বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মাঝে আরও ছড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, এতে করে তারা যেমন দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, তেমনি দেশও সামনে এগিয়ে যাবে। ইতিহাস জানার মধ্য দিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভেতর একটা চেতনা জাগ্রত হবে, দেশপ্রেমে তারা উদ্বুদ্ধ হবে এবং মানুষের কল্যাণে তারা আরও কাজ করতে অনুপ্রেরণা পাবে।
রবিবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) কার্যালয়ে স্থাপিত ‘মুজিব কর্নার’ উদ্বোধনকালে প্রদত্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই মানসিকতা যত বেশি ফিরে আসবে, তত আমার দেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে দীর্ঘ দিনের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কেননা, ২১ বছর আমাদের বিজয়গাথা মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল, নতুন প্রজন্মের অনেকে সে ইতিহাস জানতেই পারেনি। আজকে তা আবার ফিরে এসেছে।
সরকারপ্রধান বলেন, দীর্ঘ দিন সরকারে থাকার ফলে বাংলাদেশ আজকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং সমগ্র বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে মর্যাদার চোখে দেখে। বিশ্বের অনেক দেশ এখন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যদ্যের ভূমিকার প্রশংসা করে। বিদেশী অতিথিরা দেশে এলে তাদের নিরাপত্তায় থাকা এসএসএফ সদস্যদেরও ভূঁয়সী প্রশংসা করে থাকেন।
শেখ হাসিনা বলেন, এই যে কর্নারটা করা হয়েছে সেখানে ইতিহাসের অনেক তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। কাজেই যারা দায়িত্ব পালন করতে আসবে তারা একদিকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, আর বিজয়ী জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে চলার প্রেরণা পাবে। কারণ, ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। আর বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমাদের জ্ঞান বিজ্ঞানে যেমন সমৃদ্ধশালী হতে হবে, তেমনি ইতিহাসের শিক্ষা থেকেই আমরা আগামী দিনের ভবিষ্যতটা আরও উজ্জ্বল করব, উন্নত করব।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে জানিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫-এর পর ইতিহাস থেকে জাতির পিতার নাম মুছে ফেলা হয়েছিল। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল, জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সামান্য কয়েকটা বাছা বাছা গান বাজানো হতো, যে গানগুলো মহান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে, সেগুলোও নিষিদ্ধ ছিল। কোথাও এতটুকু জায়গায়ও যদি বঙ্গবন্ধু মুজিবের একটা ছবি থাকত সেটাকে ঢেকে রাখা হতো।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গেলে সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ছবি চলে আসে। সেগুলো সব সময় যেন দেখা না যায়, মানুষ যেন জানতে না পারে, একটা বিকৃত ইতিহাস সৃষ্টি করার চেষ্টা এবং মূল ইতিহাসটাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। যারা সত্যকে মুছে ফেলার চেষ্টা করে, তারা জানে না সত্য কখনও মুছে ফেলা যায় না। আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে।
সপরিবারে জাতির পিতা হত্যাকান্ডের পর বিদেশে রিফিউজি হিসেবে থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রবাসে ছিলাম, রিফিউজি হিসেবে থাকতে হয়েছে। নিজের নাম-পরিচয় দিতে পারিনি। নিরাপত্তার স্বার্থে বিদেশে আশ্রয় নিয়েছিলাম। এই শোক, কষ্ট, ব্যথা সহ্য করা খুবই কঠিন। তারপরেও আমাদের জীবনের একটা প্রতিজ্ঞা ছিল জীবনে একদিন না একদিন সময় আসবে। কারণ, এত আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যেতে পারে না। এত রক্তপাত, এত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা যেন বৃথা না যায়, সে বিষয়ে সবাই সজাগ থাকারও অহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এসএসএফ সদস্যদের জন্য তার দোয়া ও আশীর্বাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি যখন দোয়া করেন শুধু নিজ পরিবারের জন্যই নয়, সহকর্মী এবং দেশবাসীর জন্যও দোয়া করেন। বিশেষ করে যারা তার নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন, তাদেরও মঙ্গল কামনা করেন তিনি। আমাদের দেশ অনেক রক্তপাত ও ত্যাগের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জন করেছে- তা যেন বৃথা না যায় সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহবান জানান।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুর করিম, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোঃ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবীর আহাম্মদ প্রমুখ।