বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : জাতিসঙ্ঘে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পশ্চিম পাকিস্তানের হত্যাযজ্ঞকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতির বিষয়ে এক আলোচনায় বাংলাদেশ জানায়, ১৯৭১ সালের গণহত্যার ঘটনাগুলো স্পষ্টভাবে নথিভুক্ত, তবুও জাতিসঙ্ঘের স্বীকৃতি পায়নি।
জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি যে আমাদের মতো অতীতের ট্র্যাজেডিগুলো যদি অস্বীকৃত থেকে যায়, তাহলে গণহত্যা প্রতিরোধের জন্য জাতিসঙ্ঘের প্রচেষ্টা অসম্পূর্ণ থাকবে।
২০২২ সালের জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের অংশ হিসেবে শনিবার নিউইয়র্কে জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন আয়োজিত ‘গণহত্যা প্রতিরোধ: অতীতের ট্র্যাজেডির স্বীকৃতি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মর্যাদা পুনরুদ্ধার’ শীর্ষক ভার্চুয়াল সেমিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আলোচনার মূল বক্তা ছিলেন কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জন হাবেল ওয়েইস এবং উপস্থিত ছিলেন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত সোভেন আলকালাজ, কম্বোডিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত সোভানকে এবং ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বাউল, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অব বাংলাদেশের প্রসিকিউটর প্যানেলিস্ট হিসেবে ছিলেন। প্রিভেনশন অব জেনোসাইড-এর মহাসচিবের বিশেষ উপদেষ্টা অ্যালিস ওয়াইরিমু এনদেরিতুও অনুষ্ঠানে একটি বিবৃতি দিয়েছেন।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা ১৯৭১ সালের গণহত্যার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট উপস্থাপন করেন এবং ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ‘অপারেশন সার্চলাইট’ এর মাধ্যমে ৩০ লাখ বেসামরিক মানুষ নিহত হয় এবং দুই লাখ নারী ধর্ষিত হয়; এক কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ২৫ মার্চের গণহত্যার উদ্দেশ্য ছিল আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও এর আকাঙ্ক্ষাকে চিরতরে শেষ করে দেয়া। আমাদের বঙ্গবন্ধুর ডাকের মধ্য দিয়ে এ সংগ্রাম ধীরে ধীরে নয় মাসের দীর্ঘ মুক্তিযুদ্ধে পরিণত হয়েছিল, যার পরিসমাপ্তি ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মধ্য দিয়ে।
আন্ডার-সেক্রেটারি-জেনারেল এনদেরিতু তার বিবৃতিতে বলেছেন, গণহত্যা ও নৃশংসতা সবচেয়ে ভয়ঙ্কর অপরাধ এবং বাংলাদেশ তার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেই তার সাক্ষী।
তিনি গণহত্যা প্রতিরোধে আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা জোরদার এবং ঘৃণামূলক বক্তব্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওপর জোর দেন।
কর্নেল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর জন হাবেল ওয়েইস, তার মূল বক্তব্যে অন্যত্র সংঘটিত গণহত্যার আইনি ও ঐতিহাসিক দিকগুলো এবং কীভাবে সেই স্বীকৃতিগুলি ক্ষতিগ্রস্তদের মর্যাদা পুনরুদ্ধারে অবদান রেখেছিল তা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে তিনি গণহত্যার স্মরণে বাংলাদেশের প্রচেষ্টার প্রশংসা করেন।
রাষ্ট্রদূত সোভান কেটার ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে হলোকাস্টের পর ইতিহাসে দ্বিতীয় বৃহত্তম গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
এ সময় তিনি কম্বোডিয়ার অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন। বিশেষ করে গণহত্যার শিকারদের নিরাময়ে সহায়তা করার জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে।
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাষ্ট্রদূত স্রেব্রেনিকাতে গণহত্যা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যর্থতার ওপর আলোকপাত করেছেন এবং সকলকে আগাম সতর্কতা সংকেতগুলিকে চিনতে ও সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বাউল গণহত্যা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পরিপূরকতার নীতির অধীনে বিচারের উৎকৃষ্ট উদাহরণগুলো তুলে ধরেন। এবং গণহত্যার ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে জাতীয় ট্রাইব্যুনাল গঠনের পরামর্শ দেন।
এদিন বিকালে স্থায়ী মিশন বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে ‘জাতীয় গণহত্যা দিবস’পালন করে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে দিবসটি স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং গণহত্যার শহীদদের স্মরণে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
এরপর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ ও শহীদদের স্মরণে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।
মুক্ত আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য আমরা জাতিসঙ্ঘের সঙ্গে কাজ করছি এবং এই গণহত্যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখব।’