বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ১৬ দফা সুপারিশ

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : খুচরা পর্যায়ে মূল্য তালিকা প্রদর্শন এবং প্রতিটি ধাপে পাকা রশিদ সংরক্ষণ নিশ্চিতকরাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে ১৬ দফা সুপারিশ করেছে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক টাস্কফোর্স। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্স কমিটির বৈঠকে এসব সুপারিশ করা হয়। এর আগে ২৭শে মার্চ বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্‌শিকে উপদেষ্টা ও বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষকে সভাপতি করে ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা’ বিষয়ক এই টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। রমজান শুরুর আগে থেকেই দেশে চাল, ডাল, চিনি, ছোলা, পিয়াজসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো পণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। এমন পরিস্থিতি সরকারের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। করণীয় নির্ধারণে গতকাল টাস্কফোর্সের এই প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গঠিত কমিটিতে বাকি সদস্যরা হলেন- জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, কৃষিসচিব, খাদ্যসচিব, শিল্পসচিব, তথ্য ও সম্প্রচারবিষয়ক সচিব, ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক, এনএসআইয়ের মহাপরিচালক, টিসিবির চেয়ারম্যান, এফবিসিসিআই সভাপতি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিব।

পথে পথে চাঁদাবাজির অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, কিছুক্ষণ আগেও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এখানেও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহ-সভাপতি বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। বিভিন্ন গ্রুপ বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করছেন, সেটা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি হচ্ছে, খোঁজ নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন। টিপু মুন্‌শি বলেন, ব্রাজিল, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ায় তেলের দাম না কমলে আমরা কমাতে পারবো না। ভ্যাট কমানোয় তেলের দাম বাজারে কমেছে। বাজারে পিয়াজের দামও কম। বাসার জন্য আমি ২৮ টাকা দরে ৫ কেজি পিয়াজ কিনেছি।

বৈঠক শেষে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, কয়েকটি সুপারিশ ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে, কয়েকটি বাস্তবায়নাধীন এবং বাকিগুলো বাস্তবায়নে গভীরভাবে কাজ করছে টাক্সফোর্স।
টাস্কফোর্সের অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে-
>> সমুদ্র ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং শুল্ক স্টেশনসমূহ রমজানের সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান
>> নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে ফেরি পারাপারে বিআইডব্লিউটিসি কর্তৃক সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার প্রদান
>> ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে
>> কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুতকারীর বিষয়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি বৃদ্ধি করা
>> নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ কর্তৃক অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা প্রদান
>> পাইকারি হতে খুচরা পর্যায়ে অতিরিক্ত মুনাফার বিষয়ে কঠোর নজরদারি বাড়ানো
>> অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ-///২০১১ এর ফরম ‘ঘ’ অনুসরণপূর্বক সরবরাহ আদেশ (ঝ.ঙ) প্রদান এবং প্রকৃত ডিলার ছাড়া হাত বদল হওয়া ঝ.ঙতে পণ্য সরবরাহ না করার বিষয়ে মিলগুলোকে বাধ্য করা
>> ভোজ্য তেল ক্রয়-বিক্রয়ে পাইকারি হতে খুচরা সকল পর্যায়ে পাকা রসিদ (প্রতিষ্ঠানের নাম ও ঠিকানাসহ মুদ্রিত তথ্য) প্রদান নিশ্চিত করা
>> ভোজ্য তেলের মিলগেট, পরিবেশক ও ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ, সঠিকভাবে প্রদর্শন ও বাস্তবায়ন করা
>> অবৈধভাবে পণ্য মজুত ও বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত সকল আইনে ব্যবস্থা নেয়া
>> ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী মিল কর্তৃক অপরিশোধিত তেল আমদানির পরিমাণ, পরিশোধনের পরিমাণ ও পরিবেশকদের নিকট সরবরাহের পরিমাণে সামঞ্জস্য রয়েছে কিনা সেটি বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন কর্তৃক নিশ্চিত করা ও এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কাছে পাঠানো
>> অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন ও পরিবেশক নিয়োগ আদেশ- ২০১১ এর অনুচ্ছেদ ৯(১), ৯(২), ৯(৩), ১২(১) ও ১২(৪) এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ধারা ৩৮, ৪০ এবং ৪৫ যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর, সংস্থা ও কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি রোধকল্পে করণীয় হিসেবে মিলগুলোতে তদারকি জোরদার করা
>> মিলসমূহ কর্তৃক পরিবেশক নিয়োগ সংক্রান্ত হালনাগাদ তালিকা বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নিকট সরবরাহ করা
>> ভোজ্য তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রচলিত আইনের ব্যত্যয় হলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া।

Comments (0)
Add Comment