বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক সাধারণ সভা বসছে আগামী ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল। সভায় বাংলাদেশ আরও ৫০ কোটি ডলার ঋণ চাইবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। বাজেট সহায়তার কাজে এ ঋণ ব্যয় করবে বাংলাদেশ।
সাধারণত বছরে দুবার এপ্রিল ও অক্টোবরে বিশ্বব্যাংক-আইএমএফের বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু করোনার কারণে গত দুই বছর এ সভা ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হয়। এবার সরাসরি বৈঠক বসছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল এ বৈঠক বসবে।
স্বাস্থ্যগত কারণে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবারের বসন্তকালীন বৈঠকে যোগদান করছেন না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ফজলে কবিরের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চপর্যাযের প্রতিনিধিদল যোগ দিচ্ছে এতে।
ইআরডি ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের কাছে ঋণসহায়তা চাওয়াই হবে বাংলাদেশ সরকারের অন্যতম আলোচ্য। এ ছাড়া অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারের নানামুখী পদক্ষেপ ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি তুলে ধরা হবে। গরিব দেশগুলোকে সহায়তা করার জন্য অতীতের ধারাবাহিকতায় ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি বা আইডিএ-২০ প্যাকেজ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্বব্যাংক।
করোনার কারণে নিম্ন আয়ের যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় নতুন করে এটি নেওয়া হয়, যা গত ডিসেম্বরে ঘোষণা করে ওয়াশিংটনভিত্তিক দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক।
তিন বছর মেয়াদি (২০২৩-২৫) এ প্যাকেজের আওতায় গরিব দেশগুলোর জন্য ৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যয় করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ এ তহবিল থেকে নমনীয় সুদে ঋণসুবিধা পাবে। এর আগে আইডিএ প্যাকেজ-১৯ বাস্তবায়ন করে বিশ্বব্যাংক, যার মেয়াদ শেষ হয় গত বছরের নভেম্বরে। এরপর আইডিএ-২০ নামে নতুন প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়।
বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে নিম্ন আয়ের দেশগুলো সহজ শর্তে ঋণ পায়। বাংলাদেশ আইডিএ তহবিলের সবচেয়ে বড় ঋণগ্রহীতা। আইডিএ থেকে এত দিন যে ঋণ বাংলাদেশ নিয়েছে, তা বেশ সহজ শর্তের। ৩৮ বছরে ঋণ পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে ছয় বছর গ্রেস পিরিয়ড। আর ঋণের সুদের হার দশমিক ৭৫ শতাংশ।
আইডিএ প্যাকেজের বাইরেও সহজশর্তে ঋণ পায় বাংলাদেশ। তবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ হলে কম সুদে আর ঋণ পাবে না। তখন বেশি সুদে ঋণ নিতে হবে।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলেছেন, আইডিএ-২০ প্যাকেজ থেকে বাংলাদেশকে ঋণ দেবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। কত দেবে সে বিষয়ে এখনও কিছু বলেনি সংস্থাটি। এই তহবিল থেকে ঋণ যাতে দ্রুত অনুমোদন দেয়া হয়, সে বিষয়ে বসন্তকালীন বৈঠকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হবে। জানা গেছে, আগের প্যাকেজের আওতায় বাংলাদেশ সহায়তা পেয়েছিল ৪ দশমিক ২ বিলিয়ন (৪২০ কোটি ডলার) বা ৩৫ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
প্রকল্পভিত্তিক ঋণ পেলে তা শুধু সংশ্লিষ্ট খাতে ব্যবহার করতে হয়। আর বাজেট সহায়তা বাবদ ঋণ পেলে তা খরচ করা যায় সব খাতেই। এ জন্য সরকার সব সময় উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে বাজেট সহায়তাকে প্রাধান্য দেয়।
করোনা প্রতিরোধে বিশ্বব্যাংক সম্প্রতি বাংলাদেশকে ২৫ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে। আরও ২৫ কোটি ডলার আগামী অর্থবছরে দেবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ইআরডির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইডিএ প্যাকেজ থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ঋণ পাওয়ার কারণ বাংলাদেশের ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা বেশি। ফলে আইডিএর নতুন প্যাকেজ থেকে আরও বেশি ঋণ প্রত্যাশা করে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে বাংলাদেশকে ২২০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। চলতি অর্থবছরে ১৪০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।