রিজাউল করিম, সাতক্ষীরা জেলা প্রতিনিধি: ধর্মপ্রান মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। এই রমজান মাসে বিশ্বের ২য় ও বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ১ম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতায়। এখানে পহেলা রমজান থেকে ৩০শে রমজান পর্যন্ত প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার মানুষ একসাথে মিলিত হয়ে ইফতার করে।
বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ট সাধক সুলতান আউলিয়া, কুতুবুল আকতাব, গওছে জামান, হয়রত শাহ্ছুফী আলহাজ্ব খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লা (র.) এর জন্ম ভূমি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামে ১৯৩৫ সালের ১৫ মার্চ নলতায় নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি। তখনকার সময় থেকে নলতার আশে পাশের সকলের বাড়িতে রমজান মাসে রান্না করা খাবার এখানে নিয়ে এসে একসাথে বসে ইফতার করতেন। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এই ইফতার মাহফিল চালু হয়। দিন কি দিন বাড়তে থাকে এর পরিধি বর্তমানে নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন এর উদ্যোগে প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়। আর বাংলাদেশের মধ্যে এটায় সর্ববৃহৎ ইফতার মাহফিল। এখানে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে রমজান মাসে ইফতার করতে আসে ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা।
মহামারি করোনায় ২ বছর বন্ধ থাকার পর আবার চালু হয়েছে ইফতার মাহফিল। পহেলা রমজান থেকে শুরু হওয়া ইফতার মাহফিল চলবে ৩০শে রমজান পর্যন্ত। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের ইফতার মাহফিল আয়োজক কমিটি বলছে করোনার কারনে ১০ হাজার মানুষের আয়োজন কমিয়ে ৫ হাজার করা হয়েছে। যদি করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে তাহলে পূর্বের মত আবারও আয়োজন বাড়িয়ে ১০ হাজার করা হবে। প্রতিদিন ফজরের নামাজের পর থেকে ২০-২৫ জন বাবুর্চী ইফতার তৈরি বা রান্নার কাজ শুরু করে চলতে থাকে দুপুর পর্যন্ত। রমজানের আগেই প্রস্তুত করা হয় বিশাল ছাউনি।
রান্না শেষে পরিবেশনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ছাউনির নিচে আছরের নামাজের পরপরই ইফতারি দিয়ে শুরু হয় প্লেটে সাজানোর কাজ। এলাকার ছোট বড় সব মিলিয়ে ২০০ জন যুবক প্রতিদিন সেচ্ছাশ্রমে এসব কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি প্লেটে সাজানো হয়, কলা, খেজুর, ফিন্নি, ছোলা, চিড়াসহ নানা খাবার। ইফতারি তৈরি করতে আসা বাবুর্চী মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা প্রতিদিন ফজরের নামাজ পরে থেকে রান্নারকাজ শুরু করি শেষ হতে প্রায় বেলা ৩টা বেজে যায়। এখানে আমরা পরিস্কার পরিছিন্নতার সাথে সিংড়া,ছোলা, ফিন্নি রান্না করি।
সেচ্ছাসেবক জনি আহসান বলেন, প্রতিবছর রমজান মাসে এখানে সেচ্ছাসেবক হিসাবে কাজ খুবই ভালো লাগে। আমরা রমজান মাসের অপেক্ষায় থাকি। একসাথে প্রায় ১০ হাজার মানুষ ইফতার করে। আমাদের সৌভাগ্য এতগুলো রোজাদারের খেদমত করতে পেরে।
নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের আজীবন সদস্য প্রভাষক মো. মনিরুজ্জামান মহাসিন বলেন, ১৯৩৫ সালে অভিবক্ত বাংলা ও আসামের শিক্ষা বিভাগের সহকারী পরিচালক আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) নলতায় মিশন প্রতিষ্ঠার পর থেকে স্বল্প পরিসরে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন তিনি। ধীরে ধীরে বেড়েছে এর ব্যাপ্তি। এখন শুধু স্থানীয়রাই নন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ছুটে আসেন ইফতার করতে। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃপক্ষ জানালেন, প্রতিদিন ২থেকে আড়াই লক্ষ টাকা খরচ হয় ইফতারিতে। পুরো টাকা আসে বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের দানের মাধ্যমে। আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ্ (র.) পরিবারের বংশধর মাহামুদুল হাসান দোলন বলেন,খান বাহাদুরের জীবদ্দশায় ১৯৩৫ সালে এখানে ইফতার চালু হয়। সেই বছরই তিনি নলতায় প্রতিষ্ঠা করেন আহছানিয়া মিশন। তবে তখন সেটা ছিল স্বল্প পরিসরে। বর্তমানে বাড়তে বাড়তে ১০ হাজার পৌঁছেছে।
নলতা কেদ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মো. এনামুল হক জানান, আমরা প্রতিবছর ১০ হাজার মানুষের ইফতারের আয়োজন করতাম এখানে ৭-৮ হাজার মানুষ একসাথে বসে ইফতার করতো বাকি ইফতার প্রতিদিন সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন মসজিদে পাঠানো হতো। কিন্তু করোনার কারনে আমাদের ইফতার মাহফিল ২ বছর বন্ধ ছিলো। আল্লাহর রহমতে আবার চালু করতে পেরেছি। বর্তমানে মুসুল্লি কম হচ্ছে আশা করছি খুব তারাতাড়ি মুসল্লীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পূর্বের মতন ১০ হাজার রোজাদারের ইফতার তৈরি করবো। নলতার ইফতার মাহফিল দেশের সবচেয়ে বৃহৎ বিশ্বের ২য় তম। আমি যতটুকু জানি বাংলাদেশে এত বৃহত্তর পরিসরে আর কোথাও ইফতার মাহফিল হয় না।