বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী মঙ্গলবার ৩৩ হাজার বাস্তুহারা, ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষকে দেওয়া হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘরসহ বাড়ি। পবিত্র ঈদুল ফিতরের আগে গৃহহীন মানুষকে ঈদের উপহার দেবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। যারা ঘর পাচ্ছেন, তাদের মাঝে যেন ঈদের আগেই ঈদ আনন্দ বইছে। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ হতে এর আগেও প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ১ লাখ ১৭ হাজার ৩২৯টি বাড়ি দেওয়া হয়েছে। আগের ঘরগুলোর তুলনায় তৃতীয় ধাপের এসব বাড়ির কাঠামোতে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বাজেট এবং নির্মাণ খরচও। এবারের ঘর হস্তান্তর শেষে মোট দেড় লাখ গৃহহীন পরিবার সরকারের উপহারের ঘরের মালিক হবেন। পর্যায়ক্রমে মোট ৯ লাখ গৃহহীন পরিবারকে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পের ঘর উপহার দেওয়া হবে। জানা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে একটি পরিবারও গৃহহীন ও ভূমিহীন থাকবে না- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন ঘোষণার পর থেকে যাদের নিজস্ব জমি নেই, ঘর নেই তাদের জমি ও ঘর দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ অধীনে এই বাড়ি নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে সরকারি খাস জায়গা কিংবা দখল হওয়া জায়গা দখলমুক্ত করে। ইতোমধ্যে দেশের আট বিভাগে বিপুল পরিমাণ বেদখল হওয়া সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত এই জমির মূল্য প্রায় ২ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। কয়েকটি আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে দেখা গেছে, ঘরগুলো বেশ মজবুতভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে। ঘরসহ বাড়ি যাদের দেওয়া হবে, আগেই তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। এতে করে ঘরগুলো সঠিক তদারকির সুযোগ পাচ্ছেন ভূমিহীনরা। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় ঢাকার উপকণ্ঠে সাভার উপজেলায় আশুলিয়া থানার শিমুলিয়া ইউনিয়নের গোহাইলবাড়ীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘর পাওয়া মারুফা খাতুনের। আগামী মঙ্গলবার ঘর বুঝে পাবেন তিনি। তার চোখে মুখে আনন্দের শেষ নেই। মারুফা বললেন, স্বামী কখনো ভালো রাখেনি। তার দ্বিতীয় বউ ছিল। মাঝখানে আমি চরম অসুস্থ ছিলাম।
মানুষের কাছে ভিক্ষা করে নিজের চিকিৎসা করিয়েছি। মেয়ের জামাইরাও এগিয়ে আসেনি। কারণ, তাদের টাকা দিতে পারিনি। ঢাকার শেওড়াপাড়া, গাজীচটে ভবঘুরের মতো জীবন যাপন করছি। সাভার উপজেলা চেয়ারম্যানের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আবেদনপত্র জমা দিলাম। আবেদনপত্র গৃহীত হলো। আমার নামে ঘর বরাদ্দ হলো। নিঃস্ব আমি, নিজের ঘরে থাকব, কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি। প্রধানমন্ত্রী আমাকে বাড়ি ও দলিল দেবেন এতে খুব আনন্দ লাগছে। যেন ঈদের আগেই আরেকটা ঈদ।’ সাভারের ৬৫ বছর বয়সী খাদিজা বেগম জানালেন, এ বয়সে এসে সন্তানরা নিজ নিজ জীবন নিয়ে ব্যস্ত। স্বামীর বয়স পঁচাত্তর পেরিয়েছে। চোখে দেখে না ঠিকমতো। কেউ কাজও দিতে চায় না। খাদিজা বলেন, ‘এখন আমার মা শেখ হাসিনা আমাদের দিকে হাত বাড়াইছে। কাল যখন রাইতে ফোনে বলছে, আমাগোরে ঘর দিবো সাথে সাথে চার রাকাত নামাজ পড়ছি আমার প্রধানমন্ত্রী, আমগর মায়ের জন্য। থাকার জন্য আর লাত্থি-উষ্ঠা খাইতে হইব না। এমন সুন্দর ঘর!’ খাদিজার পাশে তখন দাঁড়িয়ে তার স্বামী। কথা বলতে বলতে তার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে থাকে। বললেন, এখন ঈদের আনন্দ লাগছে। বেদে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া এই জনগোষ্ঠীকে মূল ধারায় নিয়ে আসতে এই প্রথম উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে বেদে সম্প্রদায়ের জন্য ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার জগন্নাথপুর গ্রামের মাজদিয়া বাঁওড় এলাকায়। প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এমএম ইমরুল কায়েস রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আগামী ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাস্তুহারা, ভূমিহীন, গৃহহীন ৩২ হাজার ৯০৪টি পরিবারকে দুই শতক জমিসহ ঘরের দলিল হস্তান্তর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে সিরাজগঞ্জ সদর, বরগুনা সদর, চট্টগ্রামের আনোয়ারা, ফরিদপুরের নগরকান্দায় সংযুক্ত থাকবেন।’