রিজাউল করিম সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি : ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও ইয়াসের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ইউনিয়ন। ভিটে মাটি, ফসলী জমি ও মৎস্য ঘের নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে নিঃস্ব হয়ে যায় প্রতাপনগর ইউনিয়নের অনেক পরিবার। ভেঙে পড়ে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা।
প্রতাপনগর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে হাওলাদার বাড়ি ও দরগাহতলার আইট এ ২টি গ্রাম। জোয়ার ভাটায় নদীতে বিলীন হয়ে যায় প্রায় ৪০টি পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ ও কবর স্থান, বাজার ঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যাওয়াতের ব্যবহৃত রাস্তাটিয়। এতে যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক বিপর্যয় ঘটে। স্থানীয়রা চরম দুর্ভোগে পড়েন। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দৈনিক ২০ টাকা খরচ করে নৌকায় পার হওয়া লাগতো। একটি মাত্র নৌকায় পার হতে হতো ৪০০টি পরিবারের মানুষদের।
স্থানীয়দের এই দুর্ভোগ লাঘবে এগিয়ে আসে চিকিৎসকদের দ্বারা পরিচালিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ডু সামথিং ফাউন্ডেশন’। প্রতাপনগরের হাজারো মানুষের যাতায়াতের কষ্ট লাঘবে তৈরি করে দিয়েছে ভাসমান সেতুটি। ৫৬টি প্লাস্টিকের ড্রাম ও কাট দিয়ে তৈরি ৩৫০ ফিট দৈর্ঘ্যরে ভাসমান সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে গত ২৮ মার্চ। বর্তমানে সবার জন্য সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এখন দৃষ্টিনন্দন ভাসমান সেতু দিয়ে যাতায়াত করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক সাইদুল ইসলাম বলেন, যে স্থানে সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছে সেখান ছিলো ৪০টি পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ ও কবর স্থান। সব কিছু নদীতে বিলীন হয়ে তৈরি হয় গভীর খাল। বর্তমানে অনেক পরিবার পানি উন্নয়ন বোডের বাঁধের উপরে বাসা তৈরি করে বসবাস করছে। সেতুটি তৈরি হওয়ায় মানুষের খুব উপকার হচ্ছে।
স্থানীয় আব্দুল গফুর সানা বলেন, একজন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মত কোন রাস্তা ছিলো না। নৌকায় করে পার করা ছাড়া কোন উপায় ছিলো না। এখানকার মানুষের খুবই কষ্টের ভেতর জীবন-যাপন করতে হয়। শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, আগে ২০ টাকা করে নৌকা পার হয়ে স্কুলে যেতাম। একটি নৌকায় পারাপার করা হতো। মানুষের বেশি ভিড় হলে অনকে সময় রৌদে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো। মানিক বলেন, সেতুটি নির্মাণ করে আমাদের অনেক উপকার হয়েছে। আগে অনেক সময় জরুরী কাজের জন্য নৌকা না পেলে সাঁতার দিয়ে নদী পার হয়ে যাওয়া লাগতো। এখন আর সেটি করা লাগবেনা আমরা খুবই খুশি।
“ডু সামথিং ফাউন্ডেশন” এর সভাপতি ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এখানকার মানুষেরা ঘূর্ণিঝড় আম্পানের পর থেকে খুব কষ্টে জীবনযাপন করছে। প্রায় ৪০০ পরিবার এই নদী ভাঙ্গনের ভেতর বসবাস করে সেখানে যাতয়াতের রাস্তাা নদীতে গর্তে বিলিন হয়ে যাওয়ার কারনে নৌকার চলাচল করতে হতো। তাদের দুঃখ-দুর্দশা কমানোর জন্য আমারা একটি ড্রামের ব্রীজ তৈরি করে দিয়েছি। আশা করি কিছুটা হলেও এখানকার মানুষ উপকৃত হবে। প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু দাউদ ঢালী জানান, আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়া প্রতাপনগরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিছিন্ন হওয়া হাওলাদার বাড়ি ও দরগাহতলার আইট গ্রামের রাস্তাটি আবার নতুন করে তৈরি করার চেষ্টা করছিলাম। তবে রাস্তার মাটি সব নদীতে চলে যাওয়ার ফলে এখানে অনেক গভীরতা তৈরি হয়েছে। এ জন্য রাস্তাটি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে না। নদীতে ঘরবাড়ি হারিয়ে কেউ কেউ আশ্রয় নিয়েছিলো বাঁধে। আবার অনেকে চলে গেছে অন্যত্রে। মানুষের কষ্ট লাঘবে “ডু সামথিং ফাউন্ডেশন” একটি ভাসমান সেতু তৈরি করে দিয়েছে। এই সেতুর মাধ্যেমে বিছিন্ন দুটি গ্রামকে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়েছে ইউনিয়নের সাথে। এখন মানুষ নির্বিঘেন্ন যেতে পারছে।