বিডি২৪ভিইজ ডেস্ক : বাংলাদেশ কোন সামরিক জোটে যোগ দেবে না। তবে আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি বাংলাদেশ শ্রদ্ধাশীল থাকবে। সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে চায়। এমন অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি ডকুমেন্ট তৈরি করছে।
ভূ-রাজনৈতিক এবং ভূ-অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ এই ডকুমেন্ট তৈরি করছে। পলিসি ডকুমেন্টে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার ওপর তাগিদ দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে কোন সামরিক জোটে যোগ না দেয়ার বিষয়টি জোরালোভাবে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া এই অঞ্চলের দেশগুলোর অন্তর্ভুক্তির প্রতি জোর দিতে চায় ঢাকা।
ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে কত বড় সেটি ভিন্ন ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছে একাধিক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি প্রকাশিত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী, প্রশান্ত মহাসাগরের মার্কিন উপকূল থেকে শুরু করে গোটা ভারত মহাসাগর এর অন্তর্ভুক্ত।
২০১৭ সালে অস্ট্রেলিয়া প্রকাশিত ফরেন পলিসি হোয়াইট পেপারে বলা হয়েছে, পূর্ব ভারত মহাসাগর থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত। আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের স্ট্র্যাটেজি অনুযায়ী আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল থেকে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত। এখানে একটি জিনিস পরিষ্কার ভৌগোলিকভাবে প্রতিটি দেশ বা অঞ্চলের ইন্দো-প্যাসিফিক মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে।
তবে রাজনৈতিকভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন আছে যার মধ্যে চারটি মূল্যবোধভিত্তিক উপাদান আছে। সেগুলো হচ্ছে, প্রতিটি দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতাকে সম্মান, শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বন্দ্ব নিরসন, স্বাধীন ও উন্মুক্ত বাণিজ্য এবং আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধা।
এই ভিশন অর্জনের জন্য আলাদা আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ কিছু দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি বা কৌশলপত্র প্রণয়ন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে পাঁচটি বৃহৎ উপাদান আছে। আবার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কৌশলপত্রে সাতটি বৃহৎ উপাদান আছে। ইন্দো-প্যাসিফিকে যোগ দেয়া বা যুক্ত হওয়ার জন্য কোন চুক্তিপত্র বাংলাদেশকে স্বাক্ষর করতে হবে না। ভৌগোলিকভাবে বাংলাদেশ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে অবস্থান করছে এবং সে জন্য এখানে যুক্ত হওয়ার কোন সুযোগ নেই।
আবার রাজনৈতিকভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশনের চারটি উপাদানের প্রতিটি বাংলাদেশ সমর্থন করে। অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলে ভিশনেও যুক্ত হওয়া যায় না; বরং ভিশনকে সমর্থন করা বা একমত পোষণ করা যায়। অন্যদিকে, যে কয়টি দেশ বা জোট ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি ঘোষণা করেছে, সেটি তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ অর্জনের জন্য করেছে। সেখানেও বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই। সে জন্য বাংলাদেশ তার নিজস্ব পলিসি ডকুমেন্ট তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে।
২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লেখা এক চিঠিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন যে, ‘সবার জন্য সমৃদ্ধি বয়ে আনবে এমন স্বাধীন, উন্মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক ভিশন বিষয়ে বাংলাদেশ একমত পোষণ করে।’
যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশ ইতোমধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করেছে। আবার কিছু দেশ ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি ডকুমেন্ট তৈরি করেছে। বাংলাদেশও এ বিষয়ে পলিসি ডকুমেন্ট তৈরি করতে চায়।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ইন্দো-প্যাসিফিক চাই। অন্তর্ভুক্তিমূলক বলতে আমরা বোঝাতে চাইছি, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে কোনও ধরনের দ্বন্দ্ব থাকবে না এবং এখানে যেন কাউকে বাদ না দেয়া হয়।’ তিনি বলেন, ‘এখানে যদি সামরিক কোনও জোটের বিষয় থাকে, তবে সেটি আমরা পরিহার করব। তবে অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে আমরা সম্পূর্ণভাবে একমত পোষণ করি।’ পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এখানকার অনেক দেশ তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি ঘোষণা করেছে। আমাদের যে পলিসি তৈরি করা হয়েছে, সেটি অনুমোদনের জন্য দেয়া হবে। এটি অনুমোদন হয়ে গেলে শীঘ্রই সেটি ঘোষণা করা হবে।’