নিহার বিন্দু চাকমা, রাঙ্গামাটি : জুম্ম সংস্কৃতি ঐতিহ্য সংরক্ষণ, বিকাশ এবং অধিকার নিশ্চিত করনে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) বলেছেন, পার্বত্য অঞ্চলের জুম্ম জনগণের সংস্কৃতির জীবনধারা অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে এবং হারিয়ে যেতে বসেছে নানা কারণে। পাহাড়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, জাতিগত, বর্ণগতসহ নানাবিধ সমস্যা বিরাজমান। অধিকার ছাড়া ভাষা ঠিকে রাখা যায় না। প্রত্যেক জনগোষ্ঠী তার নিজের মাতৃভাষাকে যদি সংরক্ষণ ও বিকাশ করতে চাই তাহলে অধিকার আগে প্রয়োজন। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করতে হবে। অধিকার যদি স্বীকৃত না থাকে তাহলে অবশ্যই কোন না কোন বৃহত্তর প্রবল চাপে মাতৃভাষাকে হারিয়ে যেতে বাধ্য করবে। এর প্রধান কারণ হলো পার্বত্য চট্টগ্রামে সমাজব্যবস্থা বৈষম্যলিপ্ত।
রোববার (১০ এপ্রিল) সকালে রাঙ্গামাটি পৌরসভা প্রাঙ্গণে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষুব, বিহু, সাংক্রান উদযাপন উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, সংস্কৃতি তথা জুম্ম জাতির জীবনধারাকে সংরক্ষণ করে নিরাপদ গড়ে তোলার জন্য আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি (শান্তিচুক্তি) স্বাক্ষর করেছিলাম। সে চুক্তি এখনো বাস্তবায়িত হতে পারেনি। দীর্ঘ ২৫ বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের অপেক্ষার আশায় জীবন অতিবাহিত করছি। এই চুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়াতে এখনো অনিশ্চিয়তায় রয়েছি আমরা।
অনুষ্ঠানে উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক (অবঃ উপ-সচিব) প্রকৃতি রঞ্জন এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি বক্তব্য রাখেন, রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, জেলা পরিষদ সদস্য ঝর্ণা খীসা, একুশে পদকপ্রাপ্ত এবং বিশিষ্ট ভাষা গবেষক জাবারাং এর নির্বাহী পরিচালক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, বাংলাদেশ হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক পঞ্চানন ভট্টাচার্য্য, সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক শান্তি বিজয় চাকমা প্রমূখ। এছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রামে সুশীল সমাজের গণমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, আমাদের সংস্কৃতি আমাদের পরিচয়। আমরা অতি আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজস্ব সংস্কৃতি পালন করি না। মাতৃভাষাকে রক্ষা করতে হলে লালন করতে হবে, ধারণ করতে হবে, চর্চা করতে হবে। সংস্কৃতি ঐতিহ্য রক্ষা করার জন্যই শান্তিচুক্তি করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার আমাদের সংস্কৃতি বিকাশের জন্য ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ইন্সটিটিউট আইন-১০ পাস করেছে।
শান্তিচুক্তি পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমিও চাই এবং স্বাক্ষরকারী দুই পক্ষ সকলেই চাই চুক্তি বাস্তবায়ন হোক। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সবাই আলোচনার মাধ্যমে কোথায় বাঁধা আছে সেই সমস্যা দূর করে একযোগে কাজ করতে হবে।
পরে বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, বিষুব, বিহু, সাংক্রান উদযাপন উপলক্ষে র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি পৌরসভার প্রাঙ্গণ থেকে শুরু হয়ে রাজবাড়ি শিল্পকলা একাডেমিতে গিয়ে শেষ হয়। এতে পাবর্ত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা অংশগ্রহণ করেন।
এদিকে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে চাকমা,মারমা,ত্রিপুরা ভাষা প্রতিযোগিতা, চিত্রাংঙ্কন প্রতিযোগিতা, আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরণ। এছাড়াও ১১ এবং ১২এপ্রিল রয়েছে আদিবাসী জুম্ম খেলা, বলি খেলা, কবিতা পাঠ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ফুল ভাসানো, বিশিষ্ট জনের বাড়িতে গরিয়া নৃত্য পরিবেশনা।