বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কয়েক বছর ধরে লিচুর মুকুল থেকে মধু চাষের কারণে দিনাজপুর ‘মধু জেলা’ হিসেবে পরিচিতি পেতে শুরু করেছে। জেলায় লিচুর মৌসুমে মধু চাষের জন্য স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন মৌচাষিরা। তাঁরা বাগানে গাছের গোড়ায় স্থাপন করেন মৌবাক্স। গাছে গুটি আসার আগপর্যন্ত চলে মধু আহরণ।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, এবার শীতের শেষে বৃষ্টি হওয়ায় গাছে মুকুলের আধিক্য দেখা গেছে। মুকুল থেকে মধু সংগ্রহে বেড়েছে মৌমাছির গুনগুন। ব্যাপকহারে মৌ চাষের ফলে একদিকে যেমন
মধুর উৎপাদন বাড়ছে, তেমনি মৌমাছি লিচু ফুলে পরাগায়ন ঘটানোর ফলে দেখা দিয়েছে ফলন বৃদ্ধির সম্ভাবনা। চলতি মৌসুমে জেলায় ৪৫ কোটি টাকার মধু আহরণের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতি। এ সমিতির হিসাব অনুযায়ী, এবার দিনাজপুরের লিচুবাগানগুলোতে স্থানীয় মৌচাষিসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক খামারি এক লাখ মৌবাক্স স্থাপন করেছেন। প্রতিটি মৌবাক্স থেকে সর্বনিম্ন ১৫ কেজি মধু আহরণ করা যায়। সেই হিসাবে, দেড় হাজার টন মধু আহরিত হবে, যার আনুমানিক বাজারমূল্য প্রায় ৪৫ কোটি টাকা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ৫ হাজার ৪৮১ হেক্টর জমিতে লিচুবাগান রয়েছে ৫ হাজার ৪১৮টি। আর বসতবাড়ির উঠানসহ বাগানগুলোতে লিচুগাছ রয়েছে প্রায় সাত লাখ। চলতি মৌসুমে এসব বাগান হতে মৌচাষিদের মধু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৩ টন। গত অর্থবছরে এসব বাগান থেকে মধু উৎপাদিত হয়েছে ১৪ টন। তবে লিচুর মৌসুমে বাইরে থেকে আসা মৌচাষিদের হিসাব কৃষি বিভাগের কাছে নেই। উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতি এসব মৌচাষিদের ধরেই হিসাব করে থাকে।
সম্প্রতি বিরল উপজেলা, সদর উপজেলা ও চিরিরবন্দর উপজেলায় ঘুরে দেখা যায়, লিচুবাগানগুলোতে বসানো হয়েছে শত শত মৌবাক্স। বাক্স ঘিরে মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। বাগানের একপাশে তাঁবু গেড়ে অস্থায়ীভাবে বাস করছেন মৌচাষিরা। অধিকাংশ মৌচাষি এসেছেন সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, সাতক্ষীরা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে। কয়েক বছর ধরে বাইরের জেলা থেকে আসা মৌচাষিদের মধু সংগ্রহ করা দেখে আগ্রহ বেড়েছে স্থানীয় তরুণদের।
দিনাজপুর বিসিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুম শুরুর আগে স্থানীয় ১৫০ জন মৌচাষিকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিসিক। সেই সঙ্গে প্রত্যেককে একটি ডিজিটাল মৌবাক্স দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্য থেকে মধু উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন স্থানীয় ৪৫ যুবক।
সম্প্রতি বিরল উপজেলার খোজাপুর গ্রামে চাক থেকে মধু সংগ্রহ করতে দেখা যায় মো. আলামিন নামের এক মৌচাষিকে। তিনি বলেন, সপ্তাহখানেক আগে সিরাজগঞ্জ থেকে ১০ জনের একটি দল ৪০০ বাক্স নিয়ে এসেছেন। ইতিমধ্যে তাঁরা ৪৫ মণ মধু সংগ্রহ করেছেন। শেষ ভাগে না এসে আগে
এলে দ্বিগুণ মধু আহরণ করা যেত বলে জানান মো. আলামিন। ২০০৭ সাল থেকে মৌসুমে এ অঞ্চলে প্রতিবছর মধু সংগ্রহে আসেন সিরাজগঞ্জের সলঙ্গা উপজেলার আবদুর রশিদ। তিনি উত্তরবঙ্গ মৌচাষি সমিতির সভাপতি। এবার মৌসুমের শুরুতে বিরলের মাধববাটিতে কয়েকটি বাগানে ১ হাজার ৪৫০টি মৌবাক্স স্থাপন করেছেন আবদুর রশিদ। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে ১২ টন মধু আহরিত হয়েছে। এখনো দুই সপ্তাহের বেশি সময় বাকি। এবার লিচুর মুকুল অনেক বেশি। তাই আগে যেখানে সপ্তাহে একবার বাক্স থেকে মধু আহরণ করা হতো, এবার সেখানে প্রতি চার দিনের মাথায় মধু সংগ্রহ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৌমাছি পালনে অধিক গুরুত্ব দিয়েছে দিনাজপুর বিসিক। বিসিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ৪৫ জন খামারির হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ৬০ টন মধু উৎপাদিত হয়েছিল। এবার ৭৬ টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫৩ টন মধু উৎপাদিত হয়েছে। এ কারণে এবার লক্ষ্যমাত্রার দ্বিগুণ মধু উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা।
দিনাজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মনজুরুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরে দিনাজপুরে ব্যাপকভাবে মৌ চাষ শুরু হয়েছে। এ কারণে লিচুর উৎপাদনও বাড়ছে। ইতিমধ্যে খামারিদের সঙ্গে আলোচনা ও পরামর্শ করা হয়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে মধু সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে মৌচাষিদের।