিযাত্রা শুরু হবে বলে মনে করেন দল মনোনীত প্রার্থী। আর বরাবরের মতো আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে একাট্টা আওয়ামীলীগ। কিন্তু নির্বাচনের আগেই সংঘর্ষে জড়িয়েছে দলটির নেতাকর্মীরা। তারপরও ভোটারদের মধ্যে কোনো সংশয় থাকবে না বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। নির্বাচনী মাঠে রয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থীও। তবে তার সরব উপস্থিতি নেই বললেই চলে। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়া উপজেলা মিলে গঠিত পাবনা-৪ আসন। এ জেলার ৫টি আসনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন আসন হিসেবে বরাবরই বিবেচিত। ১৯৯৬ সাল থেকে টানা ২৫ বছর আসনটি রয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের দখলে। অপরদিকে, দলীয় গ্রুপিংয়ের কারণে আসনটি বারবারই অধরা থেকে গেছে বিএনপির। এবার আসনটি পুনরুদ্ধারে নেমেছে দলটি। সেই লক্ষ্যে ভোটারদের মন জয় করতে প্রচারণায় ব্যস্ত দলীয় নেতাকর্মীরা। উপনির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে বিএনপির নতুন অভিযাত্রা শুরু হবে বলে মনে করেন বিএনপির প্রার্থী। আর বরাবরের মতো আসনটি ধরে রাখতে একাট্টা আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জিতাতে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ, বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতারাও।
আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বীরমুক্তিযোদ্ধা নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী নয়। ভোটের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। তাই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে তা হবে বিএনপির দুরভিসন্ধী। তিনি বলেন, আমি ছাড়াও আরও দুটি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনী সকল কাজ করছেন, তাদের কোন ধরণের বাঁধা নেই। ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন হবে এমনটিই দাবী এই প্রার্থীর। তিনি আরও বলেন, এ আসনের মানুষ আমাকে ভালোবেসে তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী যে সকল উন্নয়নমূলক কর্মযজ্ঞ হাতে নিয়েছিলেন, তার অসমাপ্ত কাজগুলো বাস্তবায়নসহ সরকারের উন্নয়নমুখি কাজ করতে চাই।
বিএনপি মনোনীত প্রার্থী, জেলা বিএনপির আহবায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই এলাকার মানুষ বিএনপি সমর্থিত। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আর এই নির্বাচনের মধ্যদিয়েই বিএনপি জয়লাভ করবে। তিনি বলেন, সরকারকে বলতে চাই, এই আসানটি নেয়ার জন্য বিতর্কিত হবেন না। জাতীয়পাটি মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে অস্বস্থিকর পরিবেশ লক্ষ্য করেছি। বেপরোয়া মনোভাবপূর্ণ কার্যক্রম চলছে। পোস্টার ব্যানার ছিড়ে ফেলা ও পোড়ানো হয়েছে। কর্মিদের মারধর করা হয়েছে। তিনি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের নিকিট দাবী জানান, নির্বাচনী পরিবেশ অন্য স্থানে যেমন শান্তিপূর্ণ আছে, সেই শান্তিপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখতে আপনাদের সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে। ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে, ভেবাটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন, তাহলে অবশ্যই জাতীয় পাটির বিজয় নিশ্চিত ববেল তিনি দাবীভ করেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স এমপি বলেন, আওয়ামী লীগ ভোবটের রাজনীতি বিশ্বাস করে। জোর করে ভিন্নপথে ক্ষমতা দখলে বিশ্বাসী নয়। নির্বাচনে ভোট দেবেন জনগণ, নির্বাচনে প্রার্থী কে বিজয়ী হবেন, সেটার নির্নায়ক কিন্তু জনগণ। এই উপনির্বাচনে আমরা খুশি এই জন্য যে, বিএনপি ও জাতীয়পাটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, অবশ্যই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এটা আমরা বিশ্বাস করি। ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলা সরেজমিনে পরিদর্শনকালে কথা হয় একাধিক সাধারণ ভোটারদের সাথে। তারা বলেন, ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার শান্তিপুর্ন পরিবেশ চাই। দুই উপজেলায় সমান উন্নয়ন ও সন্ত্রাস-মাদক নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে এমন প্রার্থীকে নির্বাচিত করবো। যাদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবেন, সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সঠিক ভাবে দূর্নীতি মুক্ত হয়ে বাস্তবায়নে তারা কাজ করবেন। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলাপকালে পাবনা সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনের লক্ষে নির্বাচন কশিশন সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আর ভোটারদের আস্থা অর্জনে তাদের ভোট কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধকরণে নেয়া হয়েছে নানা ব্যবস্থা। নির্বাচনের আগেই প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই আসনের সার্বিক পরিবেশ পরিদর্শণে আসবার কথা রয়েছে বলে জানান নির্বাচন কর্মকর্তা। তিনি আরও বলেন, গত ২ এপ্রিল সাবেক ভূমিমন্ত্রী ও সাবেক সাংসদ শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মৃত্যুতে আসনটি শুন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এই আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৮১ হাজার ১১২ জন। ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১২৯টি।