বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘পুলিশ জনগণের সেবক হবে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করবে। পুলিশের কাছে মানুষ ন্যায়বিচার পাবে, মানুষের এই আত্মবিশ্বাস যেন তাদের উপর থাকে।’
রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশের উদ্যোগে দেশের ৬৫৯টি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় পৃথক সার্ভিস ডেস্ক ও পুলিশের বিভিন্ন প্রকল্পের বেঁচে যাওয়া অর্থে নির্মাণ করা ঘর গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
তিনি বলেন, যেকোনো বাহিনী ও ব্যক্তির জীবনে সফলতা তখনই আসে, যখন তার উপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে মানুষের আস্থা, বিশ্বাস ও ভালোবাসা অর্জন করতে পারে। পুলিশ যাতে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারে, আমরা এটাই চাই।
থানাগুলোতে নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় স্থাপিত পুলিশের সার্ভিস ডেস্কের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের নারী সমাজ, শিশু ও বয়স্কদের বিরুদ্ধে অন্যায় হলে বলতে পারে না। নারীদের ব্যাপারে তা আরও বেশি। তাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ করে দেয়ার জন্য পুলিশকে তিনি ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সমাজটাকে উন্নত করতে চাই। যারা পিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর, তৃণমূল পর্যায়ে পড়ে থাকে বা যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করেন, শত নির্যাতনের মুখেও প্রতিকার চাইতে পারে না, সেই মানুষগুলোর মধ্যে আস্থা-বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে চাই। নাগরিক অধিকার রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করতে চাই, তাদের সহযোগিতা করতে চাই। সেবাপ্রার্থীদের আইনগত সহায়তা নিশ্চিত করতে পুলিশের প্রতি অনুরোধ রইল।
তিনি আরও বলেন, শুধু রাজধানী কিংবা শহরভিত্তিক নয়, সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়া পায়, সেই লক্ষ্যেই সরকার কাজ করছে। গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প তার উদাহরণ। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন ও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রথমবার সরকারে এসে কোন ধরনের কুঁড়েঘর থাকবে না বলে ঘোষণা করেছিলাম। আমরা একটা করে হলেও টিনের ঘর দেব। দ্বিতীয়বার সরকারে এসে সেমিপাকা ঘর দিচ্ছি। এমনকি উন্নতমানের জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মানুষের থাকার ব্যবস্থা হলে উন্নয়নের সুফল সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। উন্নয়নটা গতিশীল হবে। মানুষের যখন থাকার জায়গা হয়, তখন তার কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়। এতে মানুষের ভেতরে আত্মবিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়। সেটা তাকে সুযোগ করে দেয় নিজের পায়ে দাঁড়ানোর, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করার। ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়নে ব্রডব্যান্ড সেবা পৌঁছে যাচ্ছে। কাজেই এখন যোগাযোগের সুযোগ অনেক বেশি। তাই যেকোনো জায়গায় বসে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা জানা বা কোনো নির্যাতন করলে তার প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ আছে।
পুলিশের ৯৯৯ সেবার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দুর্গত এলাকায় কেউ পথ হারিয়ে ফেললে, তাকেও পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসছে। করোনাকালে পুলিশের কর্মকান্ডের ব্যাপক প্রশংসাও করেন তিনি। যারা পুলিশের হেল্প ডেস্কে কাজ করেন, তাদের শুধু দেশে নয়, বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেব। তারা যেন বিদেশ থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে পারেন। কারণ এটাতে মানবিক দিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় আছে। সেই বিষয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়োজন আছে। বিদেশ থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্তরা প্রয়োজনে অন্যদের প্রশিক্ষিত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পুলিশ একটি সুপ্রশিক্ষিত বাহিনী। যে বাহিনী মানুষের পাশে থাকবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করবে। সেটাই আমরা চাই। সেইভাবে আমরা গড়ে তুলব পুলিশ বাহিনীকে।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশ সদস্যদের বাংলা নববর্ষ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের পাশে থাকবেন। জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য যত রকমের সুযোগ সুবিধা দরকার, সেটা করেছি। বিশেষায়িত বাহিনী গড়ে তুলছি। এর মাধ্যমে সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, প্রতিটি থানায় স্থাপিত সার্ভিস ডেস্কের কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে জেলা, রেঞ্জ ও পুলিশ সদর দপ্তর পর্যায়ক্রমে মনিটরিং করবে।
মন্ত্রী বলেন, ধর্ষণ, নির্যাতন অথবা অপরাধের শিকার নারীরা নিঃসংকোচে দেশের প্রতিটি থানায় স্থাপিত নতুন সার্ভিস ডেস্কে কর্মরত নারী পুলিশকে ঘটনা সম্পর্কে অবহিত করতে পারবেন। যা ঘটনার রহস্য উন্মোচনে সহায়ক হবে।
তিনি বলেন, মুজিববর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ পুলিশ দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী সার্ভিস ডেস্ক চালুর মাধ্যমে দেশের জনগণের কল্যাণের জন্য আরেকটি মহতী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। পুলিশ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে সার্ভিস ডেস্ক স্থাপন সম্পন্ন করেছে। ডেস্ক পরিচালনার জন্য একজন সাব-ইন্সপেক্টরের (উপ-পরিদর্শক) নেতৃত্বে প্রশিক্ষিত নারী পুলিশ সদস্যদের পদায়ন করা হয়েছে। ডেস্ক কর্মকর্তা থানায় আসা নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সমস্যা মনোযোগ সহকারে শুনে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন।
অনুষ্ঠানে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ডক্টর বেনজীর আহমেদ বলেন, জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে গৃহহীন পরিবারের জন্য ৪০০টি ঘর নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ পুলিশ। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ৫২০টি ঘর নির্মাণের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এ ৪০০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
ডক্টর বেনজীর আহমেদ বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে কল্যাণকর ও মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ তার প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা জানাতে সক্ষম হবে। বঙ্গবন্ধুর দর্শনে উজ্জীবিত হয়ে মুজিববর্ষে দেশের প্রতিটি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য আলাদা ডেস্ক স্থাপন করা হয়েছে। এই আলাদা ডেস্কে নারী পুলিশ সদস্যরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) এই দৃঢ় প্রত্যয় ও উদ্যোগ জাতির পিতার সূচিত গৃহায়ন কর্মসূচিরই আধুনিক ও সময়োপযোগী এক পদক্ষেপ। আপনার (প্রধানমন্ত্রী) এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাংলাদেশ পুলিশ মুজিববর্ষ উপলক্ষে আপনার নির্দেশনায় এই গৃহ নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করে।
এ সময় আইজিপি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনার প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ সফলতার গল্প গাঁথা নির্মাণ করে যাচ্ছে। দেশ একদিকে ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে যাচ্ছে, অন্যদিকে উন্নয়নের মূলধারায় সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে উন্নয়নের বিস্ময় হিসেবে বিশ্ব পরিমন্ডলে পরিচিতি লাভ করেছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, ও ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা।