বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্প বদলে দেবে মুন্সীগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। যানজট কমাতে ফরিদপুরের ভাঙ্গার আদলে নির্মাণ করা হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি মোড়। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়ন হলে রাজধানী ঢাকার ওপর যেমনি চাপ কমে যাবে, তেমনি যাতায়াতে সময় কমবে অর্ধেকের বেশি আর যানবাহনের গতি বাড়বে প্রায় কয়েকগুণ।
প্রকল্পটির পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই সড়ক ভ্রমণে সময় হ্রাস পাবে ৬২ দশমিক ৮৯ শতাংশ। আর যানবাহনগুলোর গতি বেড়ে যাবে ৪ দশমিক ৪৫ গুণ।
রাজধানী ঢাকার সঙ্গে মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের যোগাযোগের প্রধান এই সড়কের গুরুত্ব দিন দিন বেড়েই চলছে। সড়কটি দিয়ে মুন্সীগঞ্জের কিছু শিল্পঘন এলাকায় শিল্পের কাঁচামাল পরিবহনসহ বিভিন্ন কারণে সড়কটি বেশ ব্যস্ত ও গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর বর্তমান সরু সড়কের গড় প্রশস্ততা মাত্র সাড়ে ৫ মিটার হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে নিয়মিত মুক্তারপুরে সিমেন্ট কারখানা, হিমাগারসহ ভারি ভারি শিল্প কারখানায় ২৪ থেকে ৫০ মেট্রিক টন ওজনের যান চলাচল করে। কিন্তু আঁকাবাঁকা সড়কে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। আর দিনভর যানজট তো লেগেই থাকে। এঅবস্থায় পুরো সড়কের চেহারা বদলে দিতে নেয়া হয়েছে আধুনিকায়ন প্রকল্প। ১০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কে ২ দশমিক ৮০৫ কিলোমিটার র্যামসহ দোতলা হবে ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার। পঞ্চবটি মোড় হবে ভাঙ্গার আদলে। পঞ্চবটিকে কেন্দ্র করে সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত হয়ে ৩১০ মিটার করে ফতুল্লা ও নারায়ণগঞ্জ দুই দিকে প্রসারিত হবে। আর শীতলক্ষ্যা-৩ সেতু পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পথ দোতলা হবে দুই লেনে। সঙ্গে পুরনো সড়কটি উন্নীত হবে দুই লেনে। আরেকটি গোলচত্বর হবে চর সৈয়দপুরের শীতলক্ষ্যা-৩ পয়েন্টে। এই গোল চত্বর থেকে মুক্তারপুর সেতু পর্যন্ত ৩ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার সড়ক হবে সরাসরি চার লেন। পাঁচটি ওজন স্কেল আর টোলপ্লাজা থাকবে চারটি।
প্রকল্পটির কাজ শেষ হলে রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ কমে যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এই অঞ্চলের অনেকেই চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য কিংবা পড়াশোনার জন্য রাজধানী ঢাকায় বসবাস করছেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে তারা নিজ এলাকায় বসবাস করেই রাজধানীতে অফিস করতে পারবেন। স্থানীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখা ছাড়াও গ্রামগুলোর গুরুত্ব বেড়ে যাবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সড়ক ব্যবহারকারীরা স্বাচ্ছন্দ্যে যেমন ঝামেলাহীন গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন আবার সময় কমে যাওয়ায় জ্বালানি অপচয়রোধ হবে। শিল্প-কারখানাগুলোর কাঁচামাল ও উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত সহজ হবে এবং ব্যয় কমে যাবে। মুন্সীগঞ্জের আমিনুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এই সড়কে আর যানজট থাকবে না।
সূত্র আরো জানায়, রাজধানী ঢাকাকে ঘিরে এই অঞ্চলের শ্রমজীবি মানুষের যে স্রোত রয়েছে। তারা ঢাকায় কাজ শেষে মানবেতর জীবন যাপন করেন। বর্তমানে নেয়া প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এখানকার মানুষরা নিজ এলাকায় থেকে কাজ করতে পারবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতিতে এখানে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থায়ও শুধু বৈপ্লবিক পরিবর্তনই আসবে না। যাতায়াতে সময় কমবে অর্ধেকের বেশি আর যানবাহনের গতি বাড়বে প্রায় ৫ গুণ। প্রকল্প গবেষণায় এই বিষয়টিই উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমাদ মেরী সিআইপি ইনকিলাবকে বলেন, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়নের কাজ শেষ হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হবে। সড়কটি প্রশস্ত ও দোতলাকরণ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে বিভিন্ন ফ্যাক্টরীতে উৎপাদিত পণ্য কাভার্ডভ্যান, ট্রাক, লরি করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে কোন ঝামেলা ছাড়াই দ্রুত পৌঁছে যাবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আধুনিকায়নে সড়কটি দৈর্ঘ্য হবে ১০ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার। এরমধ্যে দোতলা সড়ক হবে ২ দশমিক ৮০৫ কিলোমিটার র্যাম্পসহ ৯ দশমিক ০৬ কিলোমিটার। যানজট নিরসনে পঞ্চবটি মোড় থেকে ফতুল্লার দিকে ও নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ার দিকে ৩১০ মিটার করে ছয় লেন সড়ক হবে। পঞ্চবটি থেকে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু পর্যন্ত ছয় কিলোমিটার সড়ক হবে দোতলা। পঞ্চবটি হতে কাশিপুর পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার নিচ তলায় দুই লেন এবং দ্বিতীয় তলায় দুই লেন সড়ক থাকবে। আর কাশিপুর থেকে পাশের লো-লেনের ওপর দিয়ে ২ দশমিক ৭৬ কিলোমিটার দ্বিতল সড়ক পৌঁছবে চর সৈয়দপুরের শীতলক্ষ্যা-৩ সেতুর গোল চত্বর পর্যন্ত। এই অংশে পুরনো সড়কটিও উন্নীত হবে দুই লেনে। তাই পুরো সড়ক জুড়েই অন্তত চার লেন সুবিধা মিলবে।
প্রকল্পটির পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, ২ হাজার ২শ’ ৪২ কোটি ৭৭ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ব্যয়ে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান স্যানডন ও সিএসআই তিন বছরের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শেষ করবে। গেল ২৯ মার্চ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আগামী তিন মাসের মধ্যেই কাজ শুরুর কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মুন্সীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সঙ্গে সমন্বয়সহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। আর চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটির কাজ শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক প্রশস্তকরণে জমি প্রয়োজন ৫৬ দশমিক ৭৪৭৫ একর। তবে এরমধ্যে অধিগ্রহণ করতে হবে ৩৭ দশমিক ১১ একর। যার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলায় ২ দশমিক ৯৭ একর এবং নারায়ণগঞ্জ জেলায় ৩৪ দশমিক ১৪ একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়াধীন। এছাড়া সরকারী খাস সম্পত্তি রয়েছে ১৪ দশমকি ৮৫২৫ একর।
পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কের আধুনিকায়ন হলেও টোল দিতে হবে দোতলা সড়ক ব্যবহারে। নিচতলা সড়ক ব্যবহারে কোন টোল দিতে হবে না। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কে এখন প্রতিদিন যান চলাচল করছে ১৭ হাজার ৯১০টি। ট্রাফিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালে এই সংখ্যা হবে ২৩ হাজার ৯২০, এই সংখ্যা ২০২৫ সালে হবে ২৭ হাজার, ২০৩৩ সালে এই সড়কে চলবে ৩৯ হাজার যান আর ২০৪৩ সালে এই সড়কের যানবাহনের সংখ্যা হবে ৬৩ হাজার ৫৮০।