পাবনা প্রতিনিধি : ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। ভারতে অনেক ধর্মের মানুষ বাস করে। বাংলাদেশেও কয়েকটি ধর্মের মানুষ বাস করে। ভারতের প্রতিবেশী দেশ গুলোর মধ্যে বাংলাদেশ নিকটতম প্রতিবেশী। এ দুটি দেশের মধ্যে গভীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান। চাটমোহর সম্প্রীতির শহর। এখানে বহু বছর ধরে হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ সম্প্রীতির সাথে বসবাস করে আসছে। একসাথে ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে। এটি একটি অনন্য নজির।
বুধবার দুপুরে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলচলন ইউনিয়নের বোঁথর গ্রামে চড়ক পূজা ও মেলা উপলক্ষে আয়েজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন ভারতীয় রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী হাই কমিশনার সঞ্জিব কুমার ভাট্টি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের শুরুতে পূজা ও মেলা উদযাপন কমিটি তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে উত্তরীয় পরিয়ে দেয়া হয়। শ্রী শ্রী মহাদেব মন্দিরের সভাপতি বিরেন্দ্র নাথ দাসের সভাপতিত্বে এবং রাজীব কুমার বিশ^াসের সঞ্চালনায় এ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, চাটমোহর পৌরসভার মেয়র সাখাওয়াত হোসেন সাখো, চাটমোহর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম, চাটমোহর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম নজরুল ইসলাম, চাটমোহর প্রেসক্লাবের সভাপতি রকিবুর রহমান টুকুন, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অশোক চক্রবর্ত্তী, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর দত্ত চৈতন্য, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম প্রমুখ।
এ সময় চাটমোহর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ইছাহক আলী মানিক, চাটমোহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাসান বাসীর সহ পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ ও ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, কয়েক শত বছর ধরে চাটমোহরের বোঁথর গ্রামে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে উপমহাদেশের ঐতিহ্যবাহী চড়ক পূজা ও মেলা। করোনার কারণে গত দুই বছর স্বল্প পরিসরের আয়োজন ছিল ফিকে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে এবার উৎসবমুখর পরিবেশে ও বর্ণিল আয়োজনে শুরু হয়েছে চড়ক পূজা ও মেলা। চড়ক পূজা উপলক্ষে এ বছরও গত ৭ এপ্রিল মেলার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন জেলা ও ওপার বাংলা থেকে পুন্যার্থী ভক্তরা অংশ নিয়েছেন পূজা ও মেলায়।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) পুকুর থেকে চড়ক গাছ উত্তোলন করে মন্দির প্রাঙ্গনে স্থাপন করা হয়। সকাল থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে আগত হাজার হাজার ভক্ত চড়ক গাছে দুধ, মধু, তেল দিয়ে অর্ঘ্য নিবেদন করেন। এ পূজা উপলক্ষে মহাদেব মন্দির প্রাঙ্গনে তিনদিনব্যাপী মেলা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) হবে বিসর্জন। সাতদিন পর উল্টো চড়ক ঘুড়ানো ও পূজার মধ্য দিয়ে শেষ হবে চড়ক পূজার আনুষ্ঠানিকতা।
বোঁথড় মহাদেব মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিংকর সাহা জানান, করোনার কারণে এক বছর বন্ধ ছিল পূজা ও মেলা। এক বছর শুধু পূজার আয়োজন করা হয়েছে। এ বছর পূজা ও মেলা পুরোনা রুপে ফিরে পেয়েছে। তিনি জানান, বাঙালীর এই সার্বজনীন উৎসব যথাযথভাবে আয়োজন করা হচ্ছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈকত ইসলাম বলেন, চড়ক পূজা ও মেলা সুষ্ঠু, শান্তিপূর্নভাবে আয়োজনে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সবার সহযোগিতায় উৎসবমুখর পরিবেশে ও বর্ণিলভাবে এবারের চড়ক পূজা ও মেলা সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।